আমাদের সমাজ ব্যবস্থার আলোকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্যের তুলনা করে ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে লেখা কয়েকটি রস-রচনা। এর কোনোটি গল্পের আকারে বলা প্রবন্ধ, কোনোটি প্রবন্ধের আকারে বলা গল্প, আবার কোনোটি গল্পের কাঠামোয় লেখা বৈজ্ঞানিক তথ্য। অথচ প্রতিটিতেই রসের আড়ালে লুকিয়ে থাকা গভীর চিন্তার খোরাকও প্রচ্ছন্ন। তাই পড়া শেষ হয়ে গেলেও পাঠকের মনে তার রেশ রয়ে যায়। যে-লেখাগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো পাঠকরা সাদরে গ্রহণ করেছেন ও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। পাঠক-সমালোচকরা এক কথায় লেখাগুলোকে ‘বৈজ্ঞানিক গলপ্রবন্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রচলিত সংজ্ঞায় বইটিকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি বলা যেতে পারে।
আশির যখন জাপানে গিয়েছিল, ও তখন ছাত্র। পুরো আলাদা একটা সংস্কৃতি থেকে সেখানে গিয়ে সে দেশের নানা কিছু দেখে ও স্বাভাবিকভাবেই অবাক হয়েছে। বিচিত্র বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত ঢঙে লেখা এই বইয়ের ছোট ছোট রচনাগুলো ওর সেই অবাক হওয়ার গল্প। জাপানি জীবনের নানা ব্যাপার দেখে ও শুধু একাই অবাক হয়েছে তা নয়, ওর স্বাদু চিত্তাকর্ষক আর আমেজি লেখার মৌতাতে পাঠক হিসেবে আমরাও যেমন কিছুটা অবাক হয়েছি। লেখাগুলো ছোট, মজাদার, বুদ্ধিদীপ্ত ও গতিশীল। বিচিত্র তথ্যে ভরা। লেখার এই প্রসাদগুণ দিয়ে আশির ছোট ছোট বেশ কিছু মানবিক গল্পের পাশাপাশি জাপানি জীবনের নানা পরিচয় ওখানকার মানুষের আত্মহত্যা, তাদের ভ,তে ফিউনারেলের পরিপাটি ব্যবস্থা, শ্মশান, কাস্ট সমস্যা, কুসংস্কার, সামাজিক শিক্ষা, ভাষা, মিডিয়া, এমনি হরেক বিষয়কে রমণীয় করে তুলেছে। দেশটিকে ও ট্যুরিস্টদের মতো বাইরে থেকে দেখেনি, দেখেছে একজন বিদেশি হিসেবে, যে বহুদিন সে দেশে থাকতে থাকতে নানা বাস্তব ও মানবিক অভিজ্ঞতায় ভরে উঠেছে। এ বই তারই উষ্ণ-সজীব বিবরণ। এ জন্য বইটিতে জাপানের অন্তর্জীবনের খবর মেলে। ২০০৫ সালে জাপানে বেড়াতে গিয়ে আমি ও দেশের ওপর একটা ভালো বই নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু বইটি পড়ে জাপান সম্বন্ধে আমি যতটুকু জেনেছিলাম, আশিরের 'জাপান কাহিনি' পড়ে জাপানকে যেন জেনেছি তার চেয়ে বেশি। এর কারণ, এ গল্প জাপানের একেবারে ভেতরের গল্প। লেখকের ব্যক্তিগত রসবোধ, চাহনি, বর্ণনাভঙ্গি একে প্রাণবন্ত করেছে। বইটি আমাকে জাপানের বাসিন্দা করে তুলেছে। পড়ার সময় মনে হয়েছে আমি নিজেই দেশটিতে আছি। সব পাঠকের হয়তো তা-ই মনে হবে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহর। মানুষ যেখানে সদা কর্মব্যস্ত। বাঙালি তাবাসসুম জীবনের নানা মোড় পেরিয়ে, বিচ্ছেদের দাহ সয়ে একসময় সেই মেলবোর্নেই চাচা- চাচির সংসারে থিতু হয়। যদিও তার স্বাচ্ছন্দ্যময় প্রবাসজীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে বিচ্ছিন্নতাবোধ আর একাকিত্ব। তবে এই অনুভূতিগুলোকে এক পাশে সরিয়ে রেখেই পথ চলে সে; যতক্ষণ না একটি ঘটনার অভিঘাতে সবকিছু উল্টেপাল্টে যায়। ২০১৯ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে এক মসজিদে পবিত্র জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন একান্নজন মানুষ। সে ঘটনার ধাক্কা এসে লাগে অস্ট্রেলিয়ায় তাবাসসুম আর তার পরিবারেও। মনের গভীরে জমে থাকা প্রশ্নেরা এ সময় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ফিরে আসে ফেলে আসা জীবন, ভালোবাসা ও সন্তান হারানোর স্মৃতি। টালমাটাল এই সময় তাকে জর্জরিত করে আত্মজিজ্ঞাসায়ও। হাতড়ে ফেরে সে তার আত্মপরিচয়। আর তখনই তার ফোনে একের পর এক রহস্যময় বার্তা ভেসে আসে অতীতের হাতছানির মতো। কে আছে ফোনের ওপাশে? কেউ কি তাকে খুঁজছে?
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি মেয়ে জেবুন্নেসা এই উপন্যাসে পাঠকের সামনে মেলে ধরে তার জীবনের একটা দিন স্মৃতি, স্বপ্ন, অনুভ‚তি, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং চারপাশের ছবি বুনতে বুনতে সে কথা বলে। গল্পের মঞ্চ মেলবোর্ন শহর ও সন্নিহিত সাবআরবান এলাকা জুড়ে। মেলবোর্নে এসে হোঁচট খাওয়া, বন্ধুত্ব, চাকরি ইত্যাদির পাশাপাশি সাহিত্যপাঠ তাকে সন্ধান দেয় নতুন এক দুনিয়ার। তার তীব্র প্রেম, শূন্যতা, অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির গল্প শোনায় সে। বইবাহিক মূলত পথচলার কাহিনি চলার পথে খুঁজে পাওয়া এবং চলতে চলতে হারিয়ে ফেলার গল্প।