"আমার জন্ম হয় ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ তারিখে। আমার আব্বার নাম শেখ লুৎফর রহমান। আমার ছোট দাদা খান সাহেব শেখ আবদুর রশিদ একটা এম ই আর স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের অঞ্চলের মধ্যে সেকালে এই একটা মাত্র ইংরেজি স্কুল ছিল। পরে হাইস্কুল হয়, সেটি আজও আছে। আমি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে লেখাপড়া করে আমার আব্বার কাছে চলে যাই এবং চতুর্থ শ্রেণিতে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হই। ... ১৯৩৪ সালে যখন আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি তখন ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। ছোট সময়ে আমি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম। খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভালো ব্রতচারী করতে পারতাম। হঠাৎ বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার হার্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। আব্বা আমাকে নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে কলকাতার বড় বড় ডাক্তার শিবপদ ভট্টাচার্য, এ কে রায় চৌধরী আরও অনেককেই দেখান এবং চিকিৎসা করাতে থাকেন। প্রায় দুই বছর আমার এইভাবে চলল। ... ... চোখের চিকিৎসার পর মাদারীপুরে ফিরে এলাম, কোনো কাজ নেই। লেখাপড়া নেই, খেলাধুলা নেই, শুধু একটা মাত্র কাজ, বিকালে সভায় যাওয়া। ...
দ্বীপদেশের এ শহরে নিশিরাত্রিতে সকলে ঘুমায়। জেগে থাকে হয়তো প্রেমিক-প্রেমিকা, দোকানি, অথবা কোনো জেলখানার প্রহরী কিংবা কয়েদি। আর জাগে কয়েদির পরিবার। চারদিকে এত আলো ঝলমল করে; তবুও এরই মাঝে মানুষ কাঁদে! ৬৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে সূর্য উদয়ের ভূমি; বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সভ্য একটি দেশ জাপান। যার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিশ্ববাসীকে আকৃষ্ট করে। জুয়েল আহসান কামরুল তাঁর একত্রিশ বছরের জাপান প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে সেসব দুর্দান্ত ভালোবাসা, কলহ, বিশ্বাসঘাতকতা, সর্বোপরি জীবন-মরণের কাহিনির নিপুণ চিত্র এঁকেছেন এই উপন্যাসে।
ঘর থেকে বেরোয় তারা। পথিকের বেশে এদেশ থেকে ওদেশে হেঁটে চলে, কখনো-বা উড়ে চলে। ঘরে রেখে আসা মানুষের মুখে অন্ন যোগান দেয়ার লক্ষ্যে, পাহাড়-পর্বত, সাগর-নদী, এমন কী বরফের রাজ্য পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে, দেশের পরিবারের কাছে অর্থ প্রেরণ করে! কোনো কোনো সময়ে পরিশ্রম করতে করতে তাদের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে; তবুও তারা হাসে। হেসে হেসে অশ্রুকে ঢেকে রাখে। হৃদয়ের গহ্বরে এগিয়ে চলার স্বপ্ন তাদের! এরই মাঝে কেউ জীবনকে বিসর্জন দেয়; নিঃশেষ হয়ে যায়। কেউ আবার পৃথিবীর পথে দাঁড়িয়ে কাঁদে।
বাড়িটির নাম বাংলায় লেখা 'ছোঁব তোমার সুখ। বাড়ির কত সুন্দর নাম থাকে। এ বাড়িটি দেখতে যেমন অদ্ভুত, নামটিও তেমন। চারিদিকে বন জঙ্গলে ঘেরা। জঙ্গলের কারণে বাড়ির গেট পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বুলবুলের রহস্য বেড়ে গেল। সে গভীর ভাবে খেয়াল করে দেখল এই নেইম প্লেটের সঙ্গে আরও একটা নেইম প্লেট। ইংরেজিতে লেখা। তবে লেখাগুলো অস্পষ্ট, আবছা। মনে হচ্ছে লেখাটি কয়েকশ' বছর আগের। বুলবুল খুব কাছ থেকে ইংরেজি নেইম প্লেট পড়ার চেষ্টা করল। দ্য হ্যাপিনেস। বুলবুলের সংশয় বাড়তে থাকল। পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ অস্ট্রেলিয়া। মরুভূমি, সমুদ্র, দ্রে, পাহাড়, পাহাড়, ঝর্ণা আর জঙ্গলের মাঝে মাঝে আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজ। মাঠ, উপত্যকা। এরকম একটি উপত্যকার শেষের দিক পর্যন্ত চলে গেছে সাউদার্ন ভ্যালি ওয়ে রাস্তাটি। সেই রাস্তার শেষ বাড়িটির বাংলা নামের পাশে 'দ্য হ্যাপিনেস বাড়িতে কেউ সুখ খুঁজে পেয়েছে কিনা জানতেই এই উপন্যাসের শুরু।
চেরি কে জাপানিরা বলে সাকুরা। বসন্তে এই ফুল প্রস্ফুটিত হয়ে সমগ্র জাপানকে রাঙিয়ে তোলে। বিমোহিত হয় জনমন। এই উপন্যাসে ফুল এবং মানুষ, দুটো বিষয় এসেছে। অর্থাৎ এক কন্যার নাম সাকুরা। ব্যতিক্রমী একজন সে। কী অর্থে বলা হচ্ছে সেটা এই বই শেষ পর্যন্ত না পড়লে অনুমেয় নয়। বইয়ের প্রারম্ভ, মধ্যাংশ, সমাপনী এক ইস্টাইলের নয়। হৃদয়জ ভালবাসা; অতলান্ত অসীম তার প্রেমে সমুদ্র, পর্বত, আকাশ, দ্বীপপুঞ্জ ও মেঘমালারা এক হয়ে কথা বলেছে। স্বপ্ন, সংঘাত, চাওয়া-পাওয়া, লঙ্ঘন, জীবনের অসংখ্য টানাপড়েন ও কৌতুকবোধে পূর্ণ এখানটায়। সীমান্ত ছাড়িয়ে এদেশ থেকে সে দেশে। সেখান থেকে অন্যত্র! কতজীবনের গল্প এসব! পৃথিবীর পথে পথে জীবনের গল্পগুলো অবহেলায় ছড়িয়ে থাকে, আমরা কেউ দেখি; কেউ দেখি না, হিসেব করতে গিয়েও করি না।
রায়হানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে। তার বাবা-মা অনেক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিল। কিন্তু তাদের মন সবসময় পড়ে থাকে বাংলাদেশে। রায়হানের বাবা-মা তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছেলে-মেয়ে বড় হলে সবাই মিলে দেশে চলে যাবে। রায়হানকে একারণে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য। দেশটা সম্পর্কে বাবা-মায়ের মুখে অনেক শুনেছে। কিন্তু কখনো আসা হয়নি। সম্পূর্ণ নতুন একটা দেশে রায়হানের নানা অভিজ্ঞতা হতে থাকে। যেই অভিজ্ঞতাগুলো তাকে ভাবতে শেখায়- এ কেমন সমাজব্যবস্থা। রায়হানের অভিজ্ঞতাগুলোই উঠে এসেছে এই বইতে।