পালিয়ে বেড়াচ্ছে মাসুদ রানা। সি.আই.এ এবং জিওনিস্ট ইন্টেলিজেন্সের মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলছে ওর মাথার ওপর। কদিন বিশ্রাম নেবে মনে করে আশ্রয় নিল সে বন্ধু রেমারিকের ওখানে, ইটালীতে। তারই সুপারিশে দেহরক্ষীর চাকরি নিল ইটালীর এক ধনী পরিবারে। সেখানে ছোট্ট একটি মেয়ে মিষ্টি একটা গান উপহার দিল রানাকে। দিয়েই চিরবিদায় নিল এ পৃথিবী থেকে। খুন করেছে ওকে কিডন্যাপাররা। কিছুর সাথে নিজেকে জড়াবে না প্রতিজ্ঞা করেছিল রানা; কিন্তু কখন যে ওকে জয় করে নিয়েছিল কিশোরী মেয়েটা, টেরই পায়নি। এখন আর ঘুমাতে পারে না ও। দাউ দাউ করে জ্বলছে বুকে প্রতিশোধের আগুন
ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিল মাসুদরানা-বাড়াল সহযােগিতার হাত। যেতে হলাে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে, এক বিশেষ মিশন নিয়ে-উদ্দেশ্য, ওখানকার কয়েকটি দ্বীপের আশপাশের গভীর সমুদ্রে তল্লাশি চালিয়ে খুঁজে বের করবে অত্যন্ত মূল্যবান এক শিলাখণ্ডের আবিষ্কৃত মজুদ। রানা কল্পনাই করতে পারেনি এ-কাজ করতে গিয়ে কত দুঃখ ছিল কপালে । একদিকে শত্রুপক্ষ, অন্যদিকে রুদ্র প্রকৃতি, ফ্যালকন আইল্যান্ড চারদিকে একের পর এক বিস্ফোরিত হতে শুরু করেছে অসংখ্য ডুবাে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ । ফাদে আটকা পড়ে গেছে জাকারান্ডা-দিশে হারিয়ে ফেলেছে মাসুদ রানা।
পাঠক গ্রিক উপকথার মাইডাস টাচের গল্প জানেন তো? স্বর্ণ লোভী রাজা মাইডাসকে অদ্ভুত এক বর দিয়েছিলেন দেবতারা- শুধু স্পর্শ দিয়ে যে- কোন জিনিসকে সোনায় রূপান্তরিত করতে পারতেন তিনি। সেটা তার জন্য হয়ে দাঁড়ায় অভিশাপ। ভুল করে নিজের মেয়েকে সোনার মূর্তি বানিয়ে ফেলেন তিনি। করুন… সেইসঙ্গে সুন্দর এক কাহিনী, তাই না? কিন্তু গল্পটা যদি গল্প না হয়? যদি ওটা সত্যি হয়ে থাকে? এত বছর পর পাগলাটে কোন ভিলেন যদি সেই ক্ষমতার অধিকারী হতে চায়… খুঁজে পেতে চায় রাজা মাইডাসের সমাধি… এবং মাসুদ রানাকে ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধ্য করতে চায় সেই কাজ করে দিতে? কি ঘটবে তাহলে? না, পাঠক, কল্পনার সাগরে ভেসে যাবার কোনও দরকার নেই। এই বইয়ের ভিতরে রয়েছে সমস্ত প্রশ্নের জবাব। সেই সঙ্গে রয়েছে পাতায় পাতায় দমবন্ধ করা উত্তেজনা, রক্ত গরম করা অ্যাকশান আর বুদ্ধির মারপ্যাঁচ সহ অনেক কিছু। তাহলে আর দেরি কেন, চলুন রানার সঙ্গে যোগ দিই শ্বাসরুদ্ধকর আরেকটি অভিযানে। কথা দিচ্ছি, হতাশ হবেন না।
টেররিস্ট মানুষরূপী পিশাচ বলতে যা বোঝায়, ডেমিয়েন কেইন ঠিক তা-ই। পেশাদার টেররিস্ট সে, ইন্টারপোলের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি। ফ্লোরিডায় ধরা পরল সে। হাতকড়া পরিয়ে যাত্রীবাহী এক বিমানে করে বিচারের জন্য লস অ্যাঞ্জেলসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে। কিন্তু এত সহজে হার মানার পাত্র নয় কেইন। ছদ্ম পরিচয় ওর সঙ্গী-সাথীরা উঠেছে একই বিমানে। যথাসময় আত্মপ্রকাশ করল তারা, হাইজ্যাক করল বিমান। ওফ্ফো, পাঠক, আপনাকে বলতে ভুলে গেছি, উল্লেখযোগ্য আরেকজন যাত্রী আছে এ-বিমানে। দুর্ধর্ষ এক বাঙালি যুবক- তার নাম আপনি জানেন। আদিম আতঙ্ক বিখ্যাত প্য়ালিয়োনটলজিস্ট ডক্টর নাসিম আহমেদ এর লেকচার শুনতে গ্রেগ রনসন অডিটোরিয়ামে গেল মাসুদ রানা। ভদ্রলোক প্রিয় বন্ধু সোহেলের বড় ভাই। ওখানেই প্রথম দেখলো ও জাপানি ললনা রূপসী মানামি সিনোসুকাকে। জড়িয়ে গেল ওরা আষ্টেপৃষ্ঠে। নাসিমের অনুরোধে মস্ত ঝুঁকিয়ে নিল রানা। ডুব দিল প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতম অঞ্চলে, যেখানে মাউন্ট এভারেস্ট কে ছেড়ে দিলে টুপ করে তলিয়ে যাবে। সত্যি কি আছে সেখানে সেই প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী- বিশালাকায় হাঙ্গর কারকারোডেন মেগালোডন?
অসহায় প্রফেসরের স্ত্রীর নীরব কান্না বাধ্য করল রানাকে তাঁদের মেয়েকে খুঁজে দেয়ার দায়িত্ব নিতে। জানত না, জড়িয়ে যাচ্ছে কী গভীর ষড়যন্ত্রে। কোর্ফিউ দ্বীপে চোখের সামনে দেখল বোমা-বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মউরাস। শপথ নিল রানা, শেষ দেখে ছাড়বে। আমেরিকায় যেতেই পিছু নিল নৃশংস একদল আততায়ী। এল একের পর এক হামলা! নানান বিপদ উতরে খুঁজেও পেল ও মেয়েটিকে। কিন্তু কী আছে তার কাছে যে জন্যে এমন হন্যে হয়ে উঠেছে সিআইএ? শত্রুর জাল ছিড়ে রানা জানল, ইযরায়েল থেকে শুরু হচ্ছে মহাপ্রলয়! তৃতীয় মহাযুদ্ধে দুনিয়া হবে নরক! বিসিআই চিফের কথা শুনে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে আর একবার ঝাঁপ দিল মাসুদ রানা!
গুপ্তসংঘ এ-গল্প এতিম শিশু টম ও মিষ্টি মেয়ে জেনির। বা মাসুদ রানা ও রামিন রেযার। অথবা ইতালির কারাবিনিয়ারি, মাফিয়া এবং দ্য ডায়মণ্ড রিং-এর। সেই সঙ্গে বাংলাদেশেরও। ভয়ঙ্কর এক নরখাদক দানব মেরে ফেলেছে বলে রানার ওপর খেপে গেছে সিআইএ-র চিফ। এজেন্টদের ওপর নির্দেশ এল: নির্মূল করো বিসিআই-এর এম,আর,নাইনকে! রানা। জানত না, অনাথ টমের অনুরোধ আর লক্ষ্মী মেয়ে জেনির জন্যে নামতে হবে মাফিয়ার চেয়েও ক্ষমতাশালী, জটিল এক গুপ্তসংঘের বিরুদ্ধে। মাস্টারমাইণ্ড কিডন্যাপড বাঙালি প্রত্নতাত্ত্বিক ডক্টর লাবনী আলমকে ফেরত চাইলে অমূল্য স্টাডা কোডেক্স লুঠ করতে হবে ইউএন-এর দুর্গম ভল্ট থেকে! তাই করল রানা! লাবনী ভারতে বন্দি জেনে চলল ওখানেই। বহু কষ্টে মেয়েটিকে উদ্ধার করে পৌঁছুল রানা বরফ-ছাওয়া হিমালয়ে মহাদেবের প্রাচীন গুহায়! একদিকে শিবের বেদ রক্ষাকারী সশস্ত্র সাধু, অন্যদিকে মাস্টারমাইণ্ড অনুপম মঙ্গেলকার, তার পাষাণী স্ত্রী মাধুরী ও নিষ্ঠুর মার্সেনারিরা। বড় বিপদে আছে রানা বেচারা!