এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে কেহই চির অমর নয়। মহান আল্লাহর বেঁধে দেয়া একটা নির্দিষ্ট আয়ু নিয়ে আমাদের সকলেরই পৃথিবীতে ক্ষণীকের ত্বরে আগমন। ক্ষণস্কালের এই আয় নিয়ে আমাদের সকলের জীবনই একই সমান্তরাল রেখায় প্রবাহিত হয়না। এই পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষকেই অনেক সংগ্রাম করে কষ্ট করে জীবন নির্বাহ করতে হয়। তাদের জীবনে সুখ চিরকাল অধরাই হয়ে থাকে। প্রকৃত নির্মল সুখ বলতে যা বোঝায় তা শতকরা ২/১ জনের ভাগ্যেই কিঞ্চিত জোটে। অথচ একটুখানি সুখের জন্য মানুষকে কতইনা পরিশ্রম করতে হয়। আলোচ্য 'নীলার ভালবাসা নিউইয়র্ক' গল্পের নীলা একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে শিক্ষিতা বুদ্ধিমতী তরুণী। তার জীবনটা তো অনেক সুখেই অতিবাহিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, অন্য আর দশজনের মতো তার জীবনেও বারবার নেমে এসেছে, কালিমার অমানিশা। আসলে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বদলাবার সাধ্য কারও হাতে থাকে না। উপরওয়ালার ইচ্ছা আর অনেক সময় চারিত্রিক হীনমন্যতা ও নানা লোভ লালসাই আমাদের আলোর পথ থেকে নিকষ কালো অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। মানুষ যা চায়, সেটা সে সহজে পায়না। অথচ যেটা চায়না, সেটাই অবলীলাক্রমে জীবনে এসে যায়। আর এটা নিয়তির নির্মম ও নিষ্ঠুর খেলা। নীলার মা-বাবাও চেয়েছিল, নীলার সারাটি জীবন যেন অনাবিল সুখের আলোয় ভরা থাকে। কিন্তু ভাগ্যের লীলা কি কখনও খণ্ডানো যায়? সহজ উত্তর, ভাগ্যের উপর কারও হাত নেই। তবে নিরলস ও সৎ পরিশ্রম থাকলে কিছুটা সুখ অবশ্য পাওয়া যায়।
কৈশোর ও যৌবনকালের রোমান্টিক সম্পর্কের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ নিয়ে রচিত একটি উপন্যাস। সাদা এবং কালো, অথবা ভালো এবং মন্দ, অথবা আলো এবং আঁধারের বাইরেও একটি জগৎ আছে। এর বিস্তৃতি মোটা দাগের সাদা ও কালোর চেয়েও অনেক বেশি, যার হদিস আমরা খুব কমই পাই। তেমনি মোহ বা ইনফাচুয়েশন থেকে ভালোলাগা এবং প্রেম-ভালোবাসার পার্থক্য করাও কঠিন। ফলে সৃষ্টি হতে পারে দুঃখ, ঘৃণা ও প্রতিহিংসার মতো পরিস্থিতি। বইটিতে এসবই বর্ণিত হয়েছে কয়েকটি চরিত্রের মাধ্যমে একটিমাত্র গল্পের কাঠামোয়। কাজেই ভালো-মন্দের তাত্ত্বিক বিচার ছাড়াই শুধু উপন্যাসের স্বাদ পাওয়া যাবে বইটিতে।
রায়হানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে। তার বাবা-মা অনেক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিল। কিন্তু তাদের মন সবসময় পড়ে থাকে বাংলাদেশে। রায়হানের বাবা-মা তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছেলে-মেয়ে বড় হলে সবাই মিলে দেশে চলে যাবে। রায়হানকে একারণে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য। দেশটা সম্পর্কে বাবা-মায়ের মুখে অনেক শুনেছে। কিন্তু কখনো আসা হয়নি। সম্পূর্ণ নতুন একটা দেশে রায়হানের নানা অভিজ্ঞতা হতে থাকে। যেই অভিজ্ঞতাগুলো তাকে ভাবতে শেখায়- এ কেমন সমাজব্যবস্থা। রায়হানের অভিজ্ঞতাগুলোই উঠে এসেছে এই বইতে।
‘আত্মহত্যার মৃত্যুদণ্ড’ উপন্যাসটি আমাদের সম-সাময়িক সমাজের প্রতিচ্ছবি। বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে বর্তমান সমাজ এবং সমাজ কাঠামো তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। উপন্যাসের মূল দুই চরিত্র ইভান এবং ফুয়াদ। এদের একজন পড়াশুনা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আরেকজন এরই মাঝে বিসিএস দিয়ে পুলিশ অফিসার হয়ে গিয়েছে। এই দুজনের সাক্ষাৎ হয় একটি অসফল আত্মহত্যার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে। সেই আত্মহত্যার কারণ জানতে গিয়ে উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্র সামনে চলে আসে। যেখানে আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা, চাকরি, সামাজিক মূল্যবোধ, রাজনীতি, প্রেম-ভালোবাসা কিংবা পারিবারিক সম্পর্কগুলোও সামনে চলে এসেছে। সমাজের সাধারণ মানুষের না-বলা গল্পগুলো উঠে এসেছে এই উপন্যাসের মাধ্যমে।
অনাথ বালিকা ফুলবানু বৃদ্ধ হজমি ওয়ালার খোঁজে জয়বাংলা আচার ঘরে ঢুকে পড়ে। উঁচু তাক থেকে একটি বয়াম ধরার সময় ওর হাতটি ফসকে গেলে ভেতরের পুরনো দরজাটি খুলে যায়। বন্দুকের ক্যাট ক্যাট শব্দের সাথে বারুদের গন্ধের ঝাপটা এসে নাকে লাগে। ফুলবানু আবিষ্কার করে এটি একটি যাদুকরী দরজা। এর ভেতর দিয়ে সে অনায়াসে ১৯৭১ সনে যাতায়ত করতে পারে। অন্য কেউ জানতে পারলে দরজার যাদু চলে যেতে পারে ভেবে সে তা গোপন রাখে। দরজার ওপারে, একাত্তরে, সে এক যুবকের দেখা পায়। মুক্তিযোদ্ধা যুবকটি ছিল শত্রুর হাতে বন্দি। পাকিস্তানিরা ওকে ভীষণ অত্যাচার করে। মুক্তি পেতে যুবকটি বালিকার সাহায্য চায়। সাহায্যের খোঁজে বেরিয়ে ফুলবানু পথে যুদ্ধ, পাকিস্তানিদের ধংসযজ্ঞ, এবং অত্যাচারের নমুনা দেখতে পায়। কিন্তু ফিরে এসে দ্যাখে আচার ঘরটির সাথে যাদুকরী দরজাটিও কেউ ভেঙে ফেলেছে। তাহলে কি ফুলবানু আর বন্দি যুবকের দেখা পাবে না? না পেলে তো কেউ ওর যাদুকরী ভ্রমণের কথা বিশ্বাস করবে না। তাই সেই মুক্তিযোদ্ধা যুবকের দেখা ওর পেতেই হবে...।
আকাশ নামক এক ছেলে জাপানে পড়তে যায়। পিএইচডি শেষ করে বাংলাদেশে ফেরার জন্য বিমানে চড়ে। বিমানটিতে একটি যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। পাইলট চলন্ত অবস্থায় ত্রুটিটিকে ফিক্স করতে চান। বিমানটিতে তেল আছে ৫৫ মিনিটের। বাংলার দুই পাইলট মিলে এই পদ্ধতি ঐ পদ্ধতি চেষ্টা করছেন। বিমানটি নীড় হারা পাখির মতো ঢাকার আকাশে ঘুরছে। সারা দেশ বিমানটির দিকে তাকিয়ে হাত তুলে প্রার্থনা করছে। ১৯৮ জন যাত্রীর প্রাণ দুই জন পাইলটের হাতে। যারা বিমানের ভেতরে আছেন, তাদের মনে কী অবস্থা, যারা নিচে বসে প্রার্থনা করছেন তাঁদেরই বা কী অবস্থা? জাপানি ভাষায় সোরা মানে আকাশ। আকাশ নিজেকে সোরা বলে ডাকে। সোরার মা সোরার একটা পুরনো গেঞ্জি কামড়ে ধরে বসে আছে। সোরা কি পারবে মায়ের কোলে ফিরতে? নাকি সোরা থাকবে আকাশে, সোরাকাশে।