১৯১৮ সাল। বাবার মৃত্যুর দুঃখকে সঙ্গী করে মাধবগঞ্জে পা রাখে নসিব উদ্দেশ্য, সাহেব আলী নামের এক রহস্যময় বাউলের জীবন আর কর্ম সম্পর্কে জানা। কিন্তু সেই সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যের আড়ালেও অন্য কোন লক্ষ্য লুকিয়ে নেই তাে? একজন অঘােরনাথ তান্ত্রিক, মােস্তফা মাস্টার অথবা চায়ের দোকানদার সুবােধ ঘােষের গল্পে মৃত্যুর স্থান কোথায়? বিকলাঙ্গ এক বালকের তাতে কতােটুকুই বা ভূমিকা থাকতে পারে? নীল বিদ্রোহ থেকে ভাগ্যের ফেরে বেঁচে যাওয়া জাদুকর অ্যান্ডারসনের কল্যাণে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথমবারের মতাে অনুপ্রবেশ ঘটে সার্কাস নামক প্রথার রহস্যময় এক কটেজের গােড়াপত্তনও তার হাত ধরে ঘটেছিল; সাতান্ন বছর আগে। একদল ঠগির মৃত্যুর পর যেখানে ভয়ে কেউ পা বাড়ায়নি। ধরে নেয়া যাক, এই গল্পটা তারই। গল্পটা হয়ত ষোড়শ শতকের পর্তুগিজ নাবিক অ্যামেরিক গিরাল্ডাের। একই সাথে অনিন্দ্য সুন্দরী অনিতার গল্পও বলা যেতে পারে। দৃষ্টির অগােচরে লুকিয়ে থাকা নৈঃশব্দের জগতে যখন চেতনার প্রদান অনুভব করা যায়, নীলচে আলােতে ভাস্বর হয়ে আবির্ভাব ঘটে তার রঙ সরিয়ে সাদাকালাে হয় পৃথিবী।
"নিত্য মাইডাস" বইটিতে লেখা শেষের কথা: লােভে পাপ, পাপে...? দ্বিধায় পড়ে গেছে হারুন। যে অপরাধ সে করেছে, তাড়া করছে তার কর্মফল। যে অলৌকিকতায় শুরু হতে পারত স্বপ্নময় দিনগুলাের, সেটাই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। নিজেই যখন নিজের শত্রু তখন পালানাের পথ কোথায়? লালসা, বিশ্বাসঘাতকতা আর সর্বোপরি প্রতিশােধের গল্প নিত্য। মাইডাস-এ স্বাগতম
কষে নেভি সিগারেটে একটা টান দিল তরিকুল ইসলাম। সাত সকালে সিগারেটে কষে টান দেওয়ার অনুভূতিই অন্যরকম। সিগারেটের ধোঁয়াটা যখন বুকে গিয়ে ঘ্যাচ করে আঘাত করে, তার সাথে সম্ভবত কোন ধরনের শান্তিরই তুলনা হয় না। সিগারেট ধরা হাতটা মুখের কাছে আনতেই দেখল তিরতির করে কাঁপছে। নার্ভাসনেস? গ্রাহ্য করল না সে। কারণ জানে কিছুক্ষণ পরেই সব শেষ হতে চলেছে। যে কাজটা সে করতে চলেছে সে তুলনায় হাত কাঁপাকাঁপি কিছুই না। ঠিক এই মুহূর্তে সে দাঁড়িয়ে আছে রমনা পার্কের ভেতর। অপেক্ষা করছে তার শিকারের। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজন মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছে। আজব জায়গা এই রমনা পার্ক। রাত দিন ২৪ ঘণ্টাই মানুষে গিজগিজ করে। এখন যেমন পুরাে পার্ক জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সকালের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এই মানুষগুলাের স্থান দখল করবে কতিপয় কপােত-কপােতি। বিকেলে মানুষ আসে পরিবার নিয়ে আর রাত গভীর হলেই পুরাে পার্ক দখল করে ফেলে রাতের পাখি। এক মুহূর্তের জন্য খালি হয় না পার্কটা। একজন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধকে দেখল বিশাল সাইজের ভুঁড়ি সামনে দুলিয়ে ‘হুশ...হুশ...' শব্দ করে দৌড়াতে দৌড়াতে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। তাকে অনুসরণ করছে বছর তেরাে-চৌদ্দ বছরের একটা ছেলে। সম্ভবত বৃদ্ধের নাতি। দুজনের ছােট্ট দলটা তাকে অতিক্রম করার সময় শুনতে পেল বৃদ্ধ তার নাতিকে সকালের হাঁটার উপকারিতা সম্পর্কে একটা নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিচ্ছে। মনে মনে বৃদ্ধকে চ-বর্গীয় একটা গালি দিল সে। “হালারপুত বুইড়া। জোয়ান কালে খেয়াল ছিল না এইসব কথা। তাইলে ত এই বিশাল গামলাডা আর হইতাে না। বুইড়া কালে কাম কাইজ না পাইয়া এহন শরীরের লাইগা মায়া বাড়ছে?” ভাগ্য ভালাে বৃদ্ধ বেশ অনেকদূর চলে গিয়েছে। তরিকুল ইসলামের গালিটুকু শুনতে পেল না। না হলে ঠিকই এতক্ষণে লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে যেত। একবার নিজের হাত ঘড়িটার দিকে তাকাল। ৭:২৫ বাজে। আর মাত্র পাঁচ মিনিট। এর মধ্যেই তার কাঙ্খিত শিকার এসে যাবে। বেশ কয়েকদিন ধরে রেকি করে জেনে নিয়েছে তার শিকার ঠিক সাড়ে সাতটায় এই জায়গাটা অতিক্রম করে। এক মিনিট এদিক সেদিক হয় না। আপাতত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মানুষজনের কাণ্ডকারখানা দেখছে তরিকুল ইসলাম। বেশিরভাগই বুড়ােবুড়ি আর ডায়বেটিসেরর রােগি। ঠিক কিছুক্ষণ পর তারা কিসের সাক্ষি হতে চলেছে তা যদি জানতাে! তবে এসব নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই তরিকুল ইসলামের। কাজটা তাকে শেষ করতেই হবে। যেভাবেই হােক। মনে মনে আরেকবার ট্রায়াল দিয়ে নিল; কিভাবে কী করবে। কোমরের কাছে অনুভব করল পিস্তলটার উপস্থিতি। একটু কি শিউরে উঠল তরিকুল ইসলাম? বােধহয়। কোনদিন কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরবে এটা কল্পনাও করেনি। একেই মনে হয় বলে : “বাস্তবতা কল্পনাকেও হার মানায়। নিজের উপর আস্থা নেই তরিকুল ইসলামের। তাই বলে কাজে ব্যর্থ হওয়াও চলবে না। সুযােগ একটাই। এটাকেই কাজে লাগাতে হবে। সিগারেটে আরেকবার টান দিতে গিয়ে দেখল : শেষ। পাশেই বসা হকারের কাছ থেকে আরেকটা সিগারেট নিল। আজকেই তাে খাবে। সামনে কোনদিন খেতে পারবে কিনা সেটা তাে বলতে পারছে না। সিগারেটে টান দিতে না দিতেই দেখল দূরে তার শিকারের অবয়ব আস্তে আস্তে ফুটে উঠেছে। শেষবারের মত নিজের ইতিকর্তব্য ঠিক করে নিল সে। শিকার যতই সামনে আসছে উত্তেজনায় তরিকুল ইসলামের হার্টবিট ততই বেড়ে যাচ্ছে। ছয় ফিট উচ্চতার সুঠাম দেহের শিকারের পাকা গোঁফের কোণা যখন দৃষ্টিসীমায় এল, তরিকুল ইসলামের মনে হল তার হৃদপিণ্ড লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসবে। শিকার তার থেকে এক মিটার দূরে থাকতেই সন্তপর্ণে কোমর থেকে পিস্তলটা বের করে আনলাে। পিস্তলের মৃদু ক্লিক শব্দে শিকার সচকিত হয়ে তার দিকে তাকাল। শিকারের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বিপদ আঁচ করতে পেরেছে। কিন্তু এত কাছ থেকে কিছুই করার ছিল না। বেরেটা ৯২ এফ এস নাইন এমএম পিস্তলের বুলেট শিকারকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল। একটু দূরেই পেছন পেছন আসছিল শিকারের দুই বডিগার্ড। কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না। গুলি ছোঁড়ার আগমূহুর্ত পর্যন্ত তারা কিছুই বুঝতে পারেনি। যতক্ষণে বুঝতে পেরেছে ততক্ষণে চারটা বুলেট বিধেছে শিকারের শরীরে। যাকে বলে ক্লিন ডেড।
মন মেজাজ ভালাে থাকলে মােড়ের চা-দোকানি মান্নান মিয়া গল্প জুড়ে দেয়। গল্পটা এই মান্নান মিয়ার কাছ থেকেই শােনা। অনেক অনেক দিন আগের কথা, দুর্গম অরণ্যে এক দয়ালু সন্ত বাস করতেন। উনি ছিলেন এক ধন্বন্তরি চিকিৎসক। যে কোন রােগ সারাতে পারতেন। অসুস্থ কেউ উনার কাছে এসে খালি হাতে ফিরে যেত না। কিন্তু একটা জিনিস উনি সারাতে পারতেন না, সেটা হলাে মৃত্যু। মানুষের মরণশীলতা তাকে পীড়িত করতাে, ব্যথিত করতাে। জানতেন, মত্যর কাছে সবাই অসহায়। এক রহস্যময় গাছ খুঁজে পান তিনি। সন্তের মতে, গাছটি সহস্রাব্দ-প্রাচীন। মানবজাতির অভ্যুদয়ের আগে থেকেই আছে। কিন্তু কী সেই রহস্যময় গাছের মাহাত্ম? ঢাকা শহর জুড়ে কে জানি মানুষ খুন করে দেয়ালে এ্যাফিত্তি এঁকে যাচ্ছে-দুধ চা খেয়ে তােকে গুলি করে দেব। পত্রপত্রিকা উদ্ভট এক লেবেল সেঁটে দেয় খুনির-দুধ চা কিলার। পুলিশের সিনিয়র গােয়েন্দা রফিকুল ইসলামের কাছে খুনগুলাে এক বিরাট রহস্য। কে এই খুনি? কী চায় সে? এই দুর্বোধ্য এ্যাফিত্তির মানেই বা কী? বিদগ্ধ পন্ডিত ড. মেহবুব আরেফীন চৌধুরী হইচই ফেলে দেন দ্য ইকোনমিস্ট-এ চা বিষয়ক একটি আর্টিকেল লিখে-দ্য টি অব শ্যানং। সবার ধারণা ডক্টরের কাছে বিশাল এক রহস্যের চাবি আছে। চাবি নাও, খুলে যাবে অফুরন্ত সম্পদের ভান্ডার!
এক মাইথোলজিক্যাল মিস্ট্রি থৃলার, যার কাহিনি দানা বেঁধেছে বতর্দমান প্রেক্ষাপটে। প্রাচীন এক গুপ্তপুঁথির সূত্র ধরে দুই বন্ধু জড়িয়ে পড়ে হাজার হাজার বছরের লুকিয়ে থাকা এক অবিশ্বাস্য সত্যের সন্ধানে। ঐতিহাসিক সূত্র আর পৌরাণিক সংকেতের হাত ধরে এ গল্প আমাদের এনে দাঁড় করায় এক নতুন দিগন্তের সামনে। বর্তমানের এই আধুনিক কালে ফিরে আসে প্রাচীন সময়, ইতিহাস ও পুরাণের যুগ। এ কাহিনির ভূগোল বদলে গেছে বার বার--কখনও দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতার কলেজস্ট্রিট, রিষড়া, হেদুয়া, কসবা, র্মুর্শিদাবাদ কিংবা শিলিগুড়িতে। আর স্থান বদলের সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে গল্পের রহস্য। কাহিনির প্রত্যেক মোড়ে এক নতুন চমক অপেক্ষা করে আছে পাঠকের জন্য। চরিত্রগুলো এখানে পরিচিত মহলের কাছাকাছি থেকেও যেন মুখোশের আড়ালে। পাঠক এর প্রতিটি পাতায় খুঁজে পাবেন রহস্য-রোমাঞ্চ। প্রথম প্রকাশেই বইটি সাড়া জাগিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে, এবার বাংলাদেশের বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হলো।