এক কাজে গিয়ে জড়িয়ে গেল ওরা আরেক ঝামেলায়। প্রলয় ঘনিয়ে আনছে ভয়ঙ্কর এক উন্মাদ বিজ্ঞানী। কাজে নেমেছে তার অদ্ভুত বিপজ্জনক কাল্ট। চাইছে বিশ্বের আশি ভাগ মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতে! হাতে অমোঘ মারণাস্ত্র! রানা ও তার বন্ধুরা বুঝল, মানব সভ্যতা বাঁচাতে চাইলে এখনই সময়। কাজে নেমেই টের পেল ওরা কী ভয়ঙ্কর ফ্যানাটিক একটা দলের বিরুদ্ধে লেগেছে। ভীষণ বিপদে পড়া রানা, সোহেল, ফু-চুং, উর্বশী, স্বর্ণা। এক পর্যায়ে বলল সোহেল, আর উপায় নেই রে, এখন দরকার ইজরায়েলের তৈরি জিব্রাইলের মুষ্টি। কিন্তু তা পেতে চাইলে মস্ত ঝামেলা পোহাতে হবে। তাই করল ওরা, মহাশূন্যে চলে গেল পৃথিবী রক্ষা করতে। পারবে ওরা? এদিকে তো চারদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে মৃত্যু।
মুক্তিপণ আদায় করবে বলে মালবাহী এক ফ্রেইটার দখল করেই বোকা বনে গেল সোমালি জলদস্যুরা। জাহাজে ভূত আছে। হলভর্তি লোক গায়েব হয়ে যাচ্ছে চোখের পলকে। এই আছে, এই নেই। ভৌতিক জাহাজ মার্ভেলকে হাইজ্যাক করে নিয়ে গেল ওরা ওদের ঘাটিতে। তারপর?…একটা কাজ শেষ হতে না হতেই রানার কাধে চাপল আরেক মহা দায়িত্ব। এখুনি জাহাজ নিয়ে ছুটতে হবে ত্রিপোলির পথে। শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে লিবিয়ার মরুভূমিতে ক্র্যাশ করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্লেন। ক্র্যাশ, না স্যাবোটাজ, না কি হাইজ্যাক? প্রধানমন্ত্রী বেঁচে আছেন তো? এটা লিবিয়ার অস্থির সময়ের কাহিনি। দ্রুত ফুরিয়ে আসছে প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির সময়। চলুন, রানার সঙ্গে গিয়ে দেখি আসলে কী ব্যাপার।
বন্দিশিবির থেকে অসহায় একদল মানুষকে নিয়ে ফিরছে রানা। ওদেরকে ধাওয়া করছে জঙ্গিদের ট্রাক, হেলিকপ্টার। তেড়ে আসছে সশস্ত্র বাহিনী। একের পর এক বাধা ডিঙাতে গিয়ে হাঁপ ধরে গেল রানার। উদ্ধার করা তো দূরের কথা, এখনও জানে না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে কোথায় বন্দি করে রেখেছে ওরা। ওদিকে সোহেল খুঁজছে শুকিয়ে যাওয়া নদীতে প্রাচীন সেই কাঠের জাহাজ। খুঁজছে ইমাম ইউনুস আল-কবিরের সেই গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া যেটা পাঠ করে শোনানো হবে সম্মেলনে। বিপদের পর বিপদ। অথচ হাতে সময় নেই। রানার মনে হলো, আর বুঝি সম্ভব হলো না প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধার করা! প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি আজই ঘোষণা দেবেন শান্তি মহাসম্মেলনের! চারদিক থেকে জাল গুটিয়ে এনেছে জঙ্গিরা! টিভিতে এখুনি দেখানো হবে: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মাথা কাটা পড়ার দৃশ্য! তা হলে কি পারল না রানা, হেরে গেল জঙ্গিদের কাছে?
পালানোর উপায় কোথায় রানা-ববির? গোবি মরুভূমি। চারদিকে ধু-ধু প্রান্তর, পাহাড়-টিলা, গিরি-সংকট, বালির উঁচু স্তূপ বা গভীর খাদ। খেয়ালী প্রকৃতিকে নিয়ে খেলছে কেউ। বড় বাড় বেড়েছে ওই জালাইর তেমুজিন। আগুন নিয়ে খেলছে ও! স্তব্ধ হয়ে এল মধ্যপ্রাচ্যের ক্রুড অয়েল রপ্তানি! হোঁচট খেল গোটা বিশ্বের অর্থনীতি! পাগল হয়ে উঠলেন তাবৎ রাজনীতিবিদ! মহাচিনকে পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসাতে চায় তেমুজিন। তার সামনে কোন সাহসে মাথা সোজা রাখছে রানা? সোহেল ও ববিকে নিয়ে আবার ঢুকল ও চেঙ্গিস খানের কম্পাউন্ডে। এমনি সময়ে খেপে উঠল প্রকৃতি। পড়ছে একের পর এক লাশ! শেষে সমাধির ভিতর জালাইর তেমুজিন মুখোমুখি হলো রানা।
বৈকাল হ্রদের অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে গেছে মাসুদ রানা। তাই বলে পিস্তলটা রাখবে না সাথে? চিফের বারণ শুনে মস্ত ভুল করেছে ও। ওখানে জটিল এক ঝামেলায় জড়িয়ে গেল ওরা। কারা যেন ডুবিয়ে মারতে চায় রিসার্চ শিপের সবাইকে। প্রলয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশাল ঢেউ থেকে যাদেরক উদ্ধার করল ওরা, তাদেরই ভিতর রয়েছে কালনাগিনী! ঠিক সময়মত ফণা তুলল সে। কী করবে নিরস্ত্র রানা? চেষ্টা করেও তা বিজ্ঞানীদের কিডন্যাপ হওয়া ঠেকানো গেল না। এবার? বৈকাল হ্রদ ছেড়ে চলল ও মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোর। বন্ধু ববি মুরল্যাণ্ডকে নিয়ে ঢুকে পড়ল ভয়ঙ্কর এক উন্মাদের আস্তানায়। চেঙ্গিস খানের সমাধির ভিতর পরিচিত বিজ্ঞানীর লাশ নীরবে বলল, বাঁচতে চাইলে পালাও, রানা! এ বিরান মরুভূমিতে কোথায় পালাবে রানা-ববি? হিংস্র-বর্বর প্রহরীদের আদেশ দিয়েছে জালাইর তেমুজিন: লাশ চাই আমি ওই লোক দুটির!
সমস্যার যেন শেষ নেই, মস্ত বিপদের মোকাবিলা করছে রানা। …মরুভূমির ভিতর ডেভিলস্ ওয়েসিস কারাগার থেকে মুক্ত করতে 24. হবে প্রতিভাবান বাঙালি বিজ্ঞানী আসিফ হায়দার চৌধুরিকে। একের পর এক বাধার মুখে পড়ে রানার মনে হলো এবার হার মানতেই হবে বুঝি। কারাগারের ভিতর ঢোকা যত সোজা, তার চেয়ে এক শ’ গুণ কঠিন বেরিয়ে আসা। আসলে, বিজ্ঞানী আছেনই বা কারাগারের ঠিক কোন্ জায়গাটাতে? ওদিকে উন্মুক্ত হচ্ছে ভয়ঙ্কর এক খ্যাপা বিজ্ঞানীর নিষ্ঠুর পরিকল্পনা। অয়েল রিগ দখল করে লক্ষ লক্ষ টন ক্রুড অয়েল ফেলবে সে সাগরে… তৈরি করবে প্রচণ্ড শক্তিশালী এক ঝড়। ধ্বংস করে দেবে সে গোটা একটা শহর। প্রায় অসম্ভব তাকে রোখা। লাখ লাখ মানুষকে বাঁচাতে চাইলে থামাতে হবে ভয়ঙ্কর ওই ঝড়। কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব? এদিকে হাতে যে ফুরিয়ে আসছে সময়! সাগরের মাঝে পুরনো এক সুপারট্যাঙ্কারে কপ্টার থেকে নেমে পড়ল রানা, ঝড়ের ভিতর মুখোমুখি হলো সেই উন্মাদ বিজ্ঞানীর। কী হলো তারপর? …আর সোয়া শ’ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সেই হীরাগুলো?