যুগলটির বয়স বেশি না। ছেলেটির ঠেলেঠুলে ঊনিশ, মেয়েটির সতের। বিল্ডিংয়ের পেছনে কোন মানুষ নেই। তিনটি গাড়ি সুন্দর করে পার্ক করা। পার্কিংলট হিসেবে বাড়ির পেছনের জায়গাটুকু ব্যবহারের উদাহরণ ঢাকায় বিরল। ব্যাকডােরটা হা-করে খােলা থাকে রাত এগারােটা পর্যন্ত। বাসিন্দারা গাড়ি পার্ক করে ওপথে সুন্দর করে ঢুকে যেতে পারে। | রাত এগারটার পর আধঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। দরজা বন্ধ থাকায় পার্কিংলটে এখন কেউ নেই। গাড়ি থেকে আস্তে করে বের হয়ে সাবধানে দরজা লাগাল রুহান। ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই তার, তবে গাড়ি ভালই চালায়। আজকে ছােটখাটো একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে অবশ্য। এ মুহূর্তে ফ্রন্ট বাম্পারের নড়বড়ে অবস্থা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস গােপন করলাে সে। বাবা যখন দেখবে খবর হয়ে যাবে। অন্যপাশে এসে প্যাসেঞ্জার সিটের দরজা খুলে দিল। আপাতত দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই, সময়েরটা সময়ে দেখা যাবে। রুহান চিন্তার ছাপ সরিয়ে মুখে চমক্কার হাসিটা ফুটিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল প্রেমিকার দিকে। কাঁধ পর্যন্ত কাটা চকচকে চুল দুলিয়ে ওর দিকে ঘুরে তাকালাে অরনী, তারপর হাত ধরে গাড়ি থেকে বের হয়ে এলাে। বের হয়েও হাতটা ছাড়লাে না মেয়েটি। রুহান ওকে দেওয়ালের দিকে নিয়ে গেলাে। চোখ বন্ধ করে ফেললাে অরনী। ঠোঁটের কাছে রুহানের ঠোঁটের স্পর্শ পেতে চুপচাপ গ্রহন করলাে আদরটুকু। অরনীর ঘন ভ্রুর দিকে তাকায় রুহান। “ভেবে দেখ, বাসায় কেউ নেই। এখন কি তােমার যাওয়াটা খুবই দরকার?” রুহানের গলা জড়িয়ে ধরে অরনী। “আম্মু মেরে ফেলবে...আরেকদিন। এখন একটু ধরে থাকো।” বিকট অথচ ভোঁতা শব্দটার সাথে ছিটকে এলাে কাঁচ। ভারি জ্যাকেটের কারণে রুহানের পিঠের কোন ক্ষতি হলাে না অবশ্য। ছিটকে দেওয়ালের দিকে সরে গেছে অরনী, দুই চোখ বিস্ফারিত। রুহানের কাঁধের ওপর দিয়ে তাকিয়ে আছে আতঙ্কিত চোখে। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালাে রুহান। এক নজর দেখেই বুঝতে পারলাে, বাম্পার নিয়ে চিন্তা করার আর কোন কারণ নেই। বাবার চোখ ওদিকে পড়ার কথা নয় আর। গাড়িটার ছাদের ওপর এসে পড়েছে একটি মানবদেহ। সাততলা বিল্ডিংয়ের হাদের ওপর থেকে এই পতন। দেখামাত্রই বুঝতে পারলাে রুহান। ঝট করে তাকালাে ওপরের দিকে। বিশালদেহের কেউ দাঁড়িয়ে ছিলাে ওখানে, তাকানােমাত্রই নিমেষে উধাও হয়ে গেলাে সে। কাঁপা পায়ে সামনে এলাে রুহান, গাড়ির ছাদ তুবড়ে দিয়ে পড়ে থাকা মানুষটির মাথা থেকে ঘিলু বেরিয়ে এসেছে, রক্তের ধারা গড়িয়ে উইন্ডশিল্ডের ওপর দিয়ে নেমে এসেছে বনেটের ওপর। ছড়িয়ে গেছে অনেকটা। পেছনের কাঁচ ভাঙলেও উইন্ডশিল্ডটা টিকে গেলাে কিভাবে সেটা একটা বিস্ময়। পড়ে থাকা দেহটার মুখের অবশিষ্টাংশ দেখে আঁতকে উঠলাে। “মাই গড!” বিড় বিড় করে বলে রুহান। ওপর থেকে পড়া দেহটির মাথা সামনের কাঁচের ওপর দিয়ে ঝুলে গেছে। উন্মুক্ত গলায় মানুষের দাঁতের কামড়ের চিহ্নটা চোখ এড়ায়নি ওর।
‘বিজ্ঞানের চেহারা চিরদিনের জন্যে পাল্টে দেবে’--এমন এক যুগান্তকারি ঘোষণার সাক্ষি হতে সিম্বোলজিস্ট রবার্ট ল্যাংডন স্পেনের বিলবাওয়ের অত্যাধুনিক গুগেনহাইম জাদুঘরে উপস্থিত হয়েছে। আর এই ঘোষণা দিতে যাচ্ছে তারই এক পুরনো ছাত্র, একচল্লিশ বছর বয়সি ধনকুবের, ফিউচারিস্ট এবং প্রযুক্তি দুনিয়ার প্রবাদপ্রতীম ব্যক্তিত্ব এডমন্ড কিয়ার্শ। তার আবিষ্কার এবং কিছু বক্তব্য আগেও আলোড়ন তুলেছে গোটা দুনিয়া জুড়ে । এমন কিছু উন্মোচন করতে যাচ্ছে সে যা কিনা উত্তর দেবে মানব অস্তিত্ববাদের দুটো প্রধান প্রশ্নের। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হতেই ল্যাংডন বুঝতে পারে ভীষণ বিতর্কের জন্ম দিতে যাচ্ছে এডমন্ডের আবিষ্কার। এসময় হঠাৎ করেই ঘোলাটে হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। আবিষ্কারের কথাটা মুখেই থেকে যায় কিয়ার্শের। জাদুঘরের পরিচালক অ্যাম্ব্রা ভিদালের সাথে বিলবাও থেকে পালাতে বাধ্য হয় ল্যাংডন। বার্সেলোনার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় তারা একটি গোপন, সংরক্ষিত পাসওয়াডের্র খোঁজে, যেটা কিনা তাদের সাহায্য করবে কিয়ার্শের আবিষ্কার উন্মোচনে। ধর্মিয় ইতিহাসের পথে ল্যাংডন এবং ভিদালের এই অভিযানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ভীষণ শক্তিশালী এক প্রতিপক্ষ, স্পেনের রাজসভা পর্যন্ত যার ক্ষমতা বিস্তৃত। এডমন্ড কিয়ার্শের আবিষ্কারকে কোনভাবেই প্রকাশ হতে দেবে না তারা। আধুনিক চিত্রকলা এবং কিছু গুপ্ত সংকেতের সহায়তায় ল্যাংডন কি পারবে এই আবিষ্কার উন্মোচন করতে? চরম সত্যের মুখোমুখি হতে? পাঠক, প্রফেসর ল্যাংডনের সাথে ইতিহাসের গলি-ঘুপচিতে ছুটে বেড়াতে আপনি কি প্রস্তুত আছেন?
রাতের অন্ধকারে গ্রাম থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে সালাম। নতুন জীবনের শুরুতেই পায় জমির ম্যাজিশিয়ানকে। জমির বুঝতে পারে জাদুবিদ্যা সালামের সহজাত ক্ষমতা। সে খবর দেয় শংকরকে, যে বহুদিন ধরেই এরকম কারো সন্ধানে ছিল! সালাম আবার পালায়। পালাতেই থাকে। মুরশেদ মিয়া একজন বৃদ্ধ মানুষ। ঢাকায় ফিরতে ফিরতেই আক্রান্ত হলেন পথে। বুঝতে পারছেন অনেকদিন পর আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে তার শত্রুপক্ষ। কিন্তু এতদিন পর কেন এই সক্রিয়তা? ওদের উদ্দেশ্য কী? দিল্লিতে তিনি ছিলেন এক গুপ্ত সংগঠনের সদস্য। অনেকদিন পর সেই গুপ্ত সংগঠনের একজন ঢাকায় পা রেখেছে। কিন্তু কেন?
২০১৯-এর বইমেলার শেষের দিকে নিজের গল্পগুলো এক মলাটে বন্দি করে `নিছক গল্প কিংবা আখ্যান' নামে প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু আমার কলকাতার প্রকাশক অভিযান পাবলিশার্সের মারুফ হোসেন এমন নামকরণে খুশি হতে পারেননি। বইটার ভূমিকা নিয়েও তার ছিল আপত্তি। ‘আপনি আপনার মতো গল্প লিখবেন...কৈফিয়ত দেবেন কেন!’--এমনই ছিল তার বক্তব্য। পরবর্তিতে গল্পগ্রন্থটি অভিযান থেকে প্রকাশ করার সময় তিনি জানালেন, ‘রহস্যের ব্যবচ্ছেদ অথবা হিরণ্ময় নীরবতা’ নামটি দিতে চাইছেন। আমি এককথায় রাজি হয়ে যাই, কারণ আমারও মনে হয়েছে, এই নামকরণটি যথার্থ, আগেরটার মধ্যে তাড়াহুড়ো কিংবা অতিরিক্ত বদান্যতার ছাপ ছিল হয়তো! যাই হোক, অভিযান থেকে গল্পগ্রন্থটি প্রকাশ হবার পর উপলব্ধি করলাম, একই গল্পগ্রন্থ ঢাকা এবং কলকাতা থেকে দুই নামে, ভিন্ন প্রচ্ছদে প্রকাশিত হবার কারণে পাঠকমহলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত নেই, পরবর্তী সংস্করণটি হবে একই নামে, একই প্রচ্ছদে। তবে এবার গল্পের ধারাক্রমে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে; পুরনো একটি গল্পের পরিবর্তে যোগ করা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে লেখা নতুন একটি গল্প। এই গল্পগ্রন্থে আমার পরিচিত গণ্ডী থৃলার ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের গল্প রয়েছে।
দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরতে হলো তুষারকে, অচেনা একটা ফোন কল পেয়ে, দেখা হলো পুরানো বন্ধুদের সাথে, জানা গেল অচেনা নাম্বার থেকে ফোন কল তারাও পেয়েছে। তারপর এক এক করে খুন হতে লাগল বন্ধুরা। কোথাও কোন ক্লু নেই, নেই কোন মোটিভ।দূর্ঘটনায় মারা গেল দেশ সেরা এক লেখক। দিশেহারা হয়ে পড়ল হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট। আবু জামশেদ তার নতুন যোগ দেয়া সহকারিদের নিয়ে নেমে পড়েছেন মাঠে। হার না মানা আবু জামশেদ দিশেহারা, এই কেসের উপর নির্ভর করছে পুরো ডিপার্টমেন্টের ভবিষ্যত, তার দীর্ঘদিনের সুনাম।