তারা ডুবে ছিলেন ভোগবিলাসিতায়, প্রাচুর্য আর লোভ-লালসায়। গাড়ি, বাড়ি, অর্থকড়ি, সম্মান ও যশখ্যাতি—সবই ছিল তাদের জীবনে। ছিল না কেবল মানসিক প্রশান্তি। তাদের অন্তরে ছিল অন্তহীন এক অতৃপ্তি। কীসের যেন এক শূন্যতা। হৃদয়জুড়ে এক নীরব আর্তনাদ। দিনের পর দিন প্রার্থনায় লীন হয়েছেন তারা। সত্যকে খুঁজে পেতে কখনো দিনরাত গবেষণা, কখনো-বা করেছেন জ্ঞানীদের সাথে বৈঠক-আলোচনা। অবশেষে মহান আল্লাহর অশেষ করুণায় তাদের সামনে উন্মোচিত হয় এক আলোকিত পথ। সেই সাথে নেমে আসে কালবোশেখী ঝড়। লন্ডভন্ড হয়ে যায় তাদের এতদিনের সাজানো পৃথিবী। পাহাড়সম বাধা, কল্পনাতীত পরীক্ষা আর সীমাহীন যন্ত্রণা তাদের পথ আগলে দাঁড়ায়। তবু তারা সত্যের পথে অবিচল থাকে। আল্লাহকে ভালোবাসে তারা আঁকড়ে ধরে ইসলাম। খ্রিষ্টবাদ ছেড়ে ইসলামে আসা পাদরিদের এমনই অশ্রুভেজা, ঈমানদীপ্ত, বাস্তব সব ঘটনায় গড়ে উঠেছে আমাদের এবারের আয়োজন—‘প্রত্যাবর্তন ২.০’।
নাস্তিকদের উত্থাপিত প্রশ্ন, অভিযোগ আর আপত্তির প্রতিউত্তর নিয়েই রচিত হলো ‘জবাব। চিন্তাশীল, ভাবনা-জাগানিয়া, গবেষণাধর্মী লেখার সমৃদ্ধ একটি সংকলন এটা। প্রাণোচ্ছলে ভরপুর একঝাঁক তরুণ লেখকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল এই গ্রন্থ। ২০১৩ সালের শেষ দিকে হঠাৎ করে কমিউনিটি ব্লগগুলো এদেশে বেশ পরিচিতি পেতে শুরু করে। অসংখ্য মানুষ শখের বশে লেখালেখি আর সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে যুক্ত হতে থাকে সেসব ব্লগে। বলা বাহুল্য—এ সুযোগটিকে চমৎকারভাবে লুফে নেয় বাংলার তথাকথিত নাস্তিক-মহল। সে সময়ে নাস্তিকরা যতটা সাড়ম্বরে ব্লগের জগতে আসে, চিন্তাশীল মুসলিমদের পদচারণা ছিল ততটাই নির্জীব। অবশেষে ২০১৮ সালের পর থেকে কিছু তরুণ মুসলিম ভাইদের দৃঢ় প্রচেষ্টা এবং তাদের বিশ্বাসের কথাগুলো ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে আমাদের এবারের প্রয়াস—‘জবাব ২.০।
আমাদের যাপিত জীবনে ইসলামি মূল্যবোধের উপস্থিতি ঠিক কত খানি? প্রাত্যহিক জীবনে ঠিক কতটুকু আমরা আমাদের মৃত্যু আর পরকাল নিয়ে ভাবি? অথচ এসবকে ঘিরেই আমাদের নিত্য দিনের কার্যকলাপ প্রভাবিত হয়। হৃদয়ে আল্লাহভীতি তৈরি হয়। আমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে, পরকালের কথা মনে গেঁথে দেবে জীবন-ঘনিষ্ঠ এমন কিছু বাস্তব ঘটনার গল্প নিয়েই ‘অশ্রুজলে লেখা’ বইটির আয়োজন। এতটুকু দৃঢ়তার সাথেই বলা যায়—যেকোনো পাঠকের হৃদয়কেই বইটির সার্বিক বিষয়বস্তু দারুণভাবে স্পর্শ করবে। শুধু তা-ই নয়, জীবনে চলার পথেও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে, ইনশাআল্লাহ।
শিশুরা গল্প শুনতে বা পড়তে ভালোবাসে। কিন্তু সব গল্পই কি শিশুদের ভালো লাগে? না। শিশুরা তাদের মতো গল্প পছন্দ করে। কখনো রূপকথা, কখনো বীরত্ব, কখনো বা শিক্ষণীয় গল্প প্রভাবিত করে তাদের। কখনো শুনতে চায় নিজের জীবনের গল্প। গল্প শিশুদের কল্পনাশক্তিতে প্রখর করে। তাদের ভবিষ্যত চিন্তাকে প্রভাবিত করে। তাদের জীবন বদলে দেয় অনেক গল্প। কিন্তু রূপকথার গল্পগুলো তো মিথ্যা। অনেক গল্প আছে যেগুলো অবাস্তব কাহিনিতে ভরা। আবার অনেক গল্প এমনও আছে যেগুলো ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক। তাহলে কোন গল্প শোনাবো তাদের? কেমন হয় যদি শিশুদের গল্প শোনাই কুরআনের আয়াত দিয়ে? যে গল্পে নায়ক থাকবে সে নিজেই। যে গল্প কোনো রূপকথা নয়, কোনো কল্পনা নয়; বরং তার জীবনের গল্পই বলা হবে কুরআনের আয়াত অনুযায়ী। তার পরিবার, বন্ধু, স্কুল আর চারপাশের পরিবেশই হবে তার গল্পের প্লট। কুরআনের এক-একটি আয়াত অনুযায়ী এমনই যুগোপযোগী গল্প বলেছেন নন্দিত লেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর। আমাদের সময়ের গল্পগুলোই সাজিয়েছেন কুরআনের আয়াত অনুযায়ী। শিশুদের ঈমানি চরিত্র ও জীবন নির্মাণের এক অভিনব আয়োজন এক একটি বই।
পশ্চিমা ও হিন্দু সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের সন্তানরা মূলত কী শিখছে? ইন্টারনেট-টিভির মুক্ত সংস্কৃতির বদৌলতে ছোটবেলায় তারা শিখছে হ্যারি পটার, সুপার হিরো, ডিসি-মার্ভেল, রাম-ভীম-শিব আর ঠাকুরমার ঝুলির সব মিথ্যা গল্প। এই মিথ্যা ও বানোয়াট গল্পগুলো শিশুদের মনে এমনই প্রভাব ফেলে, বিশ্বাস করতে শুরু করে—পৃথিবীকে ধ্বংস ও অন্যায়ের হাত থেকে বাঁচাতের পারে কেবলই সুপারহিরো আর হিন্দুদের দেবতারা। ফলে, একটু বড় হলে যখন আমরা আমাদের সন্তানদের ইসলাম ও ইবাদত পালনের কথা বলি, সেগুলো তাদের মনে কোনো রেখাপাত করে না। নবী, সাহাবি, আউলিয়া, আলেম আর পীর-মাশায়েখদের জীবন ও জীবনের গল্প যখন তাদের শোনাই, সেগুলো তাদের কাছে পানসে লাগে। একদমই মনে দাগ কাটতে চায় না। ফলতঃ দেখা যায়, ভবিষ্যত জীবনে ইসলামি অনুশাসনের পবিত্র পিঞ্জরে আগলে রাখা সম্ভব হয় না তাদের। এজন্য শিশু বয়সেই সন্তানদের মন-মস্তিষ্কে স্থান দিতে হয় নবী-রাসুল, সাহাবি-তাবেয়ি এবং ইসলামি আদর্শের চেতনা। আর শিশু-কিশোরদের মনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে নানা স্বাদের গল্প। হরেক রকম গল্প। গল্পের বুনন তাদের মনের মধ্যে রোপন করে বিশ্বাসের চারাগাছ। তাই তাদের শোনাতে হয়, দেখাতে হয়, পড়াতে হয় সত্য গল্প। যে গল্প তাদের জীবনকে উজ্জীবিত করবে ইসলামের পথে। নন্দিত লেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর সাহাবিদের জীবনের এমন গল্প নিয়েই লিখেছেন ‘ছোটদের সাহাবি সিরিজ’-এর ৫টি বই। শিশুতোষ ঢংয়ে লেখা এবং চাররঙা ঝকঝকে কাগজে ছাপা বইগুলো শিশু-কিশোরদের পরিচয় করিয়ে দেবে আমাদের শিকড়ের সঙ্গে। আধুনিকতা আর পাশ্চাত্যের মোহে যে শিকড়ের কথা আমরা ভুলতে বসেছি প্রায়।
আপনার শিশু নিশ্চয়ই গল্প শোনার বায়না ধরে, কখনোও-বা কিছু পড়তে চায়। তখন আপনি কী করেন? কী গল্প শুনিয়ে দেন? আচ্ছা, তাদের হাতে কি রূপকথার কোনো গল্পের বই তুলে দেওয়া কথা ভাবছেন? তাহলে নিশ্চিত থাকুন- মনের অজান্তেই শিশুর মনে শিরক ও কুফরের বীজ বপন করে দিচ্ছেন। অথচ, পবিত্র কুরআনেই রয়েছে অসংখ্য চমৎকার কাহিনি, ভ্রমণ বৃত্তান্ত, পৃথিবীর সেরা ব্যক্তিদের জীবনী, মন্দ লোকদের করুণ ইতিহাস, শিক্ষামূলক ঘটনা, সঠিক পথে পরিচালিত করার দিক-নির্দেশনা, দুআ ও প্রার্থনা। এসবই আমাদের আলোর পথ দেখিয়ে দিতে পারে। কুরআনুল কারিমের অনুপম কাহিনিগুলো পড়ে আমাদের শিশুরা তাদের জীবনের দিশা খুঁজে পাবে। শিশু-মনে বিশ্বাসের পরশ বুলিয়ে দিতেই ‘গল্পে গল্পে আল কুরআন’ সিরিজ। এ সিরিজ শিশুদের জন্য দারুণ এক উপহার। এ সিরিজ পড়ে শিশুরা সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, সত্যবাদী এবং মা-বাবার জন্য সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে গড়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ।