রানার কাছে সাহায্য চাইলেন বিলিয়নেয়ার লুকা ব্রেযনেভ। বিসিআই চিফও চান তাঁকে সাহায্য করুক রানা। তবে দুর্ধর্ষ বাঙালি এজেণ্ট জানে না, মস্কোয় লক্ষ্মী মেয়ে ইউনাকে খুঁজতে গিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বের ভয়ঙ্কর এক জটিল ষড়যন্ত্রে। ভবিষ্যতে জ্যান্ত মানুষ কি পরিণত হবে রোবটে? মহাবিপদে পড়ে হাড়ে হাড়ে টের পেল রানা, কাউকে উদ্ধার করা তো দূরের কথা, এখন নিজেকে রক্ষা করাও অসম্ভব। ওকে বন্দি করে নিজের আস্তানায় নিল নিষ্ঠুর এফএসবি মিশন চিফ। তার একটাই কথা: হয় যোগ দাও আমার সঙ্গে, নইলে স্রেফ খুন করে ফেলব। তা হলে কি প্রাণে বাঁচবে ইউনা ও তার বাবা? মারাত্মক ফাঁদ ছিঁড়ে বেরোতে গিয়ে শুরু হলো মরিয়া রানার প্রাণপণ সংগ্রাম।
টানা ক্লান্তিকর কাজ, তাই ছুটি পেয়ে খুশি হয়েছিল রানা। কিন্তু ফোন দিলেন কর্নেল (অব.) জন ব্রাউন। নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে ওকে রক্ষা করেছিলেন তিনি। জরুরি সাহায্য চাই তাঁর। যেতেই হলো রানাকে ইতালিতে। তারপর সুদূর মিশরে। ধরেও ফেলল কর্নেলের ছেলের খুনিকে। তবে বিসিআই এজেণ্ট জানে না, জড়িয়ে গেছে লাখ-কোটি ডলারের প্রাচীন গুপ্তধনের মারণজালে। এতেই শেষ নয় সমস্ত জটিলতা। উপকারী মানুষ কর্নেলের সুন্দরী, দ্বিতীয় স্ত্রী পাগলিনী হয়েছে রানার প্রেমে! চারপাশে ভয়ঙ্কর হিংস্র নৃশংস খুনি। যখন তখন রানাকে খতম করবে জঙ্গী নেতা জমির শেখ। আর ওই গুপ্তধন? ওটাই বা গেল কোথায়? মহাবিপদে পড়ে শ্বাস ফেলারও সময় রইল না ওর! চলুন, রানার সঙ্গে আমরাও দেখে আসি: সত্যিই ওসব আছে কি না।
মুক্তিপণ আদায় করবে বলে মালবাহী এক ফ্রেইটার দখল করেই বোকা বনে গেল সোমালি জলদস্যুরা। জাহাজে ভূত আছে। হলভর্তি লোক গায়েব হয়ে যাচ্ছে চোখের পলকে। এই আছে, এই নেই। ভৌতিক জাহাজ মার্ভেলকে হাইজ্যাক করে নিয়ে গেল ওরা ওদের ঘাটিতে। তারপর?…একটা কাজ শেষ হতে না হতেই রানার কাধে চাপল আরেক মহা দায়িত্ব। এখুনি জাহাজ নিয়ে ছুটতে হবে ত্রিপোলির পথে। শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে লিবিয়ার মরুভূমিতে ক্র্যাশ করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্লেন। ক্র্যাশ, না স্যাবোটাজ, না কি হাইজ্যাক? প্রধানমন্ত্রী বেঁচে আছেন তো? এটা লিবিয়ার অস্থির সময়ের কাহিনি। দ্রুত ফুরিয়ে আসছে প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির সময়। চলুন, রানার সঙ্গে গিয়ে দেখি আসলে কী ব্যাপার।
বৈকাল হ্রদের অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে গেছে মাসুদ রানা। তাই বলে পিস্তলটা রাখবে না সাথে? চিফের বারণ শুনে মস্ত ভুল করেছে ও। ওখানে জটিল এক ঝামেলায় জড়িয়ে গেল ওরা। কারা যেন ডুবিয়ে মারতে চায় রিসার্চ শিপের সবাইকে। প্রলয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশাল ঢেউ থেকে যাদেরক উদ্ধার করল ওরা, তাদেরই ভিতর রয়েছে কালনাগিনী! ঠিক সময়মত ফণা তুলল সে। কী করবে নিরস্ত্র রানা? চেষ্টা করেও তা বিজ্ঞানীদের কিডন্যাপ হওয়া ঠেকানো গেল না। এবার? বৈকাল হ্রদ ছেড়ে চলল ও মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোর। বন্ধু ববি মুরল্যাণ্ডকে নিয়ে ঢুকে পড়ল ভয়ঙ্কর এক উন্মাদের আস্তানায়। চেঙ্গিস খানের সমাধির ভিতর পরিচিত বিজ্ঞানীর লাশ নীরবে বলল, বাঁচতে চাইলে পালাও, রানা! এ বিরান মরুভূমিতে কোথায় পালাবে রানা-ববি? হিংস্র-বর্বর প্রহরীদের আদেশ দিয়েছে জালাইর তেমুজিন: লাশ চাই আমি ওই লোক দুটির!
ওই প্রবল ঝড় এসেছিল প্রায় সোয়া শ বছর আগে। এখন কোথায় সেই জাহাজ, সে-ঝড়ে যেটা হারিয়ে যায়? আর কোটি কোটি ডলারের হীরা? …আঁধার রাতে কঙ্গো নদীর এক পিয়ারে ভিড়ল পুরনো এক ধচাপচা জাহাজ। অস্ত্র পেয়ে খুশি হয়ে উঠল বিদ্রোহী-নেতা, ঠাণ্ডা মাথার জাত খুনি টমাস গাধাধারের দলের লোক গুলো। এখন হীরাগুলোও তাদের চাই। কিন্তু হাতে অস্ত্র পেলেই কি খুন করতে পারবে ওরা রানাকে? একটা কাজ শেষ হতে না হতেই রানার কাধে চাপল আরেক দায়িত্ব। কোথায় গেলেন বিজ্ঞানী আসিফ হায়দার চৌধুরি? কারা কিডন্যাপ করল তাঁকে? …ওই দ্রুতগামী ইয়টের ওরা কারা? খুন করতে চাইছে কাদেরকে? সাগরে দানবীয় সাপ খুঁজতে যাওয়ার আগেই একের পর এক বিপদ এসে জুটল। রানা পণ করল, এসব রহস্য ভেদ না করে ছাড়বে না। কিন্তু উপকূল থেকে দেড় শ’ মাইল দূর-সাগরে বিধ্বস্ত হলো লাইফবোট, হাড়ে হাড়ে টের পেল ও, এবার বাঁচার সম্ভাবনা নেই! অপরূপা কার্টা অস্টিনকে নিয়ে ডুবে মরতে হবে নির্ঘাত। এর পরেও কি রানার সঙ্গে যাওয়ার সাহস আছে, পাঠক?
এত বড় বিপদে খুব কমই পড়েছে মাসুদ রানা। এত বড় অভিযোগের আঙুলও খুব কমই উঠেছে ওর বিরুদ্ধে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে ও। কী, চমকে গেলেন? আগে পুরোটা পড়ুনই না! ভয়ঙ্কর জটিল এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে ও। ওসামা বিন লাদেনকে পিছনে ফেলে দুনিয়ার সমস্ত মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টের এক নম্বরে উঠে এসেছে মাসুদ রানার নাম, ওর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে দুই কোটি ডলার! পালিয়ে বেড়াচ্ছে রানা, একা, আহত অবস্থায়। সাহায্য করার কেউ নেই। একটাই পথ সামনে-নিজের সেই নিষ্ঠুর রূপটা আরেকবার সবাইকে দেখিয়ে দেয়া। পাঠক, দমবন্ধ করে বসুন। শুরু হচ্ছে যুদ্ধ।