হামাস। বিশ্বব্যাপী পরিচিত এক মুক্তি আন্দোলনের নাম। হামাসের চোখ দিয়ে সারা পৃথিবীর মুসলমানরা আল কুদুস মুক্তির স্বপ্ন দেখে। জাতির বেঈমান বড়ো একটা অংশ যখন জয়োনবাদীদের সঙ্গে গোপন সমঝোতা ও আপসকামীতায় ব্যস্ত, ঠিক তখনই ঈমানী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দুরন্ত সাহসে গর্জে ওঠে আমৃত্যু লড়াকু হামাস যোদ্ধারা। মজলুম জননেতা শেখ আহমাদ ইয়াসিনের হাত ধরে জন্ম নেওয়া হামাস এখন রক্তাক্ত জনপদ ফিলিস্তিনের মুক্তির লড়াইয়ে আশা-ভরসার একমাত্র প্রতীকে পরিণত হয়েছে। আজকের এই অবস্থানে পৌঁছতে অসংখ্য শাহাদাত এবং ত্যাগের নজরানা পেশ করতে হয়েছে। ইজরাইলের মতো ঘৃণ্য অপশক্তির মোকাবিলায় হামাস যে দুঃসাহসিতার পরিচয় দিচ্ছে, তা অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়। ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলাভাষী পাঠকবৃন্দ হামাস নিয়ে বেশ অনুসিন্ধুৎসু। বাস্তবে বাংলা ভাষায় এই বৈপ্লবিক মুক্তি আন্দোলন নিয়ে সেই অর্থে কোনো একাডেমিক কাজ হয়নি। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত এই মুক্তি আন্দোলনকে বাংলাভাষীদের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছেন তরুণ লেখক ও অনুবাদক জনাব আলী আহমদ মাবরুর। অনেক পরিশ্রম করে তুলে এনেছেন হামাস সম্পর্কিত অনেক আজানা তথ্য ও ঘটনা। দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান অনেক ঘটনা পড়ে পাঠকবৃজন্দ কখনো অশ্রুসিক্ত হবেন, কখনো রিক্ত হবেন, কখনো-বা শিহরণ জাগবে রক্তকণিকায়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক মাত্রা নিয়ে চর্চা হলেও তুলনামূলকভাবে অনালোচিত রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন চিকিত্সার মাত্রাটি। যুদ্ধকালে আহত, নিহত, পঙ্গুত্ব বরণ করা জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য এবং চিকিত্সার ব্যবস্থা যুদ্ধেরই অংশ। এই গ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধকালের সেই চিকিত্সাযুদ্ধেরই ইতিহাস।
১৯৭৫-৮১ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ঘটনাবহুল পর্ব। এ সময়ে এ দেশে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা রাষ্ট্রের চেহারা অনেকটা পাল্টে দেয়। সেসব ঘটনা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। রয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে নানাজনের নানা মত। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা, নভেম্বরের জেলহত্যাকাণ্ড, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা হাতে নেওয়া, অভ্যুত্থান-পাল্টাঅভ্যুত্থান ইত্যাদি ঘটনার কোনোটির সাক্ষী আবার কোনোটির প্রত্যক্ষদর্শী এই বইয়ের লেখক। সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা হিসেবে ঘটনাগুলো কাছ থেকে দেখার ও অনুভব করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। সেই উত্তাল-অনিশ্চিত সময়ের জানা-অজানা অনেক তথ্য, ঘটনাপ্রবাহের অন্তরঙ্গ বিবরণ পাঠক পাবেন এ বইয়ে। ইতিহাস-অনুসন্ধিৎসু পাঠক যেমন বইটি পাঠে কিছু বিষয়ে নতুন করে ভাবতে উদ্বুদ্ধ হবেন, তেমনি সাধারণ পাঠকেরও আগ্রহ বা কৌতূহল মেটাবে এ বই।
স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই বঙ্গবন্ধুর এই উপলব্ধি হয়েছিল, “রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায়, যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে।" যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বহু লালিত স্বপ্নের বহিঃপ্রকাশ ঘটে দ্বিতীয় বিপ্লব' কর্মসূচির মাধ্যমে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত কার্যকরী মাধ্যম ছিল জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি মাত্র রাজনৈতিক দল 'বাকশাল'। জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে তখনকার বিশ্ব বাস্তবতায় একটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক কর্মসূচিকে ঈন্সিত লক্ষাভিমুখী দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য বঙ্গবন্ধু 'বাকশাল' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাকশালের মূল লক্ষ্য ছিল একটি শোষণহীন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও শোষিতের গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা; যা ছিল জনগণের যুগ যুগের লালিত স্বপ্নের মহত্তম আকাঙ্ক্ষার গৌরবময় বহিঃপ্রকাশ। বাকশাল কর্মসূচিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এক. রাজনৈতিক, দুই আর্থ-সামাজিক, তিন, প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থা —এই বইটিতে যার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাকশাল গঠনের পূর্বে ও পরে পার্লামেন্ট, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা এবং গণভবনে জেলা গভর্নর ও বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এই ভাষণগুলোর সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং এতে নিহিত বাকশাল কর্মসূচির লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে বইটিতে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি এবং দেশি-বিদেশি কায়েমী স্বার্থবাদীরা পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, যাতে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে দেশ অগ্রসর হতে না। পারে। এই বইটিতে ইতিহাসের সেই অধ্যায়কেই পাঠকের নিকট তুলে ধরা হয়েছে, যা পনেরোই আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনার ভেতর দিয়ে পরিসমাপ্ত হয়েছে।