ইংরেজি তাে তার না বােঝার কিছু নেই কিন্তু ভাবনা ওই একসেন্ট নিয়ে। সেদিক থেকে নিহাই ভালাে বন্ধু হবে। এক ধরনের আপনজনও তাে সে। পরিচিত। ছেলে তাে প্রথম দিনেই কোনাে এক কমেডিয়ানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে একসেন্টের সমস্যায় কি কি হয়েছে এই আমেরিকায়। বলেছে কোনাে এক মহিলা এয়ারপাের্টে নেমেছে। তাকে সিকিউরিটির লােকজন জিজ্ঞেস করল, কেন এসেছ? মহিলা জানাল, টুরিস্ট সে। কিন্তু ওরা শুনল টেররিস্ট। ব্যাস হাতকড়া।। আরেকজন নেমেছে বিশাল বিশাল যন্ত্রপাতি নিয়ে। তাকেও জিজ্ঞেস করুল, কি করতে এসেছ? সে বলল, স্যুট করতে। কি স্যুট করতে? বিশাল বিশাল বিডিং। ধর ধর করে তাকেও আটকাল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। সে আসলে বলতে চেয়েছিল বিশাল বিশাল বিল্ডিংয়ের ছবি তুলবে।
টেক্সান রাণী ও ক্ল-বনেট" বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া নন্দিনী চোখ কপালে তুলে মেয়েকে দেখছে। এই শুরু করেছে দু'জনা আজকাল। প্রতিযোগিতা। আমার দেশ তোমার দেশ, যুদ্ধ। নন্দিনী যত ঠেলছে রানীকে বাংলাদেশের দিকে রানীর শিশু মন ততই মায়াবতী হয়ে উঠছে আমেরিকার দিকে। তার মায়ের দ্বারা যেন অবহেলিত আমেরিকা। তাকে উদ্ধারের দায় এখন রানীর। শিশু মনস্তত্ব বুঝে উঠতে পারছে না নন্দিনী। নিহা ভাবে নন্দিনীকে একলা করে নিয়ে বসতে হবে একদিন। তার আবেগ বুঝে ওঠার বয়স হয়ে উঠেনি এখনো রানীর। সে দেখছে তার মা তার অদেখা কোনো এক দেশ বাংলাদেশকে সব ব্যাপারে আমেরিকা থেকে এগিয়ে আগলে ধরছে। রানী টেক্সান জীবন দেখেছে। এই পরিচয়ের বাহিরে যেতে হবে কেন বা কিভাবে তাও সে বুঝে উঠতে পারছে না। প্রয়োজন বা কি তাও সে বুঝতে এখনো অক্ষম। আমি যেখানে আছি থাকি সেটাই আমার ভালোবাসা, এরকম একটা স্বভাবজাত ভালোবাসা দানা পাকিয়েছে রানীর মাঝে আর তা সুরক্ষায় সে খুব দৃঢ় এবং দীপ্ত।
-মশী ভাইয়ের গ্যাস স্টেশনে নাকি আজ চারজন মাস্ক পরা লোক ঢুকেছিল। তাই দেখে সবাই ছিটকে সরে গেল এদিকে-ওদিকে। একজন মাস্ক সরিয়ে তখন বলল, ভয় নেই আমরা ডাকাত। করোনাক্রান্ত নই। -ডাক্তার সিজার করার ডেট দিয়েছিল ২৫শে মার্চ। সে-ও কিছুতেই নেবে না। সেই ভয়াল কালরাত্রিতে রানীকে আনতে চায়নি। তারপর পেলো ২৬শে মার্চ। খুব খুশিমনে এই দিনেই সব ব্যবস্থা ঠিক করেছিল। ২৬শে মার্চ হোক রানীর জন্মদিন। আমেরিকান ডাক্তারও পুরো ইতিহাসের কিছুটাই শুনে বলেছে তোমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২৬ তারিখেই সার্জারি। কত আনন্দের ছিল ৭ বছর আগের এই দিনটি। আর এখন শুরু হয়েছে ঐ এক মরার কোভিট-১৯। কেউ জীবনে শুনেছে ঐ এক ড্রাইভ থ্র জন্মদিনের কথা। রানী সাজগোজ করে ৩টা থেকে ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ড্রাইভ থ্র বাথডে গার্ল দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবে। -ওখানেও একদিন বসা হয়েছিল সেই একজনের সাথে। কত বছর আগেকার সেই একটা দিন। কতবার অনেকবার বহুবার করে যে মনে পড়ে, তাও না। হঠাৎ হঠাৎ এমন সময়গুলোতে দৃশ্যগুলোতে দিনগুলোতে মনে পড়ে যায়। হঠাৎ হঠাৎ-ই। এটা কি আসলে মনে পড়া না স্মৃতির রিপ্লেসমেন্টে হঠাৎ-ই পুরাতনকে এক ঝলক দেখে ফেলা। পুরাতনকে ঢেকে দিচ্ছে নতুন কিছু। হ্যাঁ তাই। সেটাই। এটাই ঠিক। তবে তাই হোক। নতুন আসুক। নতুন আসুক আশা আর ভালোবাসায়, ঢেকে যাক পুরাতন।