'আয়না' বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ আবুল মনসুর আহমদ এ বইয়ের গল্পগুলোর মধ্য দিয়ে আমাদের ধর্মীয় কুসংস্কার, রাজনৈতিক ভণ্ডামি ও সামাজিক জীবনের নানাবিধ মূঢ়তা নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন। গল্পগুলোর সব কটিতেই আপাত-কৌতুকের সঙ্গে সমাজের জন্য লেখকের দরদ ও দুঃখবোধ জড়িত। গল্পগুলো সম্পর্কে তিনি নিজেই লিখেছেন-এই হাসির পেছনে কান্না লুকানো আছে। আবুল মনসুর আহমদ সমাজের সংস্কার চেয়েছেন। সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো দেখিয়েও দিয়েছেন তাঁর গল্পে। তাঁর রচনার একটা বড় গুণ হলো এই উদ্দেশ্যমূলকতা কখনো শিল্পকে ছাড়িয়ে যায়নি। অধিকাংশ গল্পে তিনি বাঙালি মুসলমান সমাজের ভেতরের কথা বলেছেন। এখানে তাঁর অভিজ্ঞতা ও শিল্পদৃষ্টির একটা চমৎকার মেলবন্ধন ঘটেছে। এ বইয়ের গল্পগুলোর পাঠ আজকের দিনেও পাঠকের জন্য স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
বাংলা সাহিত্যে ব্যঙ্গরসাত্মক লেখকের সংখ্যা বেশি নয়। রঙ্গরসাত্মক রচনার মধ্য দিয়ে বিপুল খ্যাতি লাভ করেছিলেন যে কজন লেখক, তাদের মধ্যে আবুল মনসুর আহমদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। রঙ্গব্যঙ্গ রচনার মধ্য দিয়ে তিনি শুধু রসই উপস্থাপন করেননি, দেশ ও সমাজের অসংগতিগুলােও তুলে ধরেছেন আর আঘাত করেছেন আমাদের অনৈতিক ও আপসকামী মনকে। ফুড কনফারেন্স গল্পগ্রন্থটি প্রকাশের পর আমাদের সাহিত্যজগতে আলােড়নের সৃষ্টি হয়। এ বইয়ের গল্পগুলােতে বিশ শতকের ত্রিশ ও চল্লিশের দশকের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সংঘটিত ঘটনার চালচিত্র তুলে ধরা হয়েছে রঙ্গব্যঙ্গের সরসতায় ।হাস্যরসের অন্তরালে নিহিত কঠোর সমাজবাস্তবতা আজও পাঠককে গভীরভাবে ভাবিয়ে তােলে। লেখক প্রায় আশি বছর আগের নানা অসংগতিকে কেন্দ্র করে রসের চাবুকে যে আঘাত হেনেছিলেন, বর্তমানে পাঠক সেই আঘাতের প্রয়ােজনীতা আরও বেশি করে অনুভব করবেন।
‘বিশ্ব-র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হয় না কেন?’ দিনারজাদির প্রশ্নের জবাবে আরব্যোপন্যাসের নায়িকা শেহেরজাদি একের পর এক কারণ বাতলাতে থাকেন এবং নীরবে শুনতে থাকেন বাদশাহ শাহরিয়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিচিত্র সমস্যা এবং প্রকৃত সমাধানের এক অভূতপূর্ব সমাহার। মজলিশি ঢঙে, রম্যরীতিতে রচিত এক অপূর্ব আলাপ-গাথা । আরব্যোপন্যাসের বাদশাহ শাহরিয়ার প্রতি রাতে একটি নিকাহ-এ-মুতা করতেন এবং পরদিন ভোরে সেই বেগমকে কতল করাতেন। এই ঘৃণ্য প্রথার অবসানকল্পে উজিরকন্যা শেহেরজাদি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বাদশাহের নিকাহ কবুল করেন। এক রাতের বেগম শেহেরজাদির অন্তিম অনুরোধে বাদশাহ শাহরিয়ারের অনুমতিক্রমে বাসরঘরে আসেন শ্যালিকা দিনারজাদি। রাতের বয়স বাড়লে পূর্বপরিকল্পনামাফিক দিনারজাদি প্রশ্ন করেন: ‘আপা, বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হয় না কেন?’ দ্বাদশ রাত্রি ধরে একের পর এক কারণ বাতলে যান শেহেরজাদি, কমবেশি ছত্রিশটি কারণ। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিচিত্র সমস্যা ও প্রকৃত সমাধানের অপূর্ব সমাহার এই ‘আলিফ-লাইলা’ মজলিশি ঢঙে, রম্যরীতিতে রচিত এক অভিনব রসরচনা।