স্কুল শেষে বাসায় ফিরতেই ছোট্ট ব্রুনো দেখল সবাই গোছগাছ করছে, বাবার বদলি হয়ে গেছে, অন্য কোথাও যেতে হবে তাদেরকে। নতুন জায়গায় গিয়ে খুবই হতাশ হলো সে। খেলার কোন সঙ্গি নেই। যতদূর চোখ যায় কাঁটাতারের বিশাল বেড়ায় ঘেরা পুরোটা জায়গা। ওপাশের সবকিছুকে সযত্নে দূরে সরিয়ে রেখেছে সেই কণ্টক প্রাচীর। কিন্তু চুপ করে বসে রইল না ব্রুনো। অজানাকে জানার জন্যে খুঁজতে থাকলো উপায়। ডোরাকাটা পায়জামা পরা এক ছেলের সাথে দেখা হলো তার, কিছুদিনের মধ্যেই হয়ে গেল বন্ধুত্ব। কিন্তু এর পরিণতি কি হবে তা তার জানা নেই।
গভীর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ছুটে চলছে মেয়েটা। চারদিক অন্ধকার। গভীর রাত, পুরাে জঙ্গল ঘন কুয়াশায় আবৃত। এক হাত দূরের কোন কিছুও দেখা যাচ্ছে না ঠিকমতাে। খুব শীত লাগছে তার, পরনে শুধু নীল রঙের পাতলা সুতি কাপড়ের ফ্রক। খালি পা। জঙ্গলে গাছের সারির মাঝ দিয়ে জোরে ছুটে চলছে সে। মেয়েটার হাতে একটা ছােট পুতুল। খুব শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রেখেছে সেটা, যেন খুব মূল্যবান কোন বস্তু। দৌড়াতে গিয়ে পায়ের কয়েক জায়গায় ছিলে গেছে, রক্ত ঝরছে সেখান থেকে। কিন্তু মেয়েটার সেদিকে খেয়াল নেই, সে দৌড়াচ্ছে প্রাণপণে.....
"মেঘ বিষাদের গল্প" বইটিতে লেখা শেষের কথা: গল্পটা শাওন, বাদল কিংবা বৃষ্টির। কিংবা, রেনু, মিন্টু, রিন্টুর। কিংবা হায়দার আলীর। কিংবা জসিম, কিংবা মুসাফির মান্নানের। কিংবা ছােট্ট নিধির। গল্পটা হয়তাে আনন্দের। মেঘ বিষাদের গল্প শরীফুল হাসানের ভিন্ন স্বাদের একটি উপন্যাস।
অত্যন্ত সাধারণ জীপনযাপনে অভ্যস্ত ইফতির জীবনটা আকস্মিক বদলে যায় একটি ঘটনায়। সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাবার পথে সাক্ষি হয়ে যায় ভয়ঙ্কর এক অপরাধের। কী করবে সেটা ঠিক করার আগেই জড়িয়ে পড়ে সে। একদিকে নষ্ট রাজনীতির ক্ষমতায় মদদপুষ্ট ক্ষমতাবান প্রতিপক্ষ, অন্যদিকে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার দুশ্চিন্তা-এমন অবস্থায় সবকিছু নির্ভর করছে একজন সাধারণ সাইকেল আরােহীর ব্রেক, পেডাল আর গতির ওপরে। আরােহীর আসনে আপনাকে স্বাগতম। দেশের অন্যতম প্রভাবশালী পরিবারের একমাত্র ছেলেকে ব্ল্যাকমেইল করতে গিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনে দুই যুবক। ঘটনার ধারবাহিকতায় তাদের সাথে জড়িয়ে পড়ে আরাে অনেকেই। একটি অপরাধের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় আরাে অপরাধ। কিছু মানুষের ভুল-ভ্রান্তি, লােভ-লালসা আর অপরাধের বিস্তৃত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় এক জটিল সমীকরণের-যে-সমীকরণের সমাধান নিহিত আছে অন্ধ প্রহর-এ।
এই কাহিনীর শুরু কয়েক হাজার বছর আগে। প্রখ্যাত শিল্পপতি আজমত উল্ল্যাহ’র একমাত্র ছেলে ওয়াসিফ উল্লাহকে নৃশংসভাবে খুন করা হলাে। লাশ ঘিরে বিচিত্র সব আঁকিবুকি, একপাশে রাখা সুদৃশ্য চেয়ার,সামনে গামলা ভর্তি মানবরক্ত! কেসটার দায়িত্ব পড়ে সিআইডি’র ডিপার্টমেন্ট অব এক্সট্রাঅর্ডিনারি কেসেজ-এর উপরে। আড়ালে আবডালে সবাই আবজাব ডিপার্টমেন্ট বলে নাক সিঁটকায়। এই ডিপার্টমেন্টেরই একরােখা গােয়েন্দা রহমান জুলফিকার খুনির খোঁজে গলিঘুপচি খোঁজে বেড়ায়, তার সঙ্গি ক্ষ্যাপাটে কনসালটেন্ট শাহজাহান ভূঁইয়া। এ আখ্যানের আরেক চরিত্র বিলুপ্তপ্রায় ধর্মীয় সংঘটন অ্যানশিয়েন্ট অর্ডার অব দ্য সেক্রেড মাউন্টেনের প্রধান ধর্মগুরু হাইঞ্জ বেকারের উপর কালাে আলখাল্লাধারীরা হামলা চালায়, রক্তবন্যা বয় আশুগঞ্জের এক হােটেলে। হােটেলের দেয়ালে আঁকা দুর্বোধ্য সিম্বল আর তারচেয়েও দুর্বোধ্য কিছু কথা। সুপ্রাচীন এক বইয়ের খোঁজে হন্য হয়ে ঘুরছে এক গােলাপি টাইধারি। পরনে স্যুটকোট, কাঁধে গলফ ব্যাগ। যেখানেই যাচ্ছে বইয়ে দিচ্ছে রক্তের নহর। এদিকে একের পর এক খুন করে যাচ্ছে ম্যাড উগ নামের এই ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার। হাজার বছর আগে যে কাহিনীর গুরু তার সফল সমাপ্তি কী করা ঘটবে? নাকি আঁধারে ছেয়ে যাবে ধরণী?
এ এক অদ্ভুত দ্বীপ। এখানে যারা আসে তারা জানে না কিভাবে চলে এলাে, কেন চলে এলাে। এই দ্বীপের সব বাসিন্দাই বন্দি এক অদ্ভুত দানবের কাছে! এক আবর্তের মধ্যে পড়ে মানুষগুলাে ঘুরপাক খায়, নিঃশেষিত হয়। কিন্তু এখান থেকে বের হবার পথ কারােরই জানা নেই। তারপরেও কেউ কেউ চেষ্টা করে, মুক্তি পেতে চায় এই বন্দিদশা থেকে। কিন্তু মুক্তি কি এতই সহজ? তার দেখা কি মেলে?
সাড়ে চার বছর ধরে কোমায় পড়ে থাকা এজেন্ট বাবুকে জাগানাের মানে একটাই-আকাশ ভেঙে পড়েছে দেশের মাথায়। ফেল মেরে গেছে বাকি সব এজেন্ট। আসলেই তাই। বাংলাদেশের বুকে বসে একটা ওয়েবসাইট খুলে গােপন নথি ফাস করতে শুরু করেছে সিআইএ’র হুইসলব্লোয়ার এজেন্ট কার্ল সেভার্স, আর তাকে থামাতে সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে গােপন সংস্থা দ্য অক্টোপাস। নানান দেশের সেরা এজেন্টদের একের পর এক পাঠিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে, তাদেরকে ঠেকানাের দায়িত্ব বাজিকর বাবুর। টেক্কা দিতে হবে ভারত আর পাকিস্তানের বাজিকরদের সাথেও। এর ওপরে আছে কার্ল আর সাব্বিরকে খুঁজে বের করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাবার ঝক্কি, প্রধানমন্ত্রির ওপরে দিনে দুপুরে করা হামলা ঠেকানাে। রহস্যময় এক পঙ্গু সুপার জিনিয়াস মাস্টার সিফাতের বুদ্ধিতে কাজ করতে হবে ওকে, যার স্ট্র্যাটেজিতে করা ইউক্রেন মিশন ব্যর্থ হয়েছিলাে ভয়ানকভাবে। আসলে কি চায় মাস্টার সিফাত? একের পর এক বিপদে ঠেলছে কেন সে বাবুকে? এমন কোনাে গােপন প্ল্যান কি তার আছে যেটার কথা শুধ সে-ই জানে? এদিকে একা গােটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্রুসেডে নেমেছে সিআইএ'র সেরা এজেন্ট ট্রাভিস আরভাইন। কেন? এমন কি হয়েছে যে, তার মত দেশপ্রেমিক পাল্টে গেছে। সবচেয়ে বড় দেশদ্রোহিতে? আর সত্যিই কি ইউক্রেন মিশনের সবাই মরে গেছে? তাদের কেউ ফিরে আসবে না। অতীতের সব হিসেব চুকিয়ে নিতে সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা কি? নাবিল মুহতাসিমের জনপ্রিয় ‘বাজিকর ট্রিলজি’র দ্বিতীয় আখ্যান বাজি পাঠককে রুদ্ধশ্বাস একটি গল্প উপহার দেবে।
‘সাম্ভালা’ একটি রহস্য-যে রহস্যের খোঁজে হন্যে হয়ে উঠেছে কিছু মানুষ। সত্যি কি এর অস্তিত্ব আছে? কেউ কি এর খোঁজ পেয়েছে শেষপর্যন্ত? ছােট একটি গ্রামে কাহিনীর সূত্রপাত। ইতিহাস এবং বর্তমান হাত ধরাধরি করে এগিয়ে গেছে সহস্রাব্দ প্রাচীন এক রহস্যময় পরিব্রাজকের সঙ্গি হয়ে। ইউরােপ, মিশর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ হয়ে সুদূর তিব্বতে বিস্তৃত এর প্লট। অবশেষে রহস্যময় অভিযাত্রীর সাথে যােগ হয় বর্তমানকালের এক যুবকের ছুটে চলা, যার পেছনে ধাওয়া করছে তার বন্ধুর হত্যাকারী শয়তান-উপাসকের দল। প্রাচীন সেই পথিক কি দেখা পেয়েছে ‘সাম্ভালা’র?
প্রতিদিন কত জনের লাশই তাে পাওয়া যায় ঢাকা শহরে, তাদের প্রত্যেকেই দুর্ঘটনার শিকার-ইচ্ছেকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত। ইন্সপেক্টর রাহাত আজিমের কাজই হলাে এ ধরণের দুর্ঘটনাগুলাের সুরাহা করা। অপরাধিকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু এবারের লাশটা একটু ভিন্ন, কপালে তিনটা পাখির ছবি আঁকা। তদন্তে নেমে গােলকধাঁধায় ঘুরতে লাগলাে সে, মিলছে না কোনাে সূত্র। এদিকে নিয়মিত বিরতিতে সেই অদ্ভুত চিহ্নসম্বলিত লাশের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে কি সবার মাঝে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভয়ঙ্কর কোনাে সিরিয়াল কিলার? সে প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে যেতে হবে সুদূর অতীতে। পাঠক, কিছু ভয়ঙ্কর সত্য জানতে আপনি তৈরি তাে?
সিলিঙের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেল একটি লাশ। সবাই আত্নহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাইলেও মানতে রাজি নয় তরুণ সাব-ইন্সপেক্টর ফাইয়াজ। তদন্তে বেরিয়ে এল বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য। আট বছর আগের এক খুনের সাথে যােগসূত্র খুঁজে পেল সে, কিন্তু আড়াল থেকে কেউ একজন নাটাইয়ের সুতাে টেনে ধরেছে। অবসরপ্রাপ্ত হােমিসাইড ডিটেক্টিভ ফারুক আবদুল্লাহর দিন কেটে যাচ্ছিল কোনােমতে কিন্তু যেদিন সাব-ইন্সপেক্টর ফাইয়াজ তার দরজায় কড়া নাড়ল সেদিন থেকে অপরাধবােধ কুঁড়েকুড়ে খেতে শুরু করলাে তাকে। বৃদ্ধ বয়সে আবার নতুন করে নামল আট বছর আগের একটি অমীমাংসিত কেস সমাধানে। কিন্তু সবকিছু যেন একটা লুপের ভেতরে পড়ে গেছে। কোনাে উত্তর মিলছে না। আবির আহমেদ, রিয়ান খান, লাবনী শারমিন, ফারজানা আলম-সবাইকে একই চক্রে নিয়ে এসেছে আট বছর আগের সেই খুনটি, যেখানে এদের যেকোন একজন ছাড়া চক্রটি অসম্পূর্ণ। সবার কাছে এ যেন এক অস্পৃশ্যতা...যা শুধু অনুভব করা যায় কিন্তু ধরা যায়। কিভাবে শেষ হবে এই চক্র? তরুণ বয়সে যা পারেননি বৃদ্ধ বয়সে কি তা পারবেন প্রাক্তন হােমিসাইড ডিটেক্টিভ ফারুক আবদুল্লাহ?
অন্ধকারে ছেয়ে আছে আকাশটা। এক কোণায় এক চিলতে বিদ্যুৎ ঝলসে উঠতেই সে অন্ধকারটা সাময়িক দূর হলাে বটে, কিন্তু পরক্ষনেই আরাে গভীর অন্ধকার ঘনিয়ে এলাে চারপাশে। দূরে কোথাও বজপাতের শব্দ কানে যেতেই লােকটার নীরবতা ভাঙলাে। লােকটা চুপচাপ বসে আছে গম্ভীর মুখে। ঠোঁটে থাকা সিগারেটের ধােয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে ঘরের ভেতরটা। শ্যামলীর একটু ভেতরের দিকের এক ভবনের চারতলার এই ঘরটি অন্ধকার হলেও, জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে রাস্তার নিয়ন বাতির এক চিলতে আলাে তার মুখে এসে পড়ছে। সে আলাে-ছায়ার মাঝে লােকটাকে আরও রহস্যময় লাগছে। - অবশ্য তার জীবনটাও কম রহস্যপূর্ণ নয়। কপালের কুঁচকে থাকা চামড়ার ভাঁজে ফুটে ওঠা কয়েক বিন্দু ঘাম। সে কিছু ভাবছে। মনের ভেতর জেগে থাকা এক অদৃশ্য ঘড়ি যেন তাকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, সময় আসছে। আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। তারপরই শেষ হবে তার এ অপেক্ষার। সাইড টেবিলে রাখা মােবাইল ফোনটা বেজে উঠতেই চোখ মেলে তাকালাে সে। হাত বাড়িয়ে ফোনটা রিসিভ করলাে। তারপরে আর কোন কথা না বলে সে চুপচাপ কিছুক্ষণ শুনে গেল অপরপ্রান্তের লােকটির বলা কথাগুলাে। “ওকে! এবার তাহলে ধামাকা হােক, বড় ধামাকা! খােদা মেহেরবান!” নিচু, ভরাট কণ্ঠে কথাগুলাে বলে কিছুক্ষণ পর ফোনটা রেখে দিলাে সে। কণ্ঠে আবেগ গােপন রাখতে পারাটা তার বহুদিনের অভ্যাসের ফল। লম্বা, ছিপছিপে গড়নের মাঝবয়সি লােকটার পরনে একটি কালাে শার্ট আর খাকি কালারের পায়জামা। সাধারণ মানুষ থেকে তাকে আলাদা করে চেনাটা কষ্টকর। তবে তার তীক্ষ্ণ চোখে যে অসীম বুদ্ধিমত্তা আর হিংস্রতার ছায়া, সেটাই তাকে আলাদা করে দেয়। ফোন থেকে সিমটা খুলে ফেলে টেবিলের উপর রেখে হেটে গেল জানালার কাছে। পর্দা কিছুটা সরিয়ে নিচে তাকালাে। ঢাকার রাস্তায় মানুষের নিত্য চলাচলের ব্যস্ততা দেখছে সে। আজকের সন্ধ্যার এই ইলিশেগুঁড়ি বৃষ্টিকেও যেন তারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে ব্যস্ত। সবাই ছুটছে অধরা কোন এক সুখের আশায়। আর কিছুক্ষণ পরেই, শহরের মানুষের সব ব্যস্ততা আর সুখ পরিণত হবে তীব্র শােক আর আতংকে। সে কথা ভাবতেই লােকটার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলাে। খুব সূক্ষভাবে তাকালে বােঝা যায়, সে হাসিতে লুকিয়ে আছে এক ভয়াবহ পৈশাচিকতা। লােকটির অধীনে যারা কাজ করছে, তারা আজ ব্যাপারটা দেখে খুব খুশি হতাে। কারণ, তারা সবাই জানে এই নিষ্ঠুর লােকটির মুখে হাসি দেখা কতটা কষ্টসাধ্য আর বিরল ব্যাপার। এমনকি, দেড় বছর আগে যখন এই লােকটার করা এক ভয়াবহ পরিকল্পনায় ঢাকা শহরের এক অভিজাত রেস্টুরেন্টে ঝরে গিয়েছিলাে ২২টি তাজা প্রাণ, তখনাে তার মুখে এমন খুশির চিহ্ন দেখা যায়নি।
ব্যাপারটা যখন শুরু হয় প্রচণ্ড ঘামতে থাকে তাহিতি। তার চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে, সেই সঙ্গে দেখা দেয় তীব্র মাথাব্যথা। পরক্ষণে চোখের সামনে ভেসে ওঠে কতগুলাে আবছা অবয়ব-দেখা মেলে নৃশংস কোনাে দৃশ্য কিংবা নারকীয় শব্দ। নিজের এই রােগের কথা কাউকে বােঝাতে পরে না সে, গভীর অসুখ বয়ে বেড়ায় মুখ বুজে। এদিকে ঢাকার বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভয়ঙ্কর এক সিরিয়াল কিলার, সুন্দরি তরুণীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করাই যার কাজ। হােমিসাইড ডিপার্টমেন্টের অফিসার অনিমেষ সূত্রধর বেকায়দায় পড়ে যায় এই সিরিয়াল কিলার কেসের কোনাে সূত্র খুঁজে না পেয়ে। অসুস্থ মানসিকতার একদল মানুষ একত্রিত হয়েছে, তাদেরকে ঘিরে রচিত হয়েছে। এই অন্ধকারের উপাখ্যান, যা একই সঙ্গে পৈশাচিক এবং রােমাঞ্চকর। কিংবা একে আপনি টান টান উত্তেজনাকর এক প্রতিশােধের কাহিনিও বলতে পারেন। প্রিয় পাঠক, এই অন্ধকার জগতে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
পথগুলো জীবনের। গল্পগুলো আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া নিত্য সময়ের। যেখানে যন্ত্রণা আছে, কষ্ট আছে, স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা আছে। নেই শুধু মুক্তি। “লাবণ্য কথা” আমাদের আক্ষেপের প্রতিচ্ছবি।
নিয়তিতে বিশ্বাস করেন!? বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, দেশখ্যাত থৃলার লেখক নওরোজ মোস্তফা ঠিকই নিয়তিতে বিশ্বাস করেন। আত্মজীবনী লিখতে গিয়ে এক পৃষ্ঠাও এগোতে পারছেন না সে। বন্ধুর জিতুর রহস্যময় মৃত্যুকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবে সেখানে? পঁয়ত্রিশ বছর আগে স্মৃতির আতলে হারিয়ে যাওয়া এই মৃত্যু-রহস্য ভেদ করতে মোহনগঞ্জে ফিরে আসে সে। ওটা কি খুন নাকি আত্নহত্যা-তা এখনো অজানাই রয়ে গেছে। ধর্ষণ মামলায় জড়িত থাকা মোল্লা, সাদেক, কাদের, শুভাশিসের সাথে জিতুর কী সম্পর্ক ছিল ? ভুমিদস্যু, রাজাকার জুম্মন বেপারি কি তবে সত্যিই প্রতিশোধ নিয়েছিল? লাশের পর লাশ আর রক্তের নদী পেরিয়ে কতদূর গেলে পাওয়ায যাবে এসব প্রশ্নের উত্তর -জানা নেই তার। নওরোজ মোস্তফা ডুবে যেতে থাকে পঁয়ত্রিশ বছর ধরে জমে থাকা রহস্যের স্তুপে...গভীর থেকে আরও গভীরে-যেখানে সত্যি মিথ্যা হয়ে যায়, আর মিথ্যা হয়ে যায় সত্যি
গোয়েন্দা নেই এ গল্পে, তবে রহস্য আছে। খুন আছে, তবে খুনি অজানা। আছে অনেকগুলো চরিত্র, কিন্তু তাদের মধ্যে সন্দেহভাজন কে? বইমেলার বাইরে ঘটে গেলো নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড। জনপ্রিয় লেখকের মৃত্যুতে কেঁপে উঠলো সারাদেশ। নানাজন দিতে শুরু করলো নানা মত, কিন্তু আসল মোটিভ কেউ বুঝতে পারছে না। নিজের অজান্তেই এই রহস্যে জড়িয়ে যায় আরেক তরুণ লেখক। লেখকচক্রের জটিল জগতের পুরনো বাসিন্দা সে, কিন্তু হারিয়ে যেতে থাকে বিপজ্জনক সব নতুন অনুসন্ধানে। ধীরে ধীরে তার সামনে স্পষ্ট হয় নিষ্ঠুরতার অবয়ব। তানজীম রহমান-এর চতুর্থ উপন্যাস অবয়ব আপনাকে নিয়ে যাবে আধুনিক থৃলার সাহিত্যিকদের অদেখা পৃথিবীতে। লেখক রাহাতের সাথে এই যাত্রায় উন্মোচিত হবে গোপন সব তথ্য, খুলে পড়বে মুখোশ, বদলে যাবে অনেক ধারণা। আর বইয়ের পাতায় আপনি খুঁজে পাবেন অন্যরকম এক রহস্যোপন্যাস।
বিখ্যাত বিজ্ঞানী ডক্টর কিজিলকে হয়তাে আপনারা কেউ কেউ চিনে থাকবেন, লােকটার বিচিত্র আবিষ্কারের নেশা আর উদ্যোক্তা হিসেবে অদ্ভুত সব কাণ্ডে নিজের। এবং অন্যদের জন্য বিপদ আর উটকো ঝামেলা বয়ে নিয়ে আসেন প্রায়ই। তেমন। কয়েকটি রােমহর্ষক অ্যাডভেঞ্চারময় ঘটনা এ বইয়ে বর্ণনার দায়িত্ব নিয়েছেন তার । সহকারী হাসান। এছাড়াও বইয়ে যুক্ত হয়েছে হাফ ডজনের বেশি নানা আমেজের বৈজ্ঞানিক কল্পগল্প; তার কোন কোনােটি গম্ভীর বা ডিস্টোপিয়ান, কোনটা একদমই হালকা মেজাজের। ভেন্ট্রিলােকুইস্ট এবং মিনিমালিস্ট-এর পর বাতিঘর প্রকাশনী। থেকে মাশুদুল হকের এই বৈজ্ঞানিক কল্পগল্পের জগতে আপনাদের আমন্ত্রণ।
বানার্ড শ বলেছেন, পৃথিবী আসলে একটা নরক, প্রাণিরা এখানে এসেছে অন্য। কোনো গ্রহ থেকে। এটা একটা রাশিয়ান কৌতুকও বটে। তবে এর ভেতরে চিন্তার খােরাক আছে। যেমন আছে যে ছিল অন্তরালে' উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে। চরিত্রগুলাের প্রহেলিকাময় জীবন এবং পৈশাচিক কার্যকলাপ কখনাে আপনার শরীরের পশম খাঁড়া করে দেবে, আবার কখনাে আপনি রাগে, ঘৃণায় ভাববেন, এ বইয়ের পাতায় যা কিছু ঘটছে তা অসুস্থ কোনাে জগতের আলামত, খােদ নরকের অধিপতির কারসাজি। সে যেন ছিনিমিনি খেলছে উপন্যাসের চরিত্রগুলােকে নিয়ে । কিন্তু সবগুলাে চরিত্রের সাথে যখন একাত্ম হয়ে উঠবেন, চমকে যাবেন, টের পাবেন বুকের মাঝে কোথাও যেন গভীর একটা ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, জীবনটাকে ফাঁকা আর অর্থহীন মনে হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও বেঁচে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন আপনি, গভীর যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ভাববেন, প্রতিশােধ...তীব্র একটা প্রতিশােধ নিতে হবে আপনাকেও! প্রিয় পাঠক, ডার্ক সাইকোলজিক্যাল গুলারের প্রহেলিকাময় জগতে আপনাকে | স্বাগত।