১৯১৮ সাল। বাবার মৃত্যুর দুঃখকে সঙ্গী করে মাধবগঞ্জে পা রাখে নসিব উদ্দেশ্য, সাহেব আলী নামের এক রহস্যময় বাউলের জীবন আর কর্ম সম্পর্কে জানা। কিন্তু সেই সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যের আড়ালেও অন্য কোন লক্ষ্য লুকিয়ে নেই তাে? একজন অঘােরনাথ তান্ত্রিক, মােস্তফা মাস্টার অথবা চায়ের দোকানদার সুবােধ ঘােষের গল্পে মৃত্যুর স্থান কোথায়? বিকলাঙ্গ এক বালকের তাতে কতােটুকুই বা ভূমিকা থাকতে পারে? নীল বিদ্রোহ থেকে ভাগ্যের ফেরে বেঁচে যাওয়া জাদুকর অ্যান্ডারসনের কল্যাণে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথমবারের মতাে অনুপ্রবেশ ঘটে সার্কাস নামক প্রথার রহস্যময় এক কটেজের গােড়াপত্তনও তার হাত ধরে ঘটেছিল; সাতান্ন বছর আগে। একদল ঠগির মৃত্যুর পর যেখানে ভয়ে কেউ পা বাড়ায়নি। ধরে নেয়া যাক, এই গল্পটা তারই। গল্পটা হয়ত ষোড়শ শতকের পর্তুগিজ নাবিক অ্যামেরিক গিরাল্ডাের। একই সাথে অনিন্দ্য সুন্দরী অনিতার গল্পও বলা যেতে পারে। দৃষ্টির অগােচরে লুকিয়ে থাকা নৈঃশব্দের জগতে যখন চেতনার প্রদান অনুভব করা যায়, নীলচে আলােতে ভাস্বর হয়ে আবির্ভাব ঘটে তার রঙ সরিয়ে সাদাকালাে হয় পৃথিবী।
থৃলার জগতের সর্বাধিক বিক্রিত ট্রিলজি ‘মিলেনিয়াম’ সিরিজের লেখক স্টিগ 'লারসনের জন্ম উত্তর সুইডেনের ফাস্টারবােথেন এলাকায় ১৯৫৪ সালে। পড়াশােনা সাংবাদিকতা বিষয়ে মিলিটারি সার্ভিস শেষ করে যাযাবরের মতাে বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন, এরপর কর্মজীবনের পুরােটা সময় কাটিয়েছেন একজন নফিনান্সিয়াল ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার হিসেবে। এজন্যে কর্পোরেট জগতে বিরাগভাজন ছিলেন তিনি। বেশ কয়েকবার তার 'প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। অকালে প্রয়াত এই লেখকের মৃত্যু হার্ট অ্যাটাকে হলেও রহস্যজনক কিছু কারণে তার মৃত্যুকে হতাকাণ্ড হিসেবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মৃত্যুর পরই জানা যায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনটি থৃলার উপন্যাস লিখে গেছেন লারসন। মিলেনিয়াম সিরিজ হিসেবে পরিচিত। এই তিনটি উপন্যাসের প্রথমটি দ্য গার্ল উইথ দি ড্রাগন ট্যাটু প্রকাশ হয়। লেখকের মৃত্যুর পর ২০০৮ সালে। ইউরােপে তুমুল জনপ্রিয়তা পেলে পরের বছর যখন এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় তখন সেটা পরিণত হয় ইন্টারন্যাশনাল বেস্টসেলারে। এখন পর্যন্ত তিনটি বইয়ের বিক্রি গিয়ে ঠেকেছে প্রায় এক বিলিয়ন কপিতে!
অনভিপ্রেত জটিল এক রহস্যের জালে জড়িয়ে গেল প্রত্নতাত্ত্বিক রাশাদ এবং জয়িতা। প্রাচীন পুঁথির সোঁদা ঘ্রাণে ভেজা অদ্ভুত এক ঐতিহাসিক স্মারকের পেছনে ছুটে চলেছে সমস্ত ঘটনা প্রবাহ। যেখানে শত সহস্র শতাব্দি ধরে সত্যের মহীরুহ ঢেকে দিয়েছে ধীরে ধীরে জমতে থাকা অসত্যের আগাছা। ‘দগ্রীব' এক ঐতিহাসিক রহস্য-রােমাঞ্চ আখ্যান। প্রাচীন কথকতার তমসা ভেদ করে দ্ব্যর্থহীন গন্তব্যের পথে বিস্ময়কর, অবিশ্বাস্য এক যাত্রা। ক্ষমতা, রাজনীতি আর ধর্মের ঘােলা কাঁচের নিচে দম আটকে থাকা প্রকৃত ঐতিহাসিক উপাখ্যান উদ্ধারের প্রচেষ্টা। পাঠক আপনাকে প্রহেলিকাময় অতীত এবং আপতিত বর্তমানের সত্য এবং অসত্যের মায়াজাল নিরূপণে স্বাগতম।
তানজিরুল ইসলামের জন্ম লালমনিরহাট জেলায়। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে যন্ত্রকৌশল বিভাগে অধ্যয়নরত আছেন। তিনি শৈশব থেকে লেখালেখির প্রতি আগ্রহ। ধূলার-সাহিত্যের প্রতি রয়েছে আলাদা ঝোঁক। অনুভূতিহীন’ নামক তার একটি সাই-ফাই গল্প প্রথম প্রকাশিত হয় কলেজ-ম্যাগাজিনে। এরপর বাতিঘর প্রকাশনীর থুলার গল্পসঙ্কলন-৪ ছাড়াও ‘গল্পের আসর’ এবং ‘বিসর্গ’সহ কিছু সঙ্কলনে তার বেশ কয়েকটি মৌলিক গল্প প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন থৃলার লেখক হারলান কোবেনের টেল নাে ওয়ান তার প্রথম অনুবাদ গ্রন্থ। 'প্রজাপতি বসে আছে মাত্রায় তার প্রথম মৌলিক সায়েন্সফিকশন উপন্যাস।
ভেবে দেখুন, বাংলাদেশের প্রথম নভােচারি আপনি, উৎসাহে টগবগ করছেন আর কদিন পরেই রকেটে চড়ে বসার জন্য। কিন্তু ঠিক এই সময়েই আবিষ্কার করলেন একটা খুনের দায়ে ফাঁসানাে হচ্ছে আপনাকে, স্পেস স্টেশনের বদলে হয়তাে যেতে হবে জেলে। লাশ গুম করবেন কিভাবে? আর স্পেস স্টেশনে যেতে পারলেও শান্তি নেই—আপনি জানেন না আমেরিকান এবং রাশিয়ান নভােচারিরা কি গােপন মিশন নিয়ে এসেছে, তারা মহাকাশেই একে অন্যকে মারার জন্য উঠেপড়ে লাগবে কিনা। অভিনব কোনাে বিধ্বংসী মারণাস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে কি তারা? কেনই বা আপনার এক সহকর্মী উদ্ভট আচরণ করতে শুরু করলাে? মহাকাশ থেকে আসা রহস্যময় কোনাে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কি? বিভং কাকে বলে? এদিকে, যে মহাশক্তিধর অশুভ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের হাত থেকে কয়েক দিন আগেই মুক্তি পেয়েছে মানুষ, সে আবার ফেরার চেষ্টা করছে না তাে? পৃথিবীব্যাপী তার সমর্থকরা কিসের আশায় বিশৃঙ্খলা চালাচ্ছে? সবচেয়ে বড় কথা, সবকিছু বিগড়ে গেলে কিভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে পৃথিবীতে ফিরবেন আপনি? সুপারন্যাচারাল-থলার শ্বাপদ সনে দিয়ে শুরু, তারপর স্পাইথুলার বাজিকর আর বাজি দিয়ে পাঠকপ্রিয় লেখক নাবিল মুহতাসিম এবার টান টান উত্তেজনার সায়েন্সফিকশন-থৃলার বিভং নিয়ে হাজির পাঠকের সামনে।
"নিত্য মাইডাস" বইটিতে লেখা শেষের কথা: লােভে পাপ, পাপে...? দ্বিধায় পড়ে গেছে হারুন। যে অপরাধ সে করেছে, তাড়া করছে তার কর্মফল। যে অলৌকিকতায় শুরু হতে পারত স্বপ্নময় দিনগুলাের, সেটাই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। নিজেই যখন নিজের শত্রু তখন পালানাের পথ কোথায়? লালসা, বিশ্বাসঘাতকতা আর সর্বোপরি প্রতিশােধের গল্প নিত্য। মাইডাস-এ স্বাগতম
কষে নেভি সিগারেটে একটা টান দিল তরিকুল ইসলাম। সাত সকালে সিগারেটে কষে টান দেওয়ার অনুভূতিই অন্যরকম। সিগারেটের ধোঁয়াটা যখন বুকে গিয়ে ঘ্যাচ করে আঘাত করে, তার সাথে সম্ভবত কোন ধরনের শান্তিরই তুলনা হয় না। সিগারেট ধরা হাতটা মুখের কাছে আনতেই দেখল তিরতির করে কাঁপছে। নার্ভাসনেস? গ্রাহ্য করল না সে। কারণ জানে কিছুক্ষণ পরেই সব শেষ হতে চলেছে। যে কাজটা সে করতে চলেছে সে তুলনায় হাত কাঁপাকাঁপি কিছুই না। ঠিক এই মুহূর্তে সে দাঁড়িয়ে আছে রমনা পার্কের ভেতর। অপেক্ষা করছে তার শিকারের। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজন মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছে। আজব জায়গা এই রমনা পার্ক। রাত দিন ২৪ ঘণ্টাই মানুষে গিজগিজ করে। এখন যেমন পুরাে পার্ক জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সকালের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এই মানুষগুলাের স্থান দখল করবে কতিপয় কপােত-কপােতি। বিকেলে মানুষ আসে পরিবার নিয়ে আর রাত গভীর হলেই পুরাে পার্ক দখল করে ফেলে রাতের পাখি। এক মুহূর্তের জন্য খালি হয় না পার্কটা। একজন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধকে দেখল বিশাল সাইজের ভুঁড়ি সামনে দুলিয়ে ‘হুশ...হুশ...' শব্দ করে দৌড়াতে দৌড়াতে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। তাকে অনুসরণ করছে বছর তেরাে-চৌদ্দ বছরের একটা ছেলে। সম্ভবত বৃদ্ধের নাতি। দুজনের ছােট্ট দলটা তাকে অতিক্রম করার সময় শুনতে পেল বৃদ্ধ তার নাতিকে সকালের হাঁটার উপকারিতা সম্পর্কে একটা নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিচ্ছে। মনে মনে বৃদ্ধকে চ-বর্গীয় একটা গালি দিল সে। “হালারপুত বুইড়া। জোয়ান কালে খেয়াল ছিল না এইসব কথা। তাইলে ত এই বিশাল গামলাডা আর হইতাে না। বুইড়া কালে কাম কাইজ না পাইয়া এহন শরীরের লাইগা মায়া বাড়ছে?” ভাগ্য ভালাে বৃদ্ধ বেশ অনেকদূর চলে গিয়েছে। তরিকুল ইসলামের গালিটুকু শুনতে পেল না। না হলে ঠিকই এতক্ষণে লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে যেত। একবার নিজের হাত ঘড়িটার দিকে তাকাল। ৭:২৫ বাজে। আর মাত্র পাঁচ মিনিট। এর মধ্যেই তার কাঙ্খিত শিকার এসে যাবে। বেশ কয়েকদিন ধরে রেকি করে জেনে নিয়েছে তার শিকার ঠিক সাড়ে সাতটায় এই জায়গাটা অতিক্রম করে। এক মিনিট এদিক সেদিক হয় না। আপাতত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মানুষজনের কাণ্ডকারখানা দেখছে তরিকুল ইসলাম। বেশিরভাগই বুড়ােবুড়ি আর ডায়বেটিসেরর রােগি। ঠিক কিছুক্ষণ পর তারা কিসের সাক্ষি হতে চলেছে তা যদি জানতাে! তবে এসব নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই তরিকুল ইসলামের। কাজটা তাকে শেষ করতেই হবে। যেভাবেই হােক। মনে মনে আরেকবার ট্রায়াল দিয়ে নিল; কিভাবে কী করবে। কোমরের কাছে অনুভব করল পিস্তলটার উপস্থিতি। একটু কি শিউরে উঠল তরিকুল ইসলাম? বােধহয়। কোনদিন কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরবে এটা কল্পনাও করেনি। একেই মনে হয় বলে : “বাস্তবতা কল্পনাকেও হার মানায়। নিজের উপর আস্থা নেই তরিকুল ইসলামের। তাই বলে কাজে ব্যর্থ হওয়াও চলবে না। সুযােগ একটাই। এটাকেই কাজে লাগাতে হবে। সিগারেটে আরেকবার টান দিতে গিয়ে দেখল : শেষ। পাশেই বসা হকারের কাছ থেকে আরেকটা সিগারেট নিল। আজকেই তাে খাবে। সামনে কোনদিন খেতে পারবে কিনা সেটা তাে বলতে পারছে না। সিগারেটে টান দিতে না দিতেই দেখল দূরে তার শিকারের অবয়ব আস্তে আস্তে ফুটে উঠেছে। শেষবারের মত নিজের ইতিকর্তব্য ঠিক করে নিল সে। শিকার যতই সামনে আসছে উত্তেজনায় তরিকুল ইসলামের হার্টবিট ততই বেড়ে যাচ্ছে। ছয় ফিট উচ্চতার সুঠাম দেহের শিকারের পাকা গোঁফের কোণা যখন দৃষ্টিসীমায় এল, তরিকুল ইসলামের মনে হল তার হৃদপিণ্ড লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসবে। শিকার তার থেকে এক মিটার দূরে থাকতেই সন্তপর্ণে কোমর থেকে পিস্তলটা বের করে আনলাে। পিস্তলের মৃদু ক্লিক শব্দে শিকার সচকিত হয়ে তার দিকে তাকাল। শিকারের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বিপদ আঁচ করতে পেরেছে। কিন্তু এত কাছ থেকে কিছুই করার ছিল না। বেরেটা ৯২ এফ এস নাইন এমএম পিস্তলের বুলেট শিকারকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল। একটু দূরেই পেছন পেছন আসছিল শিকারের দুই বডিগার্ড। কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না। গুলি ছোঁড়ার আগমূহুর্ত পর্যন্ত তারা কিছুই বুঝতে পারেনি। যতক্ষণে বুঝতে পেরেছে ততক্ষণে চারটা বুলেট বিধেছে শিকারের শরীরে। যাকে বলে ক্লিন ডেড।
মন মেজাজ ভালাে থাকলে মােড়ের চা-দোকানি মান্নান মিয়া গল্প জুড়ে দেয়। গল্পটা এই মান্নান মিয়ার কাছ থেকেই শােনা। অনেক অনেক দিন আগের কথা, দুর্গম অরণ্যে এক দয়ালু সন্ত বাস করতেন। উনি ছিলেন এক ধন্বন্তরি চিকিৎসক। যে কোন রােগ সারাতে পারতেন। অসুস্থ কেউ উনার কাছে এসে খালি হাতে ফিরে যেত না। কিন্তু একটা জিনিস উনি সারাতে পারতেন না, সেটা হলাে মৃত্যু। মানুষের মরণশীলতা তাকে পীড়িত করতাে, ব্যথিত করতাে। জানতেন, মত্যর কাছে সবাই অসহায়। এক রহস্যময় গাছ খুঁজে পান তিনি। সন্তের মতে, গাছটি সহস্রাব্দ-প্রাচীন। মানবজাতির অভ্যুদয়ের আগে থেকেই আছে। কিন্তু কী সেই রহস্যময় গাছের মাহাত্ম? ঢাকা শহর জুড়ে কে জানি মানুষ খুন করে দেয়ালে এ্যাফিত্তি এঁকে যাচ্ছে-দুধ চা খেয়ে তােকে গুলি করে দেব। পত্রপত্রিকা উদ্ভট এক লেবেল সেঁটে দেয় খুনির-দুধ চা কিলার। পুলিশের সিনিয়র গােয়েন্দা রফিকুল ইসলামের কাছে খুনগুলাে এক বিরাট রহস্য। কে এই খুনি? কী চায় সে? এই দুর্বোধ্য এ্যাফিত্তির মানেই বা কী? বিদগ্ধ পন্ডিত ড. মেহবুব আরেফীন চৌধুরী হইচই ফেলে দেন দ্য ইকোনমিস্ট-এ চা বিষয়ক একটি আর্টিকেল লিখে-দ্য টি অব শ্যানং। সবার ধারণা ডক্টরের কাছে বিশাল এক রহস্যের চাবি আছে। চাবি নাও, খুলে যাবে অফুরন্ত সম্পদের ভান্ডার!
এক মাইথোলজিক্যাল মিস্ট্রি থৃলার, যার কাহিনি দানা বেঁধেছে বতর্দমান প্রেক্ষাপটে। প্রাচীন এক গুপ্তপুঁথির সূত্র ধরে দুই বন্ধু জড়িয়ে পড়ে হাজার হাজার বছরের লুকিয়ে থাকা এক অবিশ্বাস্য সত্যের সন্ধানে। ঐতিহাসিক সূত্র আর পৌরাণিক সংকেতের হাত ধরে এ গল্প আমাদের এনে দাঁড় করায় এক নতুন দিগন্তের সামনে। বর্তমানের এই আধুনিক কালে ফিরে আসে প্রাচীন সময়, ইতিহাস ও পুরাণের যুগ। এ কাহিনির ভূগোল বদলে গেছে বার বার--কখনও দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতার কলেজস্ট্রিট, রিষড়া, হেদুয়া, কসবা, র্মুর্শিদাবাদ কিংবা শিলিগুড়িতে। আর স্থান বদলের সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে গল্পের রহস্য। কাহিনির প্রত্যেক মোড়ে এক নতুন চমক অপেক্ষা করে আছে পাঠকের জন্য। চরিত্রগুলো এখানে পরিচিত মহলের কাছাকাছি থেকেও যেন মুখোশের আড়ালে। পাঠক এর প্রতিটি পাতায় খুঁজে পাবেন রহস্য-রোমাঞ্চ। প্রথম প্রকাশেই বইটি সাড়া জাগিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে, এবার বাংলাদেশের বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হলো।
রাতের অন্ধকারে গ্রাম থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে সালাম। নতুন জীবনের শুরুতেই পায় জমির ম্যাজিশিয়ানকে। জমির বুঝতে পারে জাদুবিদ্যা সালামের সহজাত ক্ষমতা। সে খবর দেয় শংকরকে, যে বহুদিন ধরেই এরকম কারো সন্ধানে ছিল! সালাম আবার পালায়। পালাতেই থাকে। মুরশেদ মিয়া একজন বৃদ্ধ মানুষ। ঢাকায় ফিরতে ফিরতেই আক্রান্ত হলেন পথে। বুঝতে পারছেন অনেকদিন পর আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে তার শত্রুপক্ষ। কিন্তু এতদিন পর কেন এই সক্রিয়তা? ওদের উদ্দেশ্য কী? দিল্লিতে তিনি ছিলেন এক গুপ্ত সংগঠনের সদস্য। অনেকদিন পর সেই গুপ্ত সংগঠনের একজন ঢাকায় পা রেখেছে। কিন্তু কেন?
আর্থোপােডা পর্বের প্রাণীরা জীবদ্দশায় কয়েকবার রূপান্তরিত হয়। তেলাপােকা খােলস বদলায়, নিচ থেকে পূর্ণাঙ্গ ঘাসফড়িঙ হয়, শুয়ােপােকা প্রজাপতি হয়। যেসব জীবের এমনতর রূপান্তর ঘটে তাদের বলা হয় মেটামরফিক জীব। কেমন হবে, যদি বলা হয় মানুষও একটা মেটামরফিক জীব? মানুষও খােলস বদলায়, রূপ বদলায়? অন্ধকাশপুর, লােকালয় থেকে বেশ খানিকটা দূরে নির্জন এক উপবন। এরই ঠিক মাঝামাঝি শতাব্দি প্রাচীন এক বাংলাে, যার প্রবেশদ্বারে শ্বেতপাথরে খােদাই করা-'দাঁড়াও পথিকবর!' এই বনাঞ্চলে হঠাৎ কেন বেড়ে গেল ইঁদুরের প্রকোপ? জানা যায়, এর সাথে জড়িয়ে আছে মেডিকেল কলেজের গা হিম করা এক অতীত। সব কিছু ধোঁয়াশা হতে শুরু করে যখন কাহিনিতে যুক্ত হয় আজারবাইজানের লুপ্তপ্রায় আদিবাসী গােত্রের এক গােপন প্রথা, পারস্যের এক রহস্যময় জাদুকর আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কলঙ্কজনক এক অধ্যায়ের সূত্র ধরে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া। এক গ্লোরিয়াস সাইকোপ্যাথ। এক অগ্নিদূর্ঘটনার কেসের দায়িত্ব পায় নাম না জানা তরুণ ডিটেক্টিভ। সে একলব্য হয়ে হন্যে। হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে তার দ্রোণাচার্য, ষাট থেকে আশির দশকে দেশ-মহাদেশ দাপিয়ে বেড়ানাে বাংলাদেশের ইতিহাসের চৌকসতম গােয়েন্দাকে। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেল সেই প্রবাদপুরুষ?। কাহিনি বাঁক নেয় যখন এই শ্বাপদ বনে পাওয়া যায় এক রূপবতী নারীর নগ্নদেহ। এই ছায়া ছায়া বনের শত শতবর্ষজীবী মহীরুহের ভিড়ে কে এই অহল্যা? মেটামরফিক নিশীথে এমনই এক রহস্যের গল্প, রূপান্তরের গল্প, রূপ বদলের গল্প!
২০১৯-এর বইমেলার শেষের দিকে নিজের গল্পগুলো এক মলাটে বন্দি করে `নিছক গল্প কিংবা আখ্যান' নামে প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু আমার কলকাতার প্রকাশক অভিযান পাবলিশার্সের মারুফ হোসেন এমন নামকরণে খুশি হতে পারেননি। বইটার ভূমিকা নিয়েও তার ছিল আপত্তি। ‘আপনি আপনার মতো গল্প লিখবেন...কৈফিয়ত দেবেন কেন!’--এমনই ছিল তার বক্তব্য। পরবর্তিতে গল্পগ্রন্থটি অভিযান থেকে প্রকাশ করার সময় তিনি জানালেন, ‘রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা’ নামটি দিতে চাইছেন। আমি এককথায় রাজি হয়ে যাই, কারণ আমারও মনে হয়েছে, এই নামকরণটি যথার্থ, আগেরটার মধ্যে তাড়াহুড়ো কিংবা অতিরিক্ত বদান্যতার ছাপ ছিল হয়তো! যাই হোক, অভিযান থেকে গল্পগ্রন্থটি প্রকাশ হবার পর উপলব্ধি করলাম, একই গল্পগ্রন্থ ঢাকা এবং কলকাতা থেকে দুই নামে, ভিন্ন প্রচ্ছদে প্রকাশিত হবার কারণে পাঠকমহলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত নেই, পরবর্তী সংস্করণটি হবে একই নামে, একই প্রচ্ছদে। তবে এবার গল্পের ধারাক্রমে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে; পুরনো একটি গল্পের পরিবর্তে যোগ করা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে লেখা নতুন একটি গল্প। এই গল্পগ্রন্থে আমার পরিচিত গণ্ডী থৃলার ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের গল্প রয়েছে।
আলবানাে শহরের ঘন বন ঘেঁষে শতাব্দি প্রাচীন লেপান্ত বাড়ি। এই বাড়িটিকে ঘিরে আছে রহস্য এবং বিভ্রান্তির ধুম্রজাল। বাড়ির নিঃসঙ্গ এক দম্পতি আর কুঁজো কেয়ারটেকারের সঙ্গে এক বাংলাদেশি গণিতবিদের কীসের শক্রতা? কোন বিশৃঙ্খলাকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে দৃঢ়প্রতীজ্ঞ এই ভদ্রলােক? রাতের আঁধারে আবির্ভূত রহস্যময় প্রাণীটি কায়া না কি মায়া? না কি কালােজাদুর সাধনায় নিয়ােজিত লেপান্তের বাড়ির মালেকিনের প্রতিরূপ? বেয়াত্রিচ, স্বর্গ এবং নরকের মাঝামাঝি থাকা অন্ধকারে আবিষ্ট এক বীভৎস জগত। যে জগত উন্মোচিত হলে বছরের পর বছর লােকচক্ষুর অন্তরালে থাকা এক অবিশ্বাস্য সত্যের মুখােমুখি হবে পাঠক। আলবা নেয়ার পর ইতালিয়ান পটভূমিতে লেখা তানিয়া সুলতানার আরেকটি উপন্যাস বেয়াত্রিচ।