ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় একবার রোকেয়া হলের এক সিনিয়র আপুর প্রেমে পড়লাম। ঢাবির প্রত্যেক সেশনেই দুই-একজন ‘ক্যাম্পাস কাঁপানো সুন্দরী’ থাকে – এই আপু সেইরকমই একজন ‘ক্যাম্পাস কাঁপানো সুন্দরী’ (ক্যাকাসু) ছিলেন। অসাধারণ গান গাইতেন – রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। সে আমলেও রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পীরাও বেশ আলগা ভাব নিতে পারতেন – উনিও নিতেন। আমি তখন সেকেন্ড কি থার্ড ইয়ারে পরি- ক্যাকাসু পরেন মাস্টার্সে। আমরা ছিলাম ‘টঙমেট’ অর্থাৎ দু’জনেই একি টঙ্গে আড্ডা দিতাম। তবে উনি উনার সার্কেল নিয়ে আড্ডা দিতেন, আর আমি আড্ডা দিতাম আমার সার্কেল নিয়ে। ধীরে ধীরে তার সাথে একটি মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে আমার, যদিও সেই সম্পর্ককে প্রেম বলা যাবে কিনা আমি জানি না। একজন ক্যাকাসু সেই মধুর সম্পর্কেরই গল্প। নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে যারা ইউনিভার্সিটি জীবন কাটিয়েছে, এই উপন্যাস তাদের জন্য।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হবার পর স্বাভাবিকভাবেই স্বপ্ন ছিল একটি নতুন দেশ গড়ে উঠবে । দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে। কিন্তু তা হয়নি। হয়েছে তার বিপরীত । বার বার রক্ত রঞ্জিত হয়েছে দেশ। দেশ গড়ার স্বপ্ন হয়েছে ধূলিসাৎ। আক্রান্ত হয়েছে স্বাধীনতা, সংবিধান, গণতন্ত্র । বিপন্ন স্বাধীনতা আর বিধ্বস্ত গণতন্ত্রের ওপর চেপে বসেছে কখনাে সামরিক শাসন কিংবা স্বৈরশাসন অথবা অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ । যা আমাদের পঁচিশ বছরের স্বাধীন রাষ্ট্রকে পঙ্গু করে দিয়েছে । এদেশ আজ যেন জীর্ণশীর্ণ। পুষ্টিহীন যুবক। | মাও সেতুং বলেছিলেন, “যুদ্ধ হচ্ছে রক্তপাতময় রাজনীতি, আর রাজনীতি হচ্ছে রক্তপাতহীন যুদ্ধ।'... বাংলাদেশের অসংখ্য লােমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়। যেখানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবার কথা সেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে । আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা-সভ্যতা, সাংস্কৃতিক সবদিক দিয়েই এদেশ মােটেও অগ্রগতি লাভ করতে পারেনি। এই না পারার পেছনে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড প্রথম এবং প্রধান অন্তরায়। কারণ একের পর এক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলাে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর দারুণভাবে | ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। ফলে আমাদের উন্নতি-উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।