সুবেদারের দায়িত্ব নিয়ে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র মুহম্মদ আজম শাহ বাংলায় এসেছিলো ৮ই জুন ১৬৭৮ সালে। শিতা আওরঙ্গজেব তার উপর ন্যস্ত করেছিলো তিন তিনটি দায়িত্ব। এক, মেহনতী বাংলার রায়তদের শোষণ রোধের প্রয়াস, দুই, স্বীয় স্বভর শায়েস্তা খান প্রশাসনের দুর্নীতি ও করের অর্থ তসরুণের অভিযোগের তদন্ত এবং তিন, সুদূরের চীন সীমান্ত পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্য প্রসারিত করার প্রচেষ্টা। মাত্র পনেরো মাসের সফল প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে দাক্ষিণাত্যের বিদ্রোহ দমন করার সমন পেয়ে সে ঢাকা ছেড়ে চলে যায় অক্টোবর ১৬৭৯ সালে। সেই সময়কালের প্রেক্ষাপটে সতেরোশ' শতাব্দীর শাসিত বাঙালি সমাজের ক্রমবর্ধমান আত্মচেতনা, বাঙালি কবি ও শিল্পীর আত্মপরিচয় এবং সংগ্রামকে বিধৃত করছে এ উপন্যাস। উপন্যাসের বিবিধ চরিত্র কবি সৈয়দ জাফর, দেবদাসী নর্তকী রশমী, মসলিন শিল্পী মা আমেনা বেগম, পর্তুগিজ কুঠিয়ালের ঘরণী বাংলার মেয়ে মারিয়া, মসজিদের আত্মসন্ধানী ইমাম শামসুদ্দীন, জিঞ্জিরার মন্দিরের সংসারত্যাগী পূজারী, বাংলার চিরায়ত সমাজ জীবনের স্বাক্ষর ও প্রতীক। -ফখরুজ্জামান চৌধুরী
বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বিটকয়েনের উপর সর্বপ্রথম বই। মোস্তফা তানিমের এ বইটি পড়ার পরে বিটকয়েন, ক্রিপ্টোমুদ্রা এবং ব্লকচেইন সম্পর্কে আপনি অন্যকে বোঝাতে পারবেন, প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন, নিজের জানার তেমন কিছুই বাকি থাকবে না। ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে একটি ধারণাও পেয়ে যাবেন। এমনই সম্পূর্ণ এবং সুলিখিত বই এটি। খুবই নির্ভরযোগ্য, তথ্য বহুল বই। এমন তথ্যসমৃদ্ধ বই ইংরেজি বা অন্যকোনো ভাষাতেও খুব একটা নেই। বইটিতে বিটকয়েন, ক্রিপ্টো-কারেন্সি এবং ব্লকচেইনের আদ্যোপান্ত অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় বর্ণনা করে হয়েছে। বইটি পড়ে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো যে কোনো পাঠক আত্মস্থ করতে পারবেন। এজন্যে এ বিষয়ে পূর্বজ্ঞান থাকার কোনোই দরকার নেই।
তানহার কিউট বিড়ালছানার গল্প কি তোমরা জানো? এক বৃষ্টির দিনে বিড়ালছানা ক্যাকটাসকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনে তানহা। তার আগে অবশ্য কোনো নামই ছিল না, তানহার মা নাম দিলেন ক্যাকটাস। পরিবারের একজন সদস্যই যেন হয়ে গেল সে। দিনে দিনে বড়ো হতে থাকে সে। লাল ফিতায় বাঁধা ঘণ্টি নিয়ে ক্যাকটাস টুংটাং করে ঘোরে এদিক-ওদিক। তারপর একদিন... কী হলো? সে কথাই জানতে পারবে এই গল্পটি পড়লে। রূপকথার লেখক সোফিয়ার কুকুর ক্যাপির গল্প জানলে তোমরা সত্যিই অবাক হবে। একইভাবে খুশি হবে রবিনের মিষ্টি টিয়াপাখির কাণ্ডকারখানা জেনে! তোমরা বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বিষয়ে আগ্রহী হবে জিনিয়াসের আবিষ্কার সম্পর্কে জানলে কিংবা রাতুলের মজার আইডিয়াটির খোঁজ পেলে। রকমারি বিষয়ে ভরা এই বইতে আছে ষোলটি মজার ও শিক্ষামূলক গল্প। গল্পগুলো তোমাদের প্রিয় লেখক আসিফ মেহ্দী লিখেছেন শুধু তোমাদের জন্য। দেশসেরা দুই ফান ম্যাগাজিন ‘উন্মাদ’ ও ‘রস+আলো’তে লেখার সুবাদে আসিফ মেহ্দী লাভ করেন তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা। তারপর একে একে প্রকাশিত তাঁর প্রতিটি বইয়ে ব্যঙ্গ আর হাসির সঙ্গে গভীর জীবনবোধের প্রতিফলন ঘটিয়ে তিনি শুধু পাঠকপ্রিয়তাই লাভ করেননি, তাঁর বইগুলো উঠে এসেছে বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকায়। সেগুলোর মধ্যে মায়া, বধির নিরবধি, অপ্সরা, তরু-নৃ, আড়াল অন্যতম। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পঁয়ত্রিশ। এসএসসি ও এইচএসসি দুই পরীক্ষাতেই ঢাকা বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্ট্যান্ড করেছেন আসিফ মেহ্দী। বুয়েট-এ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেছেন। ভালো ফলাফলের স্বীকৃতিস্বরূপ ছাত্রজীবনে পেয়েছেন নানাবিধ পদক ও সম্মাননা। সম্প্রতি তিনি সরকারি স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘স্ট্র্যাটেজিক ইনোভেশন ম্যানেজমেন্ট’-এর ওপর এমএসসি সম্পন্ন করেছেন; অর্জন করেছেন ডিস্টিংশনসহ ফার্স্ট ক্লাস। ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় নিজ ক্যাডারে ১ম স্থান অধিকার করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন আসিফ মেহ্দী। অতঃপর জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট আয়োজিত তিন মাসব্যাপী কঠোর পেশাগত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে লাভ করেছেন ডিজি অ্যাওয়ার্ড (মেধা তালিকায় ১ম)। তাঁর সহধর্মিনী ডা. মৌবীণা জ্যাকলিন বারি পেশায় ডাক্তার।
স্বাধীন বাংলাদেশে মানচিত্র পরিবর্তনের লগ্ন থেকেই এক দ্রুত রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মানুষ, প্রকৃতি, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির রূপান্তর। এর মঙ্গলঘট কি বাঙালি পেয়েছে? অথবা রূপান্তরের বিনষ্ট দানব এসে আমাদের সংস্কৃতি, সমাজ ও মূল্যবোধকে বিক্ষত করেছে? করেছে রুগ্ন? সেই ব্যাধির বিবিধ ইঙ্গিত প্রকাশ পেয়েছে ড. মোস্তফা সারওয়ার রচিত বিনষ্ট রূপান্তরের বিকারতত্ত্ব কাব্যগ্রন্থে। সম্পূর্ণ নতুন ধাঁচের বিষয় নিয়ে এ ধরনের কাব্য বাংলা সাহিত্যে বিরল। বিজ্ঞান- বিষয়ক চিত্রকল্পের এমন দক্ষ ব্যবহার শুধু বাংলায় নয়, পৃথিবীর অন্যান্য ভাষায়ও তেমন প্রচলিত নয়। নিরীক্ষাধর্মী নিজস্ব রীতিহীনতার রীতিতে ড. সারওয়ার উত্তর-আধুনিকতার রীতিনীতির সাথে অবৈধ অভিসার করিয়েছেন আধুনিক এমনকি প্রাক-আধুনিক ঐতিহ্যের সময়োত্তীর্ণ ধারাকে। তাঁর অনির্ধারিত গঠন বিন্যাস, অনির্দিষ্ট বস্তু সম্ভার এবং অবাধ্য সংগীতময়তা কবিতার চিরায়ত সংজ্ঞাকে অতিক্রান্ত করে এক অনাবিল আনন্দের প্রবাহ ঘটিয়েছে। কাব্যের দেহে ফুটে উঠেছে এক নবতর সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ যা উদ্বাস্ত করেছে বর্তমানের ঘুনেধরা সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধ। এ যেন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রতিফলিত জুলিয়া ক্রিসটেভার শিল্পের নতুন সংজ্ঞা।
বিন্দু বিন্দু জল- এমন তিনজন মানুষের কথায় তোলপাড় যারা দু'জন দু'জনকে ভালোবাসে। একজন অন্যজনকে ঘৃণা করে। আবার নারী চরিত্র অপর দু'জন পুরুষকে ভালোবেসে নিজের জীবনের খেই হারাতে-হারাতে নিজকে কীভাবে সামলে নেয়Ñ তারই কথা। একমাত্র মনুষ্যজীবনে বিন্দু বিন্দ জল হয়ে চোখ দিয়ে যা বের হয়ে আসে তা আসলে জলের রূপে অন্তর জালার রক্তবিন্দু। প্রত্যেক মানুষ নিজের হিসেব মিলিয়ে সুখি হতে চায়। তবে এই উপন্যাসের প্রধান দুই চরিত্র যেন জীবনের হিসাবই বোঝে না। আবেগ রোতে ভাসতে-ভাসতে কাছে আসে, আবার দূরে সরে যায়। তবু যেসব সময় যেসম মূহুর্ত তারা একত্রিতভাবে যাপন করে তা অন্তরে গোপনে সযতেœ তুলে রাখতে চায়। বিচ্ছেদ কী মিলনের চেয়ে মধুর ভাবতে চায়। এসব নিয়ে যেমন শুরু হয় বিন্দ বিন্দু জল' তেমনি এগিয়ে যায় স্রোতের মত সব উল্টে-পাল্টে দিয়ে শেষ হয় পাথর হয়ে আসো মানুষের চোখে বিন্দু বিন্দু জল হয়ে।
কবিতা এক অন্তহীন যাত্রা, দূর অন্বেষণ। এ যাত্রায় সামিল হয়েছেন শরীফ আস-সাবের; তবে নিরবচ্ছিন্ন নয়। তার এ কবিতাপথ। আমরা আনন্দ পাই, যখন দেখি, জীবন যাপনের কোলাহল, প্রবাস জীবনের আপাত বিচ্ছিন্নতায়ও তিনি কবিতা চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। তার বিবর্ণ বর্ণমালা' নামে বিবর্ণ মনে হলেও তা কাব্যবোধ ও অক্ষরের সান্নিধ্যের কুহকে উজ্জ্বল। এ। গ্রন্থের কবিতায় আমরা দেখি শরীফ পরিভ্রমণ করছেন। সময়ের নানা অনুষঙ্গকে ঘারণ করে; কখনো প্রেম, কখনো স্বপ্ন, কখনো প্রকৃতি, কখনো হতাশা ও ক্ষোভ, সব মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে তার কবিতার রসায়ন। যদিও। কবিতাগুলো লেখা প্রবাসে, কিন্তু কবিতার উপলব্ধিতে ঘুরে ফিরে এসেছে দেশের চিত্রকল্প।
এগারাে জন পশ্চিমের এবং একজন আমাদের, এদের নিয়ে বারাে জন শিশু সাহিত্যিকের মালা গেঁথেছেন সালেহা চৌধুরী। সংক্ষিপ্ত পরিচয়, কিছু লেখালেখির নমুনা বা স্যাম্পল। এ দেশের ক্ষুদে পাঠক এ গ্রন্থে সমৃদ্ধ হবে বলে বিশ্বাস। এগারাে জনের গল্পগুলাে সালেহা চৌধুরী নিজে অনুবাদ করেছেন। ব্যবহার করেছেন সেই সব গল্প সংক্ষিপ্ত জীবনের সঙ্গে। এই বই পড়ার কারণে ক্ষুদে পাঠকদের বিশ্ববরেণ্য শিশু সাহিত্যিকদের বই বেশি করে পড়বার বিষয়ে আগ্রহী হবে বলে আমার বিশ্বাস।
'বিসর্গ তান।’ কবি ও কথা সাহিত্যিক নাহার মনিকা রচিত একটি মাঝারি আকারের উপন্যাস। বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে ২০১৫ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসের দাম রাখা হয়েছে ২৭০ টাকা। আর বইটির বিষয়লগ্ন একটি নান্দনিক প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী শিবু কুমার শীল। আর ১৪৪ পৃষ্ঠা বইটিতে অধ্যায় আছে ২৯টি। নাহার মনিকার জন্ম বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে। গত তিন দশক ধরে তিনি কবিতা এবং গল্প লিখছেন দেশের বিভিন্ন দৈনিকের সাহিত্য পাতায়, সাপ্তাহিক ও সাহিত্য পত্রিকায়।তাঁর লেখা একটু আয়োজন করেই পড়তে হয়। লেখার মধ্যে সেই আয়োজনের শৈলীটি তিনি বেশ করে বুনে দেন। পাঠককে শুরুতে তাঁকে বুঝতে হয়। আলোচ্য বইটি তার প্রথম উপন্যাস। প্রতিটি লেখকের প্রথম উপন্যাসই অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেকটা বা খানিকটা আত্মজৈবনিক হয়ে ওঠে। সে ক্ষেত্রে লেখকের এই উপন্যাসেও আমরা নিজের জীবনের অনেক অভিজ্ঞাকে গল্পের রূপে পেয়ে যাবো।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর সর্বত্রই নারীর বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া কন্টকাকীর্ণ। উপরন্তু তিনি হাসি নিজের মতামতের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান, তাকে নানারকম সামাজিক প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তবু তার অগ্রযাত্রায় পথিকৃতের ভূমিকা নেন মেরি ওয়েলস্টনক্রাফ্ট ও বেগম রোকেয়াসহ অন্যান্য প্রতিবাদী নারী নেত্রীবৃন্দ। নাজনীন সীমন রচিত এই উপন্যাসে প্রথম থেকেই একজন প্রতিবাদী নারীকে বেড়ে উঠতে দেখা যায়: পটভূমি পূর্ব থেকে পশ্চিম। জীবনের পরতে পরতে জমে থাকা শ্রম ও বিড়ম্বনাকে তিনি শক্তিশালী কলমে তুলে আনতে সক্রেটিস, পেটো, নিৎসে, জন লক, ও হুমায়ুন আজাদসহ বিশিষ্ট মনীষীদের দ্বারস্থ হন। ফলত উপন্যাসটি ব্যথা, হারানোর বেদনা, বেড়ে ওঠার সংগ্রাম, নারীর একাকিত্বের আখ্যানের পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে ওঠে। তাছাড়া গল্প বলার ঢং ও বুনন সৌকর্যে তিনি সর্বদাই স্বতন্ত্র। তাঁর উচ্চারণ ভাবায়, অনুপ্রাণিত করে, নিয়ে যায় শিল্পের কাঙ্ক্ষিত কন্দরে। শিবনারায়ণ রায়ের 'জিজ্ঞাসা' পত্রিকায় গল্প লেখার মাধ্যমে তাঁর আত্মপ্রকাশ। ভাষা বিন্যাস ও পটভূমি নির্মাণে তিনি অনেকাংশেই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও হাসান আজিজুল হকের অনুসারী। ন্যাংটো সমাজের নিচু তলার মানুষের সাথে উঁচু তলার মানুষের প্রভৃ-ভৃত্য সম্পর্ক, স্বামীর চোখে স্ত্রীর নিম্ন বর্গীয় অবস্থান, পুরুষের থাবায় নারীর বিপদগ্রস্ত বিপর্যয়ের চিত্রায়নে সীমন এই উপন্যাসে ভিন্ন মাত্রা সংযোজনে সক্ষম হয়েছেন। আমরা 'বৃত্তের বিষাদ'-এর বহুল প্রচার কামনা করছি।
'বেলা-অবেলার কথা' বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ জীবনের চলার পথে খ্যাত-অখ্যাত কতজনের সঙ্গেই তো মানুষের দেখা হয়। কত ঘটনারই সম্মুখীন হতে হয় তাকে। এসব দেখাশোনা, আলাপ-পরিচয় মানুষের স্মৃতির সঞ্চয়কে সমৃদ্ধ করে তোলে। আবার তারই সূত্রে মানুষের মনে কিছু অনুভব-উপলব্ধি, ভাবনাচিন্তা জন্ম নেয়। তা যেমন আপন পারিপার্শ্বিকতা অর্থাৎ স্বদেশ ও সমাজ সম্পর্কে, তেমনি বিদেশ বা বিশ্ব সম্পর্কেও। কখনো হারিয়ে যাওয়া প্রিয়-পরিচিতজনদের কথা ভেবে স্মৃতিভারাতুর হয়ে ওঠে মন। বেলা-অবেলার কথা বইটিতে ড. সেলিম জাহান এক আশ্চর্য স্বাদু ও মমত্বময় ভাষা ও ভঙ্গিতে তাঁর সে বিচিত্র অভিজ্ঞতা, যাপিত জীবনের চালচিত্র ও ব্যক্তিগত ভাবনা তুলে ধরেছেন। ফেসবুকে লেখাগুলো প্রকাশের সময়ই তা ব্যাপক পাঠকের আগ্রহ ও মনোযোগ আকর্ষণ করে। তাঁর সে লেখার ঝাঁপি থেকে নির্বাচিত কিছু রচনা প্রথমা প্রকাশন এবার মলাটবন্দী করে প্রকাশ করল।
মতিঝিলে গভীর রাতে একটি বাঘ ঢুকে পড়েছে, টহলরত পুলিশের একেবারে সামনে দিয়ে। যেনতেন বাঘ নয়, প্রকাণ্ড রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সেই বাঘটিকে কিছুতেই আর খুঁজে পাওয়া যায় না। চিড়িয়াখানা থেকেও কোনও বাঘ পালিয়ে যায় নি। সেটা এলো কোথা থেকে? গেল কোথায়? নানা মুনির নানা মতো। এমনকি কোনও বাঘই নয়, কি দেখতে কি দেখেছে, তেমন মন্তব্যও আসতে থাকে। সেই বাঘ খুঁজতে গিয়ে অতর্কিতে আইনশৃংখলা বাহিনীর একাধিক সদস্য হতাহত হয়ে যান। কিন্তু বাঘটিকে মারা সম্ভব হয় না। সেটা আবারও পালিয়ে যায়। ওদিকে ভোর হওয়ার আগেই মানুষ সব জেনে ফেলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় গুজব, আর ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। তড়িঘড়ি তৈরি করা হয় ‘বাঘ সঙ্কট নিরসন কমিটি।’ তারা যুক্তিসংগত কোনও ব্যাখ্যাই খুঁজে পাচ্ছেন না। মতিঝিলের চারদিকে বেস্টনী দেয়া হয়। ভারী অস্ত্র নিয়ে রীতিমতো সেনাবাহিনী নেমে পড়ে। বিদেশ থেকে পরামর্শ আসে। কিন্তু অতি ধূর্ত এবং ভয়ংকর বাঘটিকে ধরাও যায় না, মারাও যায় না। বাঘ সঙ্কট নিরসন কমিটির এক সময় মনে হয়, বাঘটার বিশেষ একটা উদ্দেশ্য আছে। এরপরে ঘটনা যেভাবে এগুতে থাকে, তাতে সব কল্পনা হার মেনে যায়।
সেই আঠারো জোয়ার-ভাটার দেশ, যেখানে তিনটি নদী এসে মিশেছে, বঙ্গোপসাগরের কাছে ম্যানগ্রোভ বনের গভীরে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মৌমাছি বাস করতো। এই মৌমাছিদের আবার পরিচালনা করতো একজন দেবী মৌমাছি। এই মৌমাছিরা মৌচাক ভরে রাখতো ঘন সোনালী মধুতে, যাকে কেউ কেউ বলতো তরল আলো যা গাছের গা থেকে সূর্যের মিষ্টি ফোঁটার মত বেয়ে নামতো। সকল জীবজন্ত এবং পাখি এই মধু ভালোবাসতো, কিন্তু সবার চেয়ে বেশি মধু ভালবাসতো যে ছেলেটি, তার মাথায় খাড়া খাড়া চুল, আর তার নাম শনু। একদিন ক্ষুধার তাড়নায় তাড়নায় শনু মৌওয়ালিদের জন্য জরুরি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বনে প্রবেশ করলো। সে কী খুঁজে পাবে সেই মধু যাকে সে এত ভালোবাসে? নাকি ঐ-তিনি-যাঁর-নাম-মুখে-নেওয়া-বারণ, সেই প্রচণ্ড শক্তিশালী ভয়ঙ্কর দানবরূপী বাঘের কবলে পড়বে? ভারতের এক নামজাদা কবি, ফ্রান্সের অতি প্রিয় অলংকরণ শিল্পী, এবং বাংলাদেশের নন্দিত কবি ও কথাসাহিত্যিক শামীম আজাদের সঙ্গে চলো যাই সুন্দরবনের অন্তস্থলে, দৃষ্টিনন্দন ও কাব্যময় ভ্রমণ করে আসি।
ওই যে, ঐ অত বড় দীপ্তিমান প্রখর সূর্য ও মধ্যাহ্ন গগনে এসে পৌঁছলে আহ্নিক গতি অনুযায়ী নিজস্ব নিয়মে কিয়ং পরিমাণ হলেও হেলে পড়তে বাধ্য হয়। মানবজীবনও তাই। সূর্যোদয় থেকে অস্তাচলের পথে ঢলে পড়তে পড়তে বয়স পরিক্রমায় কত কিছুরই না সম্মুখীন হতে হয়। তাকে একেক বাঁকে তা একেক চেহারা। গড়পড়তা আয়ুর হিসেব যদি হয় তাহলে মানবজীবনেরও সংক্রান্তকাল এক গভীর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের মুখোমুখি হতে বাধ্য এবং হয়ও। পঁয়তাল্লিশ বছর বয়স থেকেই শুরু হয় নানা ধরনের সঙ্কটাবর্ত। যা একই সঙ্গে যেমন বহুমাত্রিক তেমনই বহুকৌণিকও। যার ফলে এই সঙ্কটকে অনুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাধারণ পাঠকের কাছে বোধগম্য করে তোলা খুব সহজ কাজ নয়। কমের পক্ষে সহস্রদল বিকশিত সত্য, ঔচিত্য আর যথার্থের এত এত দিক মিনা ফারাহ তাঁর তামসহ অনুসন্ধানী আলো ফেলে এমন নিখুঁতভাবে তুলে এনেছেন দেখে বিস্ময় মানতে হয়। মধ্য বয়সের রস্যময় অলি-গলি খুঁজতে মিনা ফারাহর এমন স্বচ্ছন্দ সহজ সরল বিচরণ সচরাচর খুবই বিরল দৃষ্ট। লেখকের যেমন পাকা হাত তেমনই তাঁর অতলস্পর্শী গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। চান্দ্রমাসের দুই পক্ষ তো বটেই এছাড়াও আছে অগণন নীহারিকাপুঞ্জ। বিশাল, বিরাট, অনন্ত জীবনপ্রবাহের মধ্যে আজ কত না রকমের স্রোত আদি অতীত থেকে বহমান সেই সব স্রোতোধারা। মানুষের মধ্য বয়সে এসে নানান বাঁকে নানান রূপে প্রতিভাত হতে থাকে। যার মধ্যে অধরা মাধুর্যের রূপখানিও জ্বলে ওঠে পূর্ণ মণিজালে। প্রাঞ্জলতা- কি ভাষার, কি চিন্তাপ্রবাহের, কি কঠিনেরে সহজ করে দেখার ক্ষেত্রে প্রায় সর্বত্রই সমান লক্ষণীয়। এমনকি কখনও কখনও পরিস্রুত এই মননশীলতা তাঁর নিজস্ব সীমাবদ্ধতাকেও অতিক্রম করে যায় এ যেন তারই এক উজ্জ্বল ও বিরল দৃষ্টান্ত।
মুক্তিযুদ্ধ : কিশাের উপন্যাসমালা নবীন প্রজন্মের হাতে ভুলে দেওয়া হচ্ছে সেই অবিশ্মরণীয় দিনগুলাের হৃৎপন্দন তাদের মধ্যে সঞ্চারের লক্ষ্যে। নবীন প্রবংশের লেখক, একাত্তর যাদের স্মৃতিতে নেহায়েতই বাল্যের অস্পষ্ট অভিঘাতের মতাে জেগে রয়েছে, যুদ্ধদিনে ফিরে গিয়েছেন অন্তরের উদগ্র তাগিদ থেকে এবং রচনা করেছেন কিশাের যােদ্ধার অনুপম কাহিনী। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে স্মরণীয় উপন্যাস 'রেড ব্যাজ অব কারেজ' রচনা করেছিলেন। স্টিফেন ক্রেন, যুদ্ধের কোন প্রত্যক্ষ স্মৃতি যার ছিল না। বাঙালির বীর গাথা নিশ্চিতই সঞ্চারিত হবে আগামীদিনের নাগরিকদের মধ্যে, সেই প্রত্যয়ের স্বাক্ষর বহন করছে। সেজান মাহমুদের বই। একাত্তরের এই কাহিনীর হাত ধরে কিশাের পাঠকরা পৌছে যাবে মুক্তিযুদ্ধের ভেতরে, দূর অতীত আবার হয়ে উঠবে সজীব বাস্তব এবং শুধু তথ্য হিসেবে জানা নয়, হৃদয়-মন দিয়ে তারা বুঝতে পারবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্বরূপ।
ঔপন্যাসিক Nahar Monica বলেন, ক্যানাডার হেমন্ত ঋতু'র কথা আমার উপন্যাস 'মন্থকূপ' এ এসেছে। এর পটভূমির অনেকটাই এখানকার অভিবাসীর জীবন। তাই এই মন্ত্রমুগ্ধকর হেমন্তের উল্লেখ না করলে হয় না। 'মন্থকূপ' থেকে কিছু অংশ বন্ধু পাঠকদের পড়তে দিই। "...এখানে হেমন্তকালের গাছের পাতা খুব কমনীয়ভাবে ঝরে যায়। ঝরে যাওয়ার আগে তারা সাজে, রঙ্গিন হয়, লাল হলুদ, খয়েরী মিশেলে সে এক রঙ্গের উৎসব। টুপটাপ, বাউ করে, তেছড়া টানে ভূমির আকর্ষণে নিচের দিকে পড়তে পড়তে নিজের একটু আগে জুড়ে থাকা গাছের ডালটির দিকে নরম গা এলানো আহ ভাব ছুড়ে দিয়ে নামতে থাকে। গ্রামের বাড়ির উঠানে শিউলী ফুলের টুপটাপ ঝরে পড়ার সঙ্গে এর কোথাও যেন মিল আছে। তবে এখানে হেমন্তের পাতা ঝরার বিস্তার বিশাল। বাড়ি ফেরার রাস্তার দু’ধারে ভুট্টার ক্ষেত থেকে ফসল তুলে নিয়ে মসৃণ সোনালী বিরাট মাঠের অদূরের থোক থোক বনের ভেতর থেকে যেন রঙ্গের আর আলোর কোন গুপ্তধন বেরিয়ে এসে ঠিকরে ঠিকরে পড়ছে। আমি সম্মোহিতের মত গাড়ির গতি কমিয়ে আনি।
প্রতিদিনই আমরা নানা বিষয় নিয়ে হাসিঠাট্টা করি। সমাজ ও দেশের বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে কৌতুক করি, মিম বানাই। সে রকমই কিছু সমস্যা লেখক রম্য ভঙ্গিতে এ বইয়ের রচনাগুলোতে তুলে ধরেছেন, যা একই সঙ্গে আমাদের মন ও মস্তিষ্ককে নাড়া দেবে, জাগিয়ে তুলবে। রম্যরস বাঙালি জীবনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। একটা শক্তিও বটে। রম্যসাহিত্য গড়ে ওঠে কটাক্ষ, শ্লেষ, ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ, কৌতুক ইত্যাদি নিয়ে। শক্তিশালী কলমে লেখা হলে সাহিত্য হিসেবে যার ক্ষমতা অসামান্য। এই বইয়ের রম্যধর্মী রচনাগুলোতে কাল্পনিক চরিত্র ও সংলাপের মধ্য দিয়ে চলমান সমাজের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, কবি, শিল্পী কিংবা মস্তান —চরিত্রগুলোর সবই আমাদের চেনা। তবে রম্যরচনা বলেই চরিত্রগুলো এখানে আমাদের আমোদিতও করে। নাগরিক জীবনের ভোগান্তির কারণ মশার জন্যও যেন ভালোবাসা জাগে। কাক, কুকুর বা ইঁদুরদের যে সম্মেলন, তার মধ্য দিয়েও যেন মানুষের সমাজের চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, সমাজের অসংগতিকে কটাক্ষ করার সেই তাগিদ থেকেই লেখক বইয়ের পর্বগুলো তৈরি করেছেন।
জনপ্রিয় লেখক আসিফ মেহ্দীর বিজ্ঞান কল্পগল্পের বই ‘মাছিম্যান’। জীবনঘনিষ্ঠতা ও রম্যের সমন্বয়ে লেখা তাঁর বিজ্ঞান কল্পগল্পগুলো একটু আলাদা। বইটিতে আছে আসিফ মেহ্দীর লেখা থেকে বাছাইকৃত ১৪টি বিজ্ঞান কল্পগল্প। তাঁর লেখা প্রকাশিত হচ্ছে ‘কিশোর আলো’, ‘বিজ্ঞানচিন্তা’সহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন পত্রিকায়; এছাড়াও দেশের বাইরে থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্রে। ‘মাছিম্যান’-এর গল্পগুলো পাঠককে আনন্দ দেবে, খোরাক যোগাবে নতুন নতুন ভাবনার। সাই-ফাই জগতে সবার আমন্ত্রণ। আসিফ মেহ্দী। পড়ালেখা বুয়েটে এবং পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যে। পেশা সরকারি চাকরি, কিন্তু নেশা লেখালেখি। দেশসেরা দুই ফান ম্যাগাজিন ‘উন্মাদ’ ও ‘রস+আলো’তে লেখার সুবাদে আসিফ মেহ্দী পাঠকের কাছে সুপরিচিত। তাঁর প্রকাশিত প্রতিটি বই পেয়েছে পাঠকপ্রিয়তা, উঠে এসেছে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায়। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩০