কোনো এক প্রাগৈতিহাসিক নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির প্রাচীরে গন্তব্যহীন অন্ধকার হয়ে সেঁটে রইল তারা। অযুত বাধার অজস্র পথ পেরিয়ে এসেও যেন ডিঙাতে পারল না অনভ্যাসে অগম্য হয়ে ওঠা অকর্ষিত অভিমানী মনভূমিটুকু। কিন্তু তাদের মন ও শরীর আলগোছে হাওয়ায় ছড়িয়ে দিতে লাগল স্মৃতির সুবাস। সেই সুবাস কি ডিঙিয়ে যেতে পারবে এই অলঙ্ঘনীয় দ্বিধার দেয়াল? হেমন্তের বিষণ্ণ সন্ধ্যায় দূর কোথাও থেকে ভেসে আসছে অদ্ভুত হাহাকারের সুর। বুকের ভেতর আলগোছে নেমে আসছে মেঘ কিংবা কুয়াশা। কিংবা গাঢ় শীতল অন্ধকার। নাম না জানা দুঃখ। সেই দুঃখের ভেতর মন কেমনের হাওয়া। সেই হাওয়ায় ওই বিষাদ অন্ধকারে যেন স্থির হয়ে আছে প্রাচীন পাথরে খোদাই করা দুটি মূর্তি। কী আশ্চর্য, সেই মূর্তির বুকেও হঠাৎ জলের ঢেউয়ের মতো ছলাৎ ছলাৎ শব্দ হতে থাকে!
তুচ্ছ কোন কারণে মানুষ যেমন তার ঠিকানা বদল করে আবার ঘোর নিদানকালেও শত অত্যাচার, অনাচার কিংবা বঞ্চনার পরেও মানুষ মানুষেরই কাছে থাকে, ঠিকানা বদল করতে চায়না। কিন্তু এখানে আখলাকের ঠিকানা বদলে গেছে। আখলাক উল্লাহ এই কাহিনীর প্রধান চরিত্র। সে প্রায় ৭ বছর ধরে এই শহরে বাস করে আসছে। জীবনের এক ঘোরকালে তার সাথে পরিচয় হয় একজন বাঙালি ক্যাবে ড্যান্সার মেয়ের সাথে। জীবনে স্বস্তি পাওয়ার আশায় বদলে ফেলে নিজের ঠিকানাও। নির্জন পাহাড়ে এক বৃদ্ধার বাড়ি ভাড়া করে থাকা শুরু করে। তারপরই ঘটে আরও অনেক ঠিকানা এবং জীবন বদলের কাহিনী 'আমাদের ঠিকানা বদলে গেছে' উপন্যাসে কথাসাহিত্যিক আরিফুর রহমান অন্যরকম ঠিকানা বদলের আখ্যান গড়েছেন। লেখকের নিজের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা যমুনা বিধৌত অঞ্চলে। জীবদ্দশায় বেশ কয়েকবার নদী ভাঙনে তাঁর ঠিকানা বদলে গেছে। তারপর দেশান্তরী হয়ে এখন বাস করছেন প্রশান্ত পারের শহর সিডনিতে। সুতরাং ঠিকানা বদলের ইতিহাস তাঁর মতো আর কে বা বলতে পারেন। তাঁর জনপ্রিয় এবং একা', 'জানি সে আসবে না', 'নিঃশব্দ গ্রহরে', 'দহন দিনের গান' কিংবা অন্য সকল উপন্যাসের মতই এখানেও মানব মানবীর প্রেম, দারিদ্র, সমাজচিত্র সহ বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে।
আশফাক ফাহিম হন্যে হয়ে পূর্ণতাকে খুঁজছেন। তাঁর লেখার একটি বিশেষ জায়গায় তার খুব প্রয়োজন। একটি বাস্তব ও কষ্টমাখা গল্পটির জন্যই কি এতোটা অপেক্ষা। পুর্ণতার সাথে দেখা হওয়াটা জরুরী। দীর্ঘ এক মাস পরে তিনি বাসা থেকে বের হলেন। রিকশা নিতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখলেন সেই মেয়েটি..... এভাবেই এগুতে থাকে গল্প। গল্প নাকি সত্যি। আরিফুর রহমানের 'জানি সে আসবে না' উপন্যাসটি একটি সত্যি ও কষ্টভরা জীবনের গল্প। এমন একটা গল্প যেটা শুনলেই গা শিউরে ওঠে। যে কেউ গল্পটা শুনলে বলবে- ধুর, এটা আবার হয় নাকি? কিন্তু উপন্যাসের আখ্যানের মতই এই লেখককে গল্পটি বলেছেন গল্পের প্রধান চরিত্র। গল্পকার দেশের বাইরে থাকলেও তাঁর যোগাযোগের নাম্বার খুঁজে বের করে ফোন করেছে সে। তারপর একে একে তার জীবনের গল্পটি বলেছে। একসময় বলেছে- লেখক, গল্পটি আপনি পাঠককে জানান। তাদের বিশ্বাস করিয়ে ছাড়ুন, এমনও হতে পারে, এমনও হয় পৃথিবীতে। একদিন পূর্ণতা সেন দাঁড়ায় নদীটির ধারে। যে নদী আশফাক ফাহিম খুব পছন্দ করেছিলো। বৃষ্টির সঙ্গে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। কিন্তু তার শীত লাগছে না। অদ্ভুত এক শিহরন হচ্ছে।" জানি সে আসবে না- তেমনই এক শিহরনের গল্প, অপেক্ষার গল্প।