প্রলয় একজন ফেরারী আসামী। সে কখনও কারো সাথে প্রতারণা করেনি, এছাড়া এমন কোনো অপরাধ নেই যেটি সে করেনি। সে ধরা পড়বে কখনও ভাবেনি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। দুর্ভেদ্য কারাগারে তার বাকী জীবন কাটাতে হবে — অন্তত সেটাই সবাই ভেবেছিল। কিন্তু প্রলয়ের মস্তিষ্ক অবিশ্বাস্য ক্ষুরধার। কারাগারের চার দেওয়ালের মাঝখানে সে কী আসলেই বাকী জীবন কাটিয়ে দেবে? কাটানো উচিৎ?
মৃতপ্রায় পৃথিবী। চাঁদ ততদিনে গ্রহটি থেকে আরো অনেক দূরে চলে গেছে। জলভাগে বিশাল পরিবর্তনের কারণে পরিবেশ প্রতিকূল। আগে থেকেই পৃথিবী ছেড়ে এ্যান্ড্রোমিডার দূর গ্রহগুলোতে রিকান কিংবা রায়নার মতো পাড়ি জমিয়ে ফেলেছে অনেকে। বাকি যারা, তারা পৃথিবীতে পড়ে থাকে একরকম ভাগ্যহত হয়ে। এমন প্রায় পরিত্যক্ত এক পৃথিবী আর তার সূর্যের দিকে দৃষ্টি পড়ে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান সত্তাটির। পৃথিবীকে সত্তাটি নিজের আবাস বানাবে আর সূর্যের চারপাশে ডাইসন স্ফিয়ার তৈরি করে মেটাবে নিজের জ্বালানী চাহিদা। নিজেদের শেষ সম্বল একটি রকেট নিয়ে এই অসম্ভব ক্ষমতাধর সত্তাটিকে থামাতে অভিযান শুরু করে পৃথিবীর চারজন আনকোরা তরুণ তরুণী – নোরা, কিরা গ্রুস আর ক্রিক। সাথে থাকে একেবারেই অদক্ষ একজন পাইলট— উরু। ব্যর্থ হবার সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে এগোতে থাকা দলটি একটা সময়ে গিয়ে মেশে রিকান আর রায়নার ঘটনাপ্রবাহে। বুদ্ধিমান রিকান আর দুঃসাহসী রায়না ততদিনে নাম লিখিয়েছে আন্তঃনাক্ষত্রিক চুরি-ডাকাতির খাতায়। দলটি বুঝতে পারে যে পৃথিবীর দিকে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান সত্তাটির শুরু করা ধ্বংসযাত্রা থামাতে রিকান আর রায়নাকে তাদের অনেক বেশি প্রয়োজন ।তারা সবাই মিলে কি শেষমেশ পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারবে?
বহুকাল আগে পৃথিবী আর গ্রহগুলো সূর্যের অংশ ছিল। সূর্য ছিল জলন্ত অগ্নিকুণ্ড আর প্রচণ্ড গরম। একদিন গ্রহগুলো সূর্য থেকে ছিটকে ছোটো ছোটো টুকরো হয়ে আকাশে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু ছিটকে পড়া টুকরোগুলো পরস্পরকে ছেড়ে গেল না। এরা সূর্যের চারপাশে ঘুরে বেড়াতে থাকল। পৃথিবী তখন ছিল আগুনের ফুলকির মতো। উত্তপ্ত সূর্য ঠান্ডা হতে শুরু করল। তখন পৃথিবীও শীতল হতে থাকল। সূর্যের চেয়ে পৃথিবী ছোটো। তাই তার ঠান্ডা হতে সময় কম লাগল। ধীরে ধীরে পৃথিবী যথেষ্ট ঠান্ডা হয়ে গেল। যখন পৃথিবী অনেক বেশি ঠা ্ডা হয়ে এলো, বাতাসের জলীয়বাষ্প তখন পানিতে রূপান্তরিত হলো। তারপর বৃষ্টি এলো। একটানা দীর্ঘসময় বৃষ্টি হলো। একসময় পৃথিবী আরও বেশি ঠান্ডা হলো। ঠান্ডা হতে হতে পৃথিবী হিমশীতল হয়ে গেল। পৃথিবীর তাপমাত্রা কমে পরম শূন্যের কাছাকাছি চলে এলো। একসময় পৃথিবীর তাপমাত্রা স্থায়ী হয়ে গেল হিমাঙ্কের নিচে।