রাতদুপুরে পলাশবাড়ি পৌছে বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে যায় অরিন্দম। জনবিরল বাজারে এমন কোনাে জায়গা নেই যেখানে রাতটা কাটানাে যায়। এদিকে তাপমাত্রা পারদের হিসেবে চড় চড় করে নামছে, ঘনীভূত হচ্ছে কুয়াশা, বুকে কাঁপন ধরাচ্ছে। রাতচরা পাখির ডাক। উদভ্রান্ত অরিন্দমকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে এক রহস্যময় বেটে মানুষ। অনেকগুলাে গলি-ঘুপচি পেরিয়ে লােকটা তাকে নিয়ে যায় আওলাদ মিয়ার হােটেলে, যেখানে অরিন্দমের মতাে আটকেপড়া আরাে পাঁচজন মানুষকে একাট্টা করা হয়েছে। হােটেলের মালিক আওলাদ মিয়ার চাওয়া খুব সামান্য প্রত্যেককে নিজের জীবনের এমন একটা গল্প বলতে হবে যেটা মােটাদাগে অদ্ভুত আর অস্বাভাবিক। গল্পে গল্পে সারা রাত উঠে আসে এমন সব ঘটনা, যেগুলাে মানুষ হিসেবে আমাদের অস্তিত্বকেই নাড়িয়ে দেয়। আওলাদ মিয়ার ভাতের হােটেল-এ পাঠককে স্বাগতম!
রবীন্দ্রনাথের সহধর্মিণী মৃণালিনীর আত্মকথনের ভঙ্গিতে লেখা এই উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর বিয়ের রাত থেকে শুরু করে নিজের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বামী রবিবাবুর সংগোপন জীবনের নানা কথা অকপটে তুলে ধরেছেন মৃণালিনী। সবলতা-দুর্বলতায় মেশা রবীন্দ্রনাথের জীবনের এক দীর্ঘ অধ্যায় আটপৌরে ভাষায় উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। পাশাপাশি উঠে এসেছে ভবতারিণী থেকে মৃণালিনীতে পরিণত হওয়া রবি ঠাকুরের সহধর্মিণীর চাওয়া-পাওয়া, পূর্ণতা-অপূর্ণতা এবং তাঁর নারীজীবনের হাহাকার-দীর্ণতার কথাও। এই উপন্যাস আমাদের কথাসাহিত্যের এক মাইলফলক-স্বরূপ সাহিত্যকৃতি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছায়াবলম্বনে দুটি ভিন্ন স্বাদের বড়ো গল্প। উভয় গল্পের পটভূমি একাত্তর, যদিও ঘটনার প্রকাশ বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। গল্পচ্ছলে এখানে প্রকাশিত হয়েছে একাত্তরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকার অন্তরঙ্গ চিত্র। সঙ্গে থাকল অধরা প্রেমের স্মৃতিভেজা এক আখ্যান।
১৯৬৪ সালে দাঙ্গার শিকার হয়ে সপরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মানস। জন্মভূমির প্রতি জন্মেছিল ঘৃণা, মুছে দিতে চেয়েছিল তার সব স্মৃতি। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সে নিউইয়র্কে, জাতিসংঘের সদর দপ্তরে। সেখানে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায় এই নিজের জন্মভূমির ভাগ্য নিয়ে বৃহৎ শক্তিসমূহের দড়ি-টানাটানি। নিজের অজ্ঞাতেই সে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ে দেশটির মুক্তি আন্দোলনে। উপলব্ধি করে রাজনীতি ও মানচিত্রের বিভেদে ছিটকে পড়লেও জন্মভূমির সঙ্গে তার সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন। ভাঙতে থাকে মানবিক সম্পর্কের ভুল-বোঝাবুঝি। আন্তর্জাতিক পটভূমিকায় রচিত হাসান ফেরদৌসের প্রথম উপন্যাস মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেরই এক প্রামাণিক কাহিনি।