মুক্তিপণ আদায় করবে বলে মালবাহী এক ফ্রেইটার দখল করেই বোকা বনে গেল সোমালি জলদস্যুরা। জাহাজে ভূত আছে। হলভর্তি লোক গায়েব হয়ে যাচ্ছে চোখের পলকে। এই আছে, এই নেই। ভৌতিক জাহাজ মার্ভেলকে হাইজ্যাক করে নিয়ে গেল ওরা ওদের ঘাটিতে। তারপর?…একটা কাজ শেষ হতে না হতেই রানার কাধে চাপল আরেক মহা দায়িত্ব। এখুনি জাহাজ নিয়ে ছুটতে হবে ত্রিপোলির পথে। শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে লিবিয়ার মরুভূমিতে ক্র্যাশ করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্লেন। ক্র্যাশ, না স্যাবোটাজ, না কি হাইজ্যাক? প্রধানমন্ত্রী বেঁচে আছেন তো? এটা লিবিয়ার অস্থির সময়ের কাহিনি। দ্রুত ফুরিয়ে আসছে প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির সময়। চলুন, রানার সঙ্গে গিয়ে দেখি আসলে কী ব্যাপার।
বৈকাল হ্রদের অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে গেছে মাসুদ রানা। তাই বলে পিস্তলটা রাখবে না সাথে? চিফের বারণ শুনে মস্ত ভুল করেছে ও। ওখানে জটিল এক ঝামেলায় জড়িয়ে গেল ওরা। কারা যেন ডুবিয়ে মারতে চায় রিসার্চ শিপের সবাইকে। প্রলয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশাল ঢেউ থেকে যাদেরক উদ্ধার করল ওরা, তাদেরই ভিতর রয়েছে কালনাগিনী! ঠিক সময়মত ফণা তুলল সে। কী করবে নিরস্ত্র রানা? চেষ্টা করেও তা বিজ্ঞানীদের কিডন্যাপ হওয়া ঠেকানো গেল না। এবার? বৈকাল হ্রদ ছেড়ে চলল ও মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোর। বন্ধু ববি মুরল্যাণ্ডকে নিয়ে ঢুকে পড়ল ভয়ঙ্কর এক উন্মাদের আস্তানায়। চেঙ্গিস খানের সমাধির ভিতর পরিচিত বিজ্ঞানীর লাশ নীরবে বলল, বাঁচতে চাইলে পালাও, রানা! এ বিরান মরুভূমিতে কোথায় পালাবে রানা-ববি? হিংস্র-বর্বর প্রহরীদের আদেশ দিয়েছে জালাইর তেমুজিন: লাশ চাই আমি ওই লোক দুটির!
এত বড় বিপদে খুব কমই পড়েছে মাসুদ রানা। এত বড় অভিযোগের আঙুলও খুব কমই উঠেছে ওর বিরুদ্ধে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে ও। কী, চমকে গেলেন? আগে পুরোটা পড়ুনই না! ভয়ঙ্কর জটিল এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে ও। ওসামা বিন লাদেনকে পিছনে ফেলে দুনিয়ার সমস্ত মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টের এক নম্বরে উঠে এসেছে মাসুদ রানার নাম, ওর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে দুই কোটি ডলার! পালিয়ে বেড়াচ্ছে রানা, একা, আহত অবস্থায়। সাহায্য করার কেউ নেই। একটাই পথ সামনে-নিজের সেই নিষ্ঠুর রূপটা আরেকবার সবাইকে দেখিয়ে দেয়া। পাঠক, দমবন্ধ করে বসুন। শুরু হচ্ছে যুদ্ধ।
একটা খবর একই সঙ্গে কীভাবে ভাল আর মন্দ হয়, বলতে পারেন? ঠিক আছে, উদাহরণ দেয়া যাক। নাসার ডিপ স্পেস প্রোব ভয়েজার-টু রিসিভ করা হয়েছে। অত্যাশ্চর্য এক সিগ্নাল-ভিনগ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার অকাট্য প্রমাণ। সুসংবাদ, তাই না? কিন্তু খারাপ খবরটা হচ্ছে, ওটার ভিতর লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর কোড, যা আগামী চারদিন পর সারা পৃথিবীর কম্পিউটার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে। আর এর পিছনে যারা জড়িত, তারা কোনও ভিনগ্রহবাসী নয়, এই গ্রহের দু-পেয়ে জানোয়ার। এই মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে সভ্যতাকে বাঁচাতে হ্যাকিং, সাইবার-ক্রাইম আর সাইবার-টেররিজমের সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা অন্ধকার জগতে টু মারতে চলেছে মাসুদ রানা। কিন্তু কাজটা সহজ নয় মোটেই। উদয় হয়েছে ওর পুরনো শত্রু ডগলাস বুলক ওরফে বুলডগ। যে-কোনও মূল্যে রানাকে ঠেকাতে মরিয়া সে। রয়েছে অচেনা শত্রুর লেলিয়ে দেয়া ভয়ঙ্কর খুনীরাও। আগামী ৯০ ঘণ্টা নরক দর্শন করে ফিরবে রানা।
প্রিয় পাঠক, মাসুদ রানার সঙ্গে আরও একবার সুমেরু অভিযানে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আপনাকে। এবারের গন্তব্য—আর্কটিক সার্কেলের সাড়ে পাঁচশো কিলোমিটার উত্তরের নামহীন এক বরফ-দ্বীপ। দর্শনীয় অনেক কিছুই পাবেন ওখানে। দ্বীপের গভীরে আছে গোপন এক প্রাচীন গবেষণাগার… ভিতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে অসংখ্য মানুষের লাশ! আরও কিছু চাই? পাবেন। গবেষণাগারের পাশে, জমাট বাঁধা বরফের ভিতরে রয়েছে পঞ্চাশ হাজার বছর ধরে ঘুমিয়ে থাকা একদল হিংস্র, রাক্ষুসে, প্রাগৈতিহাসিক দানব! এবে রওনা দেবার আগে জানিয়ে রাখা ভাল, ভাল করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। দ্বীপের দখ। নেবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে মার্কিন সরকার। খবর পেয়ে সাবমেরিন নিয়ে রাশান এক রিয়ার অ্যাডমিরাল আসছেন ওটাকে নিউক্লিয়ার বোমা মেরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। শুধু তা-ই নয়, শীতনিদ্রা ভেঙে খুব শীঘ্রি জাগতে চলেছে। রাক্ষুসে দানবের দল! ভীষণ খিদে ওদের পেটে। বুঝতেই পারছেন, যেতে হবে নিজ ঝুঁকিতে। রানা অবশ্য থাকছে আপনার সঙ্গে তবে… ওর নিজেরই তো.. ভাল করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।
মধ্যপ্রাচ্যের তেল-সমৃদ্ধ দেশগুলোকে গ্রাস করতে চলেছে। পশ্চিমা দুনিয়া। প্রস্তুতির কাজ শেষ। এমন সময় মাসুদ রানার হাতে এল ওদের পরিকল্পনার নীল নকশা। পৌছে গেল ওটা বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের চিফ মেজর জেনারেল (অবঃ) রাহাত খানের হাতে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে এমন কয়েকটি দেশের সিক্রেট সার্ভিস চিফের সঙ্গে বসে তৈরি করলেন তিনি পাল্টা পরিকল্পনা। প্রস্তুত রইল এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের সেনাবাহিনী ঠিক হলো: ইজরায়েলের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হবে মার্কিন পারমাণবিক মিসাইল। ডাক পড়ল মাসুদ রানা, সোহেল আহমেদ, লিউ ফু-চুং, অনিল চট্টোপাধ্যায়, আসি ও উর্বশী দাসার। ওদের সঙ্গে সেই ধচাপচা জাহাজে করে চলেছে আরও অনেকে। জাহাজ কিন্তু আপনার খুবই চেনা… স্বর্ণ-বিপর্যয় সেই মার্ভেল অভ গ্রিস! পাঠক, এই আত্মঘাতী মিশনে যাবেন ওদের সঙ্গে?