হ্যামলেট বা দ্য ট্র্যাজেডি অফ হ্যামলেট, প্রিন্স অব ডেনমার্ক সংক্ষেপে হ্যামলেট নামে বহুল পরিচিত একটি শেক্সপিয়রীয় ট্র্যাজেডি যা ১৫৯৯ এবং ১৬০১ সালের মাঝে কোন একসময় রচিত হয়েছিল। এটি ২৯,৫৫১ টি শব্দ নিয়ে শেক্সপিয়র রচিত সবচেয়ে দীর্ঘতম নাটক। ডেনমার্ক সাম্রাজ্যের পটভূমিতে রচিত নাটকটি যুবরাজ হ্যামলেট ও তার চাচা ক্লদিয়াসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ স্পৃহাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে যিনি সিংহাসন দখলের জন্য হ্যামলেটের পিতাকে হত্যা করেছিলেন এবং হ্যামলেটের জন্মদাত্রী মাকে বিয়ে করেছিলেন। হ্যামলেট কে বিশ্ব সাহিত্যের একটি অন্যতম শক্তিশালী এবং প্রভাব বিস্তারকারী সৃষ্টিকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় যার গল্পটি অসংখ্যবার বলবার পরও এর মাধুর্য অনিঃশেষ। অনেকেই তাদের লেখনীতে এর গল্পকে নানাভাবে ধারণ বা আত্মীকরণ বা এডাপ্ট করেছেন।
বাংলাদেশের কবি ও নাট্যকার আনিসুর রহমানের তিনটি নাটক নিয়ে এ গ্রন্থ 'তিন ভুবনের তিন নাটক'। নাটকগুলো প্রাথমিকভাবে ইংরেজিতে লেখা হলেও আর্মেনিয়া, নরওয়ে, সুইডেনসহ নানা দেশের নাট্যশালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেতার থিয়েটারে কয়েকটি ভাষায় প্রযোজিত হয়েছে। তিনটি নাটকই কাল্পনিক প্রামাণ্য রচনা । 'নাইট জার্নি' নাটকটি নাট্যকার হেনরিক ইবসেন এবং অগাস্ট স্ট্রিন্ডবার্গের জীবন ও কর্মকে আশ্রয় করে; ‘হায়েনা ও মন্ত্রী' নাটকটি একজন ফেরারি শরণার্থীর হায়েনা হয়ে যাওয়ার পরিণতিকে এবং ‘আমি মালালা' মনোলগটি তালেবানের খপ্পরে থাকা নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফজাঈর অপার উদ্যম ও সাহসকে উপজীব্য করে লেখা। তিনটি নাটকের ভিন্ন তিন মেজাজ, আঙ্গিকে আলাদা, নতুন এক পরীক্ষণ; নাটক ও নাট্যতত্ত্বের আন্তর্জাতিক এক সংযোজন ।
স্থান: এক অজানা নামহীন অরণ্য। কুশীলব: উইলিয়াম শেক্সপিয়র সৃষ্ট চারজন অভিজাত পুরুষ, তাদের স্ত্রী/প্রেমিকা, একজন কাঠুরে এবং বনের পশুপাখি। এই নাট্যচরিত্রগুলো নিয়ে বেড়ে ওঠা নাটকের আখ্যান মূলত নারীর প্রান্তিকতা, পুরুষতান্ত্রিকতা, মানুষের অস্তিত্বের সংগ্রাম, সমাজের বিভাজন, এবং তারই মাপকাঠিতে মানুষের চাহিদার অনৈক্য, মানুষ ও পরিবেশের পরস্পরের বোঝাপড়া ও উভয়ের আস্তিত্বিকদ্বন্দ্ব, এবং সর্বোপরি চূড়ান্ত অনুধাবনে জীবনের উপলব্ধির কাছে প্রশ্ন: আমাদের পরিত্রাণ কি অরণ্যের বা আদিমতার কাছেই ফিরে যাওয়া? নাট্যচরিত্র সৃষ্টিতে ঈশ্বরতুল্য শেক্সপিয়রের আটজন নারী-পুরুষ, নাট্যকারদ্বয় উদ্ভাবিত হতদরিদ্র কাঠুরে, বনের গাছ-গাছালি এবং নিরীহ প্রাণীদের আকস্মিক অনুঘটনে যে নাট্যকৃতি প্রস্তুত হয় তার ভেতর পাওয়া যায় উইলিয়াম শেক্সপিয়রের অব্যাক্ত, অলিখিত বক্তব্যের ইঙ্গিত, এবং নাটকের বিধৃতি এক সরলরৈখিক যাদুবাস্তবতা আশ্রয়ে, আপাত অনুভবে দৈনন্দিন সংলাপের মাধ্যমে হয়ে উঠে গাঢ় অর্থবহ। 'অরণ্য' নাটকের এক গভীর অনুষঙ্গ, কারণ অরণ্য শেক্সপিয়রের একাধিক নাটকের (অ্যাজ ইউ লাইক ইট এবং ম্যাকবেথ) নাট্যাভিনয় স্থান, যে স্থানকে তিনি মনে করতেন এক যাদুক্রান্ত ভৌতিক পরিবেশ, যেখানে মানবজীবন এবং পশুপাখি, গাছ-গাছালির জীবন যেমন এলোমেলো, দুর্বোধ্য, রহস্যময় হয়ে যায় তেমনি মিলেমিশে একাকারও হয়ে উঠে; একসময় সকল প্রাণী রূপান্তরিত হয়ে এক অলৌকিক পরিবেশ সৃষ্টি করে, জীবজগৎ এক মন্বন্তরকাল অতিক্রান্ত করে পৌঁছে যায় অপর এক বোধে। একটি মরাগাছ ও চারজন নারীর স্বপ্নভঙ্গ নাটকেও তাই ঘটেছে।