প্রিয় পাঠক, উপন্যাসের আড়ালে লুকিয়ে-থাকা কোনো উপন্যাস কি কখনও পড়েছেন আপনি? কখনও কি সমাধান পেয়েছেন রহস্যের নিচে চাপা পড়ে-থাকা রহস্যের? আগাথা ক্রিস্টি অথবা ডরোথি এল. সেয়ার্সের সমসাময়িক গোল্ডেন-এইজ-অভ-মিস্ট্রি’র সঙ্গে কি সাযুজ্য পেয়েছেন আধুনিক কোনো কাহিনির? যদি তিনটি প্রশ্নের জবাবই “না” হয়, তা হলে এ-বই আপনার জন্য। অ্যালান কনওয়ে একজন রহস্য-সাহিত্যিক। তাঁর সাম্প্রতিক উপন্যাসটা সম্পাদনা করার জন্য দেয়া হয়েছে “ক্লোভারলিফ বুকস”-এর এডিটর সুয্যান রাইল্যান্ডকে। ওটা পড়তে গিয়ে চমকে উঠতে হলো সুয্যানকে...শেষের কয়েকটা চ্যাপ্টার হারিয়ে গেছে! অ্যালানের দ্বারস্থ হতে চেয়ে জানতে পারল সে, আত্মহত্যা করেছেন তিনি। কিন্তু সে-মৃত্যু মেনে নিতে পারল না সুয্যান। ওর ধারণা, খুন করা হয়েছে অ্যালানকে। অনন্যোপায় হয়ে শখের গোয়েন্দাগিরিতে নামল সে। ফলে, শুরুটা হয়েছিল সাদামাটা এক রহস্যোপন্যাস দিয়ে, আর কাহিনির শেষ টানল অভিনব এক টুইস্ট।
আন্দালুসিয়ার রাখাল-বালক সান্তিয়াগো। স্বপ্নে দেখা গুপ্তধন উদ্ধারে নামে পথে জিপসি বুড়ি ও সালেমের রাজার কথা শুনে। জানে না...এই যাত্রার শেষে অপেক্ষা করছে ওরই জীবনের লক্ষ্য! কিন্তু জীবনের অপর নাম যে কুহেলিকা! এত সহজে পেতে দেবে না ওকে লক্ষ্য। তাই ছেলেটাকে প্রস্তুত করার জন্য একের-পর-এক বাঁধা ফেলল সামনে, সেই সাথে উপহার দিল সেগুলো অতিক্রম করার উপায়ও। এলো প্রেম, ভালোবাসাকে শক্তি বানিয়ে রাখাল-বালক এগিয়ে গেল দৃঢ়তার সাথে। শেষ পর্যন্ত পেল কী সেই গুপ্তধন? মানুষ যখন সর্বান্তকরণে চায় কিছু একটা পেতে, মহাবিশ্বের প্রতিটি কণা যোগসাজশে লেগে পড়ে সেই চাহিদা মেটাতে- সত্যিই কী তাই? দর্শন, সূক্ষ্ণ জীবনবোধ আর লক্ষ্য অর্জনের প্রেরণা মিলিত হয়েছে যে বইয়ের পাতায়...তারই নাম 'দি আলকেমিস্ট'।
গত একটা বছর কোমায় কাটিয়ে দিয়েছে ফেয়ারি জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী, ওপাল কোবোই! দুর্ঘটনার শিকার? উহু, এই কোমাটাও স্বপ্রনোদিত! সময়টা নষ্ট করেনি ওপাল, কাটিয়েছে পরিকল্পনা সাজিয়ে। কীসের পরিকল্পনা? ওর শত্রুদের বারোটা বাজানোর...আর কীসের! অথচ স্মৃতি মুছে ফেলার কারণে পাতালের কিচ্ছু মনে নেই আর্টেমিসের। তবে ওপাল ভোলেনি ওকে। ভোলেনি হলি শর্ট বা লেপ-এর ওরাও! আরও একবার...ফেয়ারি এবং মানব সভ্যতার রক্ষাকর্তা রূপে আবির্ভুত হতে হবে ওকে। কিন্তু এবারের প্রতিপক্ষে যে বড় শক্ত! কে জিতবে বুদ্ধির খেলায়? ওপাল কোবোই? নাকি আর্টেমিস?
দ্য হোল মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীকে হারানোর পর, কোমা থেকে জেগে নিজেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় আবিষ্কার করে ওগি! দেখভাল করার জন্য আছে একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে শোকসন্তপ্ত শাশুড়ি। কিন্তু ওগিকে অবহেলায় ফেলে রাখা হয় বিছানায়; ওর দুনিয়া সংকুচিত হয়ে পড়ে নিজের ঘর আর স্ত্রীর সাথে কলহপূর্ণ সম্পর্কের স্মৃতির ঘোরপাকে। মেয়েটা তার জীবনে সব কাজে ব্যর্থ হলেও সফলতা পেয়েছিল কেবল একটায়: উঠানের বাগান তৈরিতে। তবে শীঘ্রই ওগি আবিষ্কার করে: শাশুড়ি মেয়েটার কষ্টে গড়া বাগানটাকে উপড়ে ফেলে সেখানে খুঁড়ছে গভীর এক গর্ত! কারণ জানতে চাইলে মহিলা বলে: মেয়ের অসমাপ্ত কাজকেই পরিণতি দিচ্ছে সে! পালাতে মরিয়া ওগি আবিষ্কার করে, স্ত্রী ও শাশুড়িকে ঘিরে রাখা রূঢ় এক সত্য। ২০১৭ সালের শার্লি জ্যাকসন পুরস্কারপ্রাপ্ত হে-ইয়ঙ পিয়োনের দ্য হোল উপন্যাসটি সুচারুভাবে তুলে ধরেছে একাকীত্ব আর অবহেলার এক ভয়ংকর, নির্মম প্রতিচ্ছবি।
জিম কলিন্স এর অনেক বছরের গবেষণার ফল গুড টু গ্রেট। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে একটা মেডিওকার কম্পানি গ্রেট হয়। কিভাবে গ্রেট হওয়া সম্ভব হয়েছে? যেকোনো কম্পানি চাইলেই কি গ্রেট হতে পারবে? কিছু কম্পানি সারাজীবন গুড থাকে। মানে তারা ভালো থেকে আর উপরে উঠতে পারে না। গুড থেকে গ্রেটে পরিণত হওয়া তো সবার পক্ষে সম্ভবও না। একটা কম্পানি তার প্রতিযোগী আর জেনারেল মার্কেট সম্পর্কে ভালো জ্ঞান না থাকলে কোনোদিনও গ্রেট হতে পারবে না। নাইটিজে, কলিন্স এবং তার দলের গবেষকেরা এইসব উত্তর খুঁজে খুঁজে বের করেন, আসলে কিভাবে গুড থেকে কম্পানিগুলো গ্রেট হয়েছে। প্রথমত, তারা বের করেছে মেডিওকার কম্পানি কেমন এবং গ্রেট কম্পানি কেমন। তারা কখনও গ্রেট কম্পানিগুলো নিয়ে ঘাটাতে চান নি কারণ সেগুলো গ্রেটই থাকবে। তিনি চেয়েছেন অন্যদের নিয়ে কাজ করতে। মূলত, তিনি চেয়েছেন এভ্যারেজ একটা কম্পানি কিভাবে হঠাৎ করেই শেয়ার মার্কেট দখল করে ফেলেন। এবং গ্রেটে পরিণত হয়। গ্রেট রেজাল্ট পাওয়ার জন্য একটা কম্পানিকে অবশ্যই ১৫ বছর একইভাবে এবং একনিষ্টভাবে কাজ করে যেতে হবে। যারা ১৫ বছর স্টক মার্কেট দখল করে আছে মানে ১৫ বছরে অন্তত ৭ বার তারাই বেটার পজিশনে চলে যায়। যেমন: কোকাকোলা, জিই, ইনটেল ইত্যাদি। ৫ বছর গবেষণায় তারা ২৮টি কম্পানির ইতিহাস ঘেটেছে। অনেক তথ্য-উপাত্ত যোগার করতে হয়েছে। এবং তারা সফল হয়েছে।
এই ছােট গ্রন্থটি (গভীর চিন্তা ও অভিজ্ঞতার ফসল) চিন্তাশক্তির বিভিন্ন বিষয়ের উপর লিখিত সামগ্রিক কোন প্রবন্ধ নয়। এটি বিশ্লেষণধর্মী নয়, বরং ইঙ্গিতমূলক; এর বিষয় হল‘তারা নিজেরাই নিজেদের তৈরি করে’ এই সত্যকে আবিষ্কার ও গ্রহণের জন্য পুরুষ ও নারীদেরকে উজ্জীবিত করা, যাতে তারা উৎসাহিত হয় ও বুঝতে পারে যে মন মানুষের চরিত্র ও পরিস্থিতি দুটোরই নির্মাতা এবং তারা জ্ঞান ও আনন্দের মাধ্যমে অজ্ঞতা ও কষ্টকে দুরে রাখতে পারে।