কবিতায় মানুষ কী খোঁজে? কেন খোঁজে? রহস্যের স্পর্শ নাকি শব্দ ও অক্ষরের অনুভব। হয়তো অস্পর্শের অনুভবই কবিতা। কবি রাকীব হাসান একজন চিত্রশিল্পী। হয়তো সে কারণেই তার কবিতার অক্ষরগুলো জীবনের রঙে রাঙানো। তার ভাষাভঙ্গি, তার চিত্রকল্প পড়তে পড়তে মনে হল কবিতা ক্যানভাস থেকে উঠে এসে সামনে দাঁড়ায়৷
কবি সুমন শামসুদ্দিন বলেন- 'আয়ুষ্কালের বিষম অঙ্ক হাওয়ায় ভাসে' তখনই বুঝতে পারি সময় নষ্ট করার মানুষ তিনি নন। গভীর অভিনিবেশের সঙ্গে কাব্যচর্চাই তার ব্রত। এই চর্চা অন্ধের অজানা পথে পা বাড়ানো নয়, তিনি ইটিতে চান জেনে-বুঝে, সঠিক রাস্তায়। কবিতা এক অভিমানী প্রেমিকা, তাকে আদর না দিলে, ভালোবাসা না দিলে, পশ্চিমা যুগলের মতো মাঝে-মধ্যে 'আই লাভ ইউ' না বললে মুখ ভার করে রাখে। কবিকে ছেড়ে সে চলেও যায়। দুয়েকবার হয়ত আদরের আভাস পেলে ফিরে আসে, কিন্তু অনেকের কাছ থেকেই চিরতরেই পালিয়ে যায়। সুমনের কাছ থেকে কাব্যদেবী পালিয়ে যাবে না, এটা আমি নিশ্চিত হয়েছি। কারণ কবিতার প্রতি তার ভালোবাসা নিখাদ এবং তীব্র। এই ভালোবাসা, এই নিমগ্নতা তাকে একদিন বড়ো কবি করে তুলবে।
অবাসযোগ্য এই পৃথিবীর বেড়ে চলা ‘ক্ষুধা আর ক্ষুরধার নীতির সংকট’, যা ভোগায় আমাকে গুলিবিদ্ধ পাখির যন্ত্রণাকাতর কন্ঠের মতোন। চঞ্চল করে তোলে, যখন হঠাৎ বাতাসের এক হলুদ গনগনে আভায় উচ্ছ্বল সবুজ ঘাসফড়িং’রা হয়ে পড়ে নীল নিথর। কিন্তু এ পৃথিবী তো হতে পারত নিরাপদ, হতে পারত অন্নপূর্ণার আলো। ধরিত্রীর প্রতিটি শস্যকণা একইভাবে প্রবেশ করতে পারত প্রতিটি উদরে। এ পৃথিবী হতে পারত প্রেমের, হতে পারত তীব্র চুম্বনের, নারীর ভেজা চুলে হেলে পড়া নরম দুপুরের, হতে পারত নগ্ন পায়ের সাদা জুতোর। এ পৃথিবী হতে পারত তাদের, যারা বিশুদ্ধ ভালোবেসে তোমাকে জিতিয়ে দিয়ে হয়েছে ‘হারিয়ে যাওয়া শেরপা’। আমাদের কি ঠিক অতোটা জেতবার দরকার আছে? প্রাণপণ ছুটে সকলকে মাড়িয়ে বাতাসের ঠিক অতোটা উচ্চতায় যাবার? যেখানে গেলে ফুরিয়ে যায় অক্সিজেন আর ফুরিয়ে যাই আমরা নিজেই। বরং আমরা পৌঁছাতে পারি সেখানে, পৃথিবীর আদিমতম দিন থেকে যেখানে আমাদের এক হবার হাহাকার। হাহাকার এক অমিমাংসিত মেঘ থেকে বৃষ্টি নামানোর, হাহাকার ছুটি হয়ে যাওয়া একলা হোস্টেলের ধূসর নিভৃত সন্ধ্যের। সেই এলোমেলো ভাবনার- গোপন কান্নার, সাদা-কালো অক্ষরে পুষে রাখা ক্ষতের জলছাপ এই কাব্যগ্রন্থ।