দুষ্প্রাপ্য এক কালো চিতা আঁধার রাতে বতসোয়ানার বিপদসংকুল কালাহারি মরুভূমি ধরে নিঃশব্দে ছুটছে। টোপ বানানো হয়েছে পরমাসুন্দরী জুলজিস্ট ডোরা ডারবিকে। ফাঁদে আটকা পড়েছে মাসুদ রানা, এখন ওকে মোগলদের সঙ্গে খানা খেতে হবে। টেরোরিস্টদের গ্রুপটাও ছুটে এল, রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে হলেও সফল করবে নিজেদের ষড়যন্ত্র । ‘তোমাকে ভালবাসি, তাই তোমার বিপদ শুনে স্থির থাকতে পারিনি, রানাকে শুধু এই কথাটি বলার জন্যে ছুটে এল মিষ্টি কোমল মেয়ে ইভা পুনম, কিন্তু না এলেই ভাল হােত। সন্ত্রাসী ডেকা বারগাম এবার অগ্নিমূর্তি ধারণ করে নিজেই হাজির হলো রণক্ষেত্রে। ফুয়েল নেই, রসদ নেই, সঙ্গীরাও হারিয়ে গেছে-কোণঠাসা রানা আঁধার দেখছে চোখে।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের খুদে একটি দ্বীপ, মুমুরা। তার অধিবাসীরা পাচেক ‘অসভ্য সহ অকস্মাৎ ধ্বংস হয়ে গেল একদিন। পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। জানা গেল, এ ধ্বংসযজ্ঞের জন্যে দায়ী একটি পারমাণবিক বোমা, এবং সেটির আবিষ্কারক একজন বাংলাদেশী পরমাণু বিজ্ঞানী। যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিয়ে ছুটল মাসুদ রানা। জড়িয়ে পড়ল ভয়ঙ্কর মরণপণ লড়াইয়ে।
মধ্যপ্রাচ্যের তেল-সমৃদ্ধ দেশগুলোকে গ্রাস করতে চলেছে। পশ্চিমা দুনিয়া। প্রস্তুতির কাজ শেষ। এমন সময় মাসুদ রানার হাতে এল ওদের পরিকল্পনার নীল নকশা। পৌছে গেল ওটা বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের চিফ মেজর জেনারেল (অবঃ) রাহাত খানের হাতে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে এমন কয়েকটি দেশের সিক্রেট সার্ভিস চিফের সঙ্গে বসে তৈরি করলেন তিনি পাল্টা পরিকল্পনা। প্রস্তুত রইল এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের সেনাবাহিনী ঠিক হলো: ইজরায়েলের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হবে মার্কিন পারমাণবিক মিসাইল। ডাক পড়ল মাসুদ রানা, সোহেল আহমেদ, লিউ ফু-চুং, অনিল চট্টোপাধ্যায়, আসি ও উর্বশী দাসার। ওদের সঙ্গে সেই ধচাপচা জাহাজে করে চলেছে আরও অনেকে। জাহাজ কিন্তু আপনার খুবই চেনা… স্বর্ণ-বিপর্যয় সেই মার্ভেল অভ গ্রিস! পাঠক, এই আত্মঘাতী মিশনে যাবেন ওদের সঙ্গে?
অপারেশন বসনিয়া বসনিয়া বাহিনীর এক বিশ্বাসঘাতক কর্নেল হাত মিলিয়েছে সার্বদের সাথে, দখল করে নিয়েছে মুসলিম বাহিনীর মূল অস্ত্র-ঘাটি-বসনিয়ার মানচিত্র বদলে দিতে চায় ওরা। মানবিক সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিয়ে ছুটল মাসুদ রানা। ওর সাথে যোগ দিল গগল ও বুরুজ আলি। টার্গেট বাংলাদেশ পাগলা কুকুর বললেই হয়, মিডিয়া সম্রাট ম্যাডক ফাউলার আগামীকালের খবর আজকের বলে চালাবার অপতৎপরতায় মেতে উঠেছেন। সঙ্গে আছে কবির চৌধুরীর ছেলে টেকনো-টেরোরিস্ট খায়রুল কবির আর জার্মান কিলিং মেশিন ডিক মেনাচেম।
পালিয়ে বেড়াচ্ছে মাসুদ রানা। সি.আই.এ এবং জিওনিস্ট ইন্টেলিজেন্সের মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলছে ওর মাথার ওপর। কদিন বিশ্রাম নেবে মনে করে আশ্রয় নিল সে বন্ধু রেমারিকের ওখানে, ইটালীতে। তারই সুপারিশে দেহরক্ষীর চাকরি নিল ইটালীর এক ধনী পরিবারে। সেখানে ছোট্ট একটি মেয়ে মিষ্টি একটা গান উপহার দিল রানাকে। দিয়েই চিরবিদায় নিল এ পৃথিবী থেকে। খুন করেছে ওকে কিডন্যাপাররা। কিছুর সাথে নিজেকে জড়াবে না প্রতিজ্ঞা করেছিল রানা; কিন্তু কখন যে ওকে জয় করে নিয়েছিল কিশোরী মেয়েটা, টেরই পায়নি। এখন আর ঘুমাতে পারে না ও। দাউ দাউ করে জ্বলছে বুকে প্রতিশোধের আগুন
ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিল মাসুদরানা-বাড়াল সহযােগিতার হাত। যেতে হলাে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে, এক বিশেষ মিশন নিয়ে-উদ্দেশ্য, ওখানকার কয়েকটি দ্বীপের আশপাশের গভীর সমুদ্রে তল্লাশি চালিয়ে খুঁজে বের করবে অত্যন্ত মূল্যবান এক শিলাখণ্ডের আবিষ্কৃত মজুদ। রানা কল্পনাই করতে পারেনি এ-কাজ করতে গিয়ে কত দুঃখ ছিল কপালে । একদিকে শত্রুপক্ষ, অন্যদিকে রুদ্র প্রকৃতি, ফ্যালকন আইল্যান্ড চারদিকে একের পর এক বিস্ফোরিত হতে শুরু করেছে অসংখ্য ডুবাে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ । ফাদে আটকা পড়ে গেছে জাকারান্ডা-দিশে হারিয়ে ফেলেছে মাসুদ রানা।