ওই প্রবল ঝড় এসেছিল প্রায় সোয়া শ বছর আগে। এখন কোথায় সেই জাহাজ, সে-ঝড়ে যেটা হারিয়ে যায়? আর কোটি কোটি ডলারের হীরা? …আঁধার রাতে কঙ্গো নদীর এক পিয়ারে ভিড়ল পুরনো এক ধচাপচা জাহাজ। অস্ত্র পেয়ে খুশি হয়ে উঠল বিদ্রোহী-নেতা, ঠাণ্ডা মাথার জাত খুনি টমাস গাধাধারের দলের লোক গুলো। এখন হীরাগুলোও তাদের চাই। কিন্তু হাতে অস্ত্র পেলেই কি খুন করতে পারবে ওরা রানাকে? একটা কাজ শেষ হতে না হতেই রানার কাধে চাপল আরেক দায়িত্ব। কোথায় গেলেন বিজ্ঞানী আসিফ হায়দার চৌধুরি? কারা কিডন্যাপ করল তাঁকে? …ওই দ্রুতগামী ইয়টের ওরা কারা? খুন করতে চাইছে কাদেরকে? সাগরে দানবীয় সাপ খুঁজতে যাওয়ার আগেই একের পর এক বিপদ এসে জুটল। রানা পণ করল, এসব রহস্য ভেদ না করে ছাড়বে না। কিন্তু উপকূল থেকে দেড় শ’ মাইল দূর-সাগরে বিধ্বস্ত হলো লাইফবোট, হাড়ে হাড়ে টের পেল ও, এবার বাঁচার সম্ভাবনা নেই! অপরূপা কার্টা অস্টিনকে নিয়ে ডুবে মরতে হবে নির্ঘাত। এর পরেও কি রানার সঙ্গে যাওয়ার সাহস আছে, পাঠক?
ডুবসাঁতার দিয়ে সারফেসের কাছাকাছি পৌছুতেই বরফে ঠুকে গেল রানার মাথা। বিস্মিত হয়ে উপরে তাকাল ও, পরক্ষণে আঁতকে উঠল আতঙ্কে ভয়াবহ তুষার ঝড় জমিয়ে দিয়েছে জলাশয়ের উপরিভাগ— অন্তত চার ইঞ্চি পুরু হয়ে জমেছে বরফের আস্তর! ভেসে ওঠার কোনও উপায় নেই। আর্কটিকের পানিতে ডুবে মরতে চলেছে ও। আর তখুনি অনেক নীচে কী যেন একটা নড়ে উঠল ভুরু কুঁচকে সেদিকে তাকাল রানা। সাদাটে তিনটে আকৃতি… একটা ডুবোগুহা থেকে তীরবেগে বেরিয়ে এসেছে। পানির মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে ধীরে ধীরে উঠে আসছে অপরদিকে কে লক্ষ্য করে। রাক্ষুসে তিন গ্রেন্ডেল! হাঁ করা মুখের ভিতর চকচক করছে ধারালো দাঁতের সারি! ভয় পেল না রানা, চমকেও উঠল না, অদ্ভুত এক নির্বিকার ভাব ভর করেছে ওর মধ্যে। শান্ত ভঙ্গিতে মেনে নিল ভাগ্যকে। তাহলে ডুবে মরা কপালে নেই আর!
এত বড় বিপদে খুব কমই পড়েছে মাসুদ রানা। এত বড় অভিযোগের আঙুলও খুব কমই উঠেছে ওর বিরুদ্ধে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে ও। কী, চমকে গেলেন? আগে পুরোটা পড়ুনই না! ভয়ঙ্কর জটিল এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে ও। ওসামা বিন লাদেনকে পিছনে ফেলে দুনিয়ার সমস্ত মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টের এক নম্বরে উঠে এসেছে মাসুদ রানার নাম, ওর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে দুই কোটি ডলার! পালিয়ে বেড়াচ্ছে রানা, একা, আহত অবস্থায়। সাহায্য করার কেউ নেই। একটাই পথ সামনে-নিজের সেই নিষ্ঠুর রূপটা আরেকবার সবাইকে দেখিয়ে দেয়া। পাঠক, দমবন্ধ করে বসুন। শুরু হচ্ছে যুদ্ধ।
একটা খবর একই সঙ্গে কীভাবে ভাল আর মন্দ হয়, বলতে পারেন? ঠিক আছে, উদাহরণ দেয়া যাক। নাসার ডিপ স্পেস প্রোব ভয়েজার-টু রিসিভ করা হয়েছে। অত্যাশ্চর্য এক সিগ্নাল-ভিনগ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার অকাট্য প্রমাণ। সুসংবাদ, তাই না? কিন্তু খারাপ খবরটা হচ্ছে, ওটার ভিতর লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর কোড, যা আগামী চারদিন পর সারা পৃথিবীর কম্পিউটার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে। আর এর পিছনে যারা জড়িত, তারা কোনও ভিনগ্রহবাসী নয়, এই গ্রহের দু-পেয়ে জানোয়ার। এই মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে সভ্যতাকে বাঁচাতে হ্যাকিং, সাইবার-ক্রাইম আর সাইবার-টেররিজমের সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা অন্ধকার জগতে টু মারতে চলেছে মাসুদ রানা। কিন্তু কাজটা সহজ নয় মোটেই। উদয় হয়েছে ওর পুরনো শত্রু ডগলাস বুলক ওরফে বুলডগ। যে-কোনও মূল্যে রানাকে ঠেকাতে মরিয়া সে। রয়েছে অচেনা শত্রুর লেলিয়ে দেয়া ভয়ঙ্কর খুনীরাও। আগামী ৯০ ঘণ্টা নরক দর্শন করে ফিরবে রানা।
ক্লাইম্বার মাঝ-আকাশে ঘটে গেল রুদ্ধশ্বাস ডাকাতি। কিন্তু তারপরেই দুর্বৃত্তদের বিমান আছড়ে পড়ল রকি পর্বতমালার উপর, একশো মিলিয়ন ডলার ভর্তি তিনটে বাক্স হারিয়ে গেল উঁচু-নিচু পর্বতশৃঙ্গের মাঝে। বেতারে পাঠানো হলো সাহায্যের আবেদন। আবেদনে সাড়া দিল দু’জন উদ্ধারকারী। ওরা এলেই আটক করা হলো তাদের। বাধ্য করা হলো ডলার-ভর্তি বাক্স খুঁজে বের করতে। কাজ শেষ হওয়ামাত্র খুন করা হবে ওদের। কিন্তু উদ্ধারকারীদের একজনের নাম মাসুদ রানা, সেটা ওদের জানা ছিল না। মরুস্বর্গ কোথায় ওই ক্যাসিনো? সব দেশের সিক্রেট সার্ভিস খুঁজছে ওটাকে। কেন? গোটা দুনিয়ার লেজে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এক ভয়ানক দুবৃর্ত। ওই ক্যাসিনো থেকেই নাকি আসছে সেই ড্রাগ। একবিংশ শতাব্দীর অভিশাপ। পাগল হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্বের তরুণ-যুবা। এমন নেশা যে, একবার নিলে কী মরলে! আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে ওরা ড্রাগ না পেলে। শুধু ঢাকা শহরেই গত ছয় মাসে দেড় হাজার অ্যাডিক্ট খুন করেছে সতেরো হাজার নিরীহ মানুষকে। প্রথম সুযোগেই ঢুকে পড়ল রানা ওই ক্যাসিনোয়। জানে না, ও শিকার না শিকারী ।
প্রিয় পাঠক, মাসুদ রানার সঙ্গে আরও একবার সুমেরু অভিযানে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আপনাকে। এবারের গন্তব্য—আর্কটিক সার্কেলের সাড়ে পাঁচশো কিলোমিটার উত্তরের নামহীন এক বরফ-দ্বীপ। দর্শনীয় অনেক কিছুই পাবেন ওখানে। দ্বীপের গভীরে আছে গোপন এক প্রাচীন গবেষণাগার… ভিতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে অসংখ্য মানুষের লাশ! আরও কিছু চাই? পাবেন। গবেষণাগারের পাশে, জমাট বাঁধা বরফের ভিতরে রয়েছে পঞ্চাশ হাজার বছর ধরে ঘুমিয়ে থাকা একদল হিংস্র, রাক্ষুসে, প্রাগৈতিহাসিক দানব! এবে রওনা দেবার আগে জানিয়ে রাখা ভাল, ভাল করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। দ্বীপের দখ। নেবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে মার্কিন সরকার। খবর পেয়ে সাবমেরিন নিয়ে রাশান এক রিয়ার অ্যাডমিরাল আসছেন ওটাকে নিউক্লিয়ার বোমা মেরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। শুধু তা-ই নয়, শীতনিদ্রা ভেঙে খুব শীঘ্রি জাগতে চলেছে। রাক্ষুসে দানবের দল! ভীষণ খিদে ওদের পেটে। বুঝতেই পারছেন, যেতে হবে নিজ ঝুঁকিতে। রানা অবশ্য থাকছে আপনার সঙ্গে তবে… ওর নিজেরই তো.. ভাল করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।