‘থ্রি জিরো’ নামের ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী টার্গেট করেছে ওআইসির গোপন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আইআরটি’-কে। আইআরটি আবিষ্কার করেছেন ‘সোর্ড’ নামের একটি মানবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। থ্রি জিরোর টার্গেট সোর্ড-এর ফর্মুলা হাত করা। আহমদ মুসা এই ষড়যন্ত্রের কণ্ঠরোধে যে ডালেই বসেছে, সে ডালই ভেঙে পড়ছে। সোর্ড অস্ত্রের জনক বিজ্ঞানী আন্দালুসিকে কিডন্যাপ করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তারা প্রেসিডেন্টকে পণবন্দি করার পরিকল্পনা করল। তারপর... টার্কিস ‘আরা আরিয়াস’ এলাকায় পাঁচশো পরিবারের বাস। হঠাৎ করেই এই এলাকায় মাফিয়া-সন্ত্রাসের উদ্ভব। আজদা আয়েশা জার্মানি থেকে পিএইচডি করে দেশে ফিরে দেখল তার ভাই আতা সালাহ উদ্দিনের যাবজ্জীবন জেল। ঘটনার গভীরে গিয়ে দেখা গেল গভীর ষড়যন্ত্রের এক গুঞ্জন। অন্যদিকে পূর্ব আনাতোলিয়া ঘিরে একটা ষড়যন্ত্র নিয়ে এগোচ্ছে গোপন সংগঠন হোলি আরারাত গ্রুপ। সেনাবাহিনীর এক জেনারেল ষড়যন্ত্রের গোড়ায়। সংঘাত-সংঘর্ষ পাড়ি দিয়ে সেখানে আবারও ফিরে এলো আহমদ মুসা। ওদের ষড়যন্ত্র কি সফলতার দ্বারপ্রান্তে? প্রতিভাধর কিছু মানুষ প্রতিনিয়ত নিখোঁজ হচ্ছে দুনিয়া থেকে। এ নিয়ে হইচই হচ্ছে, কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই। এগিয়ে এসেছে আহমদ মুসা। কিন্তু চারদিকে শুধুই অন্ধকার? ‘ব্ল্যাক সান সিন্ডিকেট’-এই নামটাই সে শুধু পেয়েছে। গোটা দুনিয়ায় ওদের হাত, ওদের উপস্থিতি। অবশেষে সে জানতে পারল, কোনো এক ‘অ্যাটল দ্বীপ’ তাদের ঠিকানা। কোথায় সে দ্বীপ, তারই সন্ধানে আহমদ মুসার নতুন যাত্রা।
তাকফির নিয়ে বাড়াবাড়ি (পেপারব্যাক) - কাফির ঘোষণার শরঈ দৃষ্টিভঙ্গি; এতদ্সংক্রান্ত ভুল বোঝাবুঝি ও সীমালঙ্ঘন: একজন দাঈ ও বিচারকের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে। বিচারককে অবশ্যই মানুষের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে খুঁটিনাটি অনুসন্ধান করতে হয়, যেন পক্ষে বা বিপক্ষে রায় দিতে পারেন। সেজন্য বিচারককে বিচারাধীন মানুষজন সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের বিশ্লেষণ প্রয়োগ করতে হয়, তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে হয়। কারণ, অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্দোষ হলে বিচারক তাদের নির্দোষ ঘোষণা করতে কিংবা দোষী হলে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে পারেন। অন্যদিকে একজন দাঈর কর্তব্য হলো-তিনি সবাইকে আহ্বান করবেন, সবার কাছে তাঁর বার্তাগুলো পৌঁছে দেবেন, সবাইকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসবেন। একজন দাঈ ইসলামের বাণীকে সমগ্র মানবজাতির কাছে সাধ্যমতো ছড়িয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করবেন-যাতে একজন পথভ্রষ্ট ব্যক্তি পথ খুঁজে পায়, পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তওবা করে ফিরে আসে, মূর্খ ব্যক্তি শেখার সুযোগ পায়; এমনকী একজন অমুসলিম ব্যক্তিও যেন ইসলামকে সাদরে গ্রহণ করার আগ্রহ অনুভব করে। কোনো ভুলকারীর শাস্তি কী হবে, সেটি নিয়ে কখনো দাঈ কাজ করে না; বরং কীভাবে সেই ভুলকারী ব্যক্তিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয় নিয়েই দাঈ কাজ করে। একজন দাঈ কখনো মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ করার জন্য মুরতাদ খুঁজে বেড়ায় না; বরং একজন মুরতাদকে ইসলামের সংরক্ষিত আঙিনায় ফিরিয়ে আনার প্রয়াস চালানোকেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব মনে করে।
মহান আল্লাহ একদিন ফেরেশতাদের ডেকে বললেন-‘আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি পাঠাতে চাই।’ অর্থাৎ এমন প্রাণী, যারা আমার বিধিবিধান মেনে চলবে। ফেরেশতারা আল্লাহর উদ্দেশ্য বুঝতে পারেননি। তাঁরা ভাবলেন, আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য তো তাঁরাই আছেন। আবার আলাদা করে মানুষ বানানোর কী দরকার? তাই তাঁরা জানতে চাইলেন-‘আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে পাঠতে চাইছেন-যারা রক্তারক্তি করবে, কাটাকাটি করবে, হানাহানি করবে? অথচ আপনার ইবাদত করার জন্য তো আমরাই আছি।’ আল্লাহ বললেন-‘আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।’ অর্থাৎ আমার পরিকল্পনা সম্পর্কে তোমাদের কোনো ধারণাই নেই। আর ধারণা থাকবেই-বা কী করে! আল্লাহ অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সবই জানেন। এ ক্ষমতা যে আর কারও নেই!
এবার সাউথ টার্কস দ্বীপে হোয়াইট ইগলের মুখোমুখি আহমদ মুসা। টার্ক দ্বীপ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেলেও হোয়াইট ইগলের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বন্দি হলো সে। বন্দি আহমদ মুসাকে বিলিয়ন ডলারে ইজরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বিক্রি করে করে দিতে চায় হোয়াইট ইগল। একদিকে হোয়াইট ইগল, ক্লু-ক্ল্যাক্স-ক্লান ও সিনবেথ অন্যদিকে আহমদ মুসা, শিলা সুসান, মেরি রোজ ও সান ওয়াকার। শুরু হলো নতুন চমক। লায়লা জেনিফা ও মার্গারেটকে উদ্ধারের পূর্বেই আহমদ মুসাকে ছুটতে হলো নিউ মেক্সিকোর সবুজ পাহাড়ে। বন্দি কারসেন ঘানেমকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেই বন্দি হয়ে এক নতুন রহস্য ও সংকটের মুখোমুখি আহমদ মুসা। এমন ঘোর অমানিশায় পরিচয় ঘটে সান্তা আনা পাবলো এবং ‘ফ্রি আমেরিকান’ নেতা বেঞ্জামিন বেকনের সঙ্গে। আর আত্মরক্ষা নয়, এবার আক্রমণের পালা। পালটা আক্রমণের অস্ত্র শানিয়েই আহমদ মুসা অগ্রসর হয় চরম শত্রু হয়ে উঠা র্জজ আব্রাহামকে বন্ধু বানানোর জন্য। তার দেওয়া তথ্যে ইহুদিদের বীভৎস রূপ দেখে কেঁপে উঠে মার্কিন প্রশাসন। শুরু হয় ইহুদিবাদীর বিরুদ্ধে আরেক যুদ্ধ। অপরদিকে মন্টিসলোতে বিপদের সম্মুখীন সারা জেফারসন। আবার শ্যারনের শেষ ছোবল গিয়ে আঘাত হানে মার্কিন প্রশাসনকে। কে জিতবে এই দ্বন্দ্বে? ষড়যন্ত্র নাকি দেশপ্রেম?
একদিন সবাই মিলে মিশরে রওয়ানা দিলেন। হাজির হলেন ইউসুফ আলাইহিস সালামের রাজদরবারে। ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাঁর বাবাকে দেখতে পেয়ে আনন্দে জড়িয়ে ধরলেন। অনেক অনেক বছর পরে পিতা-পুত্রের মিলন হলো। ইউসুফ আলাইহিস সালাম এখন মিশরের বাদশাহ। সারা দেশে তাঁর কত সম্মান, কত প্রতিপত্তি! ইউসুফ আলাইহিস সালামকে সম্মান জানাতে তাঁর বাবা-মা, এগারো ভাই তাঁকে একসাথে সিজদা করলেন। সে সময় কাউকে সম্মান জানাতে সিজদা করার নিয়ম ছিল। কিন্তু এখন আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সিজদা দেওয়া নিষিদ্ধ। তোমাদের নিশ্চয় ইউসুফ আলাইহিস সালামের স্বপ্নের কথা মনে আছে। ওই যে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন-১১টি তারা, চাঁদ আর সূর্য তাঁকে সিজদা করছে। ১১টি তারা হলো তাঁর ১১ ভাই। চাঁদ আর সূর্য হলো তাঁর মা-বাবা।
কাবাঘর নির্মাণের পর ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আরও অনেক দিন বেঁচে ছিলেন। সারা জীবনে আল্লাহ তাঁকে অনেকবার পরীক্ষা করেছিলেন। সেই যে আগুনে ফেলে দেওয়া, নিজের একমাত্র ছেলেকে মরুভূমিতে রেখে আসা, নিজের ছেলেকে কুরবানি দেওয়া... ইবরাহিম আলাইহিস সালাম প্রতিটি পরীক্ষায় অত্যন্ত ভালোভাবে পাশ করেন। তিনি আল্লাহর সব আদেশ পালন করেছেন। কখনো কোনো হুকুম মানতে দ্বিধা করেননি। প্রশ্ন করেননি। তাইতো তিনি হয়েছেন আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় বান্দা। তাঁর আরেক নাম খলিলুল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহর অন্তরঙ্গ বন্ধু। আল্লাহর সব আদেশ মেনেছেন বলেই তিনি আল্লাহর এত প্রিয় হতে পেরেছেন। তাই আমরাও চেষ্টা করব, আল্লাহর সব আদেশ মানার জন্য। আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন, তা থেকে দূরে থাকার জন্য। আর আল্লাহর পথে চলতে গেলে অনেক দুঃখ-কষ্ট আসবে, অনেক পরীক্ষা আসবে। কিন্তু আমরা যদি সব পরীক্ষায় ধৈর্য ধরে পাশ করতে পারি, তাহলে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মতো আল্লাহ আমাদের ওপরও খুশি হবেন।