কুরআনের পরশে প্রতিটি বস্তুই পরিণত হয় পরম সম্মান ও মর্যাদার পাত্রে। যে-মাসে এ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, সে-মাস অন্য মাসের চেয়ে অধিক সম্মানের। যে-রাতে এ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সে-রাত অন্য রাতের তুলনায় অধিক মর্যাদার। যে-নবীর ওপর এ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, তিনিই সকল নবীর পথিকৃৎ। অতএব, কুরআনের সংস্পর্শে এসে কুরআন অধ্যয়ন ও মুখস্থ করে একজন সাধারণ মানুষও পরিণত হন মহান ব্যক্তিত্বে। আর এভাবেই রচিত হয়েছিল ইসলামের ইতিহাসে কুরআন মুখস্থকরণের সোনালি অধ্যায়। কীভাবে পবিত্র কুরআন ও হাদীস সহজে মুখস্থ করা যায়, কীভাবে তা স্থায়ীভাবে ধারণ করা যায় এবং এর সহায়ক উপায়সমূহ কী—এসব নিয়ে চমৎকার আলোচনার সমাবেশ ঘটেছে মূল্যবান এই গ্রন্থখানিতে।
একজন মানুষের হাত ধরে পাল্টে গেল পৃথিবীর ইতিহাস। মোড় নিল বিশ্ব রাজনীতি। সভ্যতা পেল নতুন এক মাত্রা। সেই মানুষের হাত ধরে পৃথিবীতে আবার নেমে এলো হিদায়াতের ফল্গুধারা। মানুষটার নাম মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। একজন মানুষ এসে পৃথিবীকে এমনভাবে নাড়িয়ে দিয়েছেন—এমন ঘটনা পৃথিবীতে আর দুটো নেই। মানবতার মুক্তির দূত এই মহামানবের জীবনী লেখক এমন ঢঙে উপস্থাপন করেছেন, পড়তে গিয়ে পাঠকের মনে হবে যেন তারা চোখের সামনেই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতে পাচ্ছেন। বইটির নামও রেখেছেন সেভাবে—মুহাম্মাদ : কাআন্নাকা তারাহু। তার অন্যতম সেরা কাজ এই ‘মুহাম্মাদ : কাআন্নাকা তারাহু’। আমরা বইটির নাম রেখেছি—নবীজি। বইটিতে নবীজির জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। নবীজির নাম, বংশ, জন্মভূমি, শৈশব, নবুওয়াত, ধর্ম, ঐশীগ্রন্থ, সত্যবাদিতা, ধৈর্য, মহানুভবতার মতো তার আরো অনেক মানবিক গুনাবলী সম্পর্কে এই বই থেকে জানা যায়।
আমাদের জীবনটা বড্ড সমস্যা সংকুল। এই জীবন কখনো যদি আমাদের সামনে বিপদের ঢালি নিয়ে হাজির হয়, আমরা ভেঙে পড়ি। ভেতরে ভেতরে গুড়িয়ে যাই। আমরা বুঝতে চেষ্টা করিনা যে, বহতা নদীর স্রোতের মতো জীবনের গতিপথ সরল এবং সোজা নয়; বরং তা সৃষ্টিগতভাবেই দুর্গম, বন্ধুর এবং কণ্টকাকীর্ণ। মুমিন ব্যক্তি মাত্রই বিশ্বাস করে যে, যত সংকটই আসুক না কেন, তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। ফলে সে বিপদে পড়েও ক্ষোভ, হতাশা ও অস্থিরতা প্রকাশ করে না। বরং নিজের ভাষা ও আচরণ সংযত রাখে। কারণ, সে আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে বিশ্বাসী। সে বিশ্বাস করে যে, মুমিনের জন্য বিপদ-আপদ নিয়ামতস্বরূপ। কারণ, এর দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। বিপদে ধৈর্য ধারণ করলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকট থেকে যথাযথ প্রতিদান পাওয়া যায়। তাই মুমিন বিপদে পড়লে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি কান্নাকাটি করে। আল্লাহর কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে। সৃষ্ট জীব থেকে বিমুখ হয়ে এক আল্লাহর দিকে ফিরে আসে।
‘সন্তানঃ স্বপ্ন দিয়ে বোনা’ বইয়ের কিছু কথাঃ সন্তান, নিছক কোনো জৈবিক ক্রিয়ার ফল নয়; বরং তারা আমাদের স্বপ্ন, আমাদের পৃথিবী এবং আখিরাতের পাথেয়। সন্তানকে যদি শৈশব থেকে সদাচরণ, সত্য কথা বলা আর পাপ-পুণ্যের পাঠ না দেওয়া হয়, তাহলে বড় হওয়ার সাথে সাথে সেই সন্তান মা-বাবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তাকে আর কোনোভাবেই মূল্যবোধের পাঠ শেখানো যায় না। একজন মুসলিমের কাছে সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্বটা আরও বিশাল। মুসলিম মা-বাবার অবশ্য কর্তব্য হলো—তাদের সন্তানদের প্রকৃত মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা। সন্তানকে প্রকৃত মুসলিম হবার এই পাঠ খুব শৈশবেই দিতে হয়। সন্তান যেদিন জন্মলাভ করে, সেদিন থেকেই মা-বাবার ওপর এই দায়িত্ব এসে পড়ে। সন্তানের নাম রাখা থেকে শুরু করে তার আকীকা, তার শিক্ষাদীক্ষাসহ বিস্তৃত দিকনির্দেশনামূলক বইয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই কলম হাতে তুলে নিয়েছেন উস্তায আকরাম হোসাইন হাফিজাহুল্লাহ। সন্তান গ্রহণের উপযুক্ত সময়-নির্ধারণ থেকে শুরু করে একেবারে সন্তানের লালন-পালনের খুঁটিনাটি বিষয়সমূহও লেখক নজরে এনেছেন। এমনকি, নিঃসন্তান দম্পতি, তাদের প্রতি অন্যদের আচার-আচরণ ও সমাজের অবস্থানের বিষয়াদিও স্থান পেয়েছে লেখকের কলমে।‘প্যারেন্টিং’ বিষয়ে উস্তায আকরাম হোসাইন হাফিযাহুল্লাহর ‘সন্তান : স্বপ্ন দিয়ে বোনা’ বইটি সন্তানদের ভালো মানুষ, ভালো সন্তান এবং সর্বোপরি প্রকৃত মুসলিম হিসেবে গড়ে তুলতে মা-বাবাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
যখন হৃদয় হয় আর্ত, তৃষ্ণার্ত। যখন হৃদয় আকাশে নেমে আসে চৈত্রের দাবদাহ। যখন হৃদয়-জমিন মরুভূমির মতোন হাহাকার করে, তখন কুরআন যেন সেখানে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে নামে। উত্তপ্ত আকাশে একখণ্ড মেঘের মতো। কুরআন যেন হৃদয়ের জন্যই রচিত, অথবা হৃদয়ের জন্যই কুরআনের আগমন। হৃদয়ের সমস্ত আকুলতা-ব্যাকুলতা, সমস্ত আকাঙ্খার স্রোত যেন কুরআনের কাছে এসে থেমে যায়। কুরআনের শব্দেই হৃদয় ধ্বনিত হয়। কুরআনের ঝংকারে মধুর কল্লোল জেগে ওঠে হৃদয় সমুদ্রে। কুরআন যেন কোনো মোহিত গানের সুর যা হৃদয়কে ছুঁয়ে যায় পরম আবেশে। সেই আবেশে হৃদয়ের কথাগুলো খুঁজে পায় প্রাণ। এমন কথাগুচ্ছের সম্মিলনের নাম ‘কুরআনের সাথে হৃদয়ের কথা’।
জ্ঞানের রাজ্যে ডুব দেবার এক নিরন্তর অভিযান, এক অদম্য জীবনের গল্প। কখনো কেবল একটি হাদিসের জন্য তারা ছুটে গিয়েছেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে, কখনো-বা রাতের পর রাত কাটিয়ে দিয়েছেন কোনো একটি আয়াতের নিগূঢ় অর্থ উদ্ভাবনে। তারা ছিলেন প্রাণবন্ত। সদা উৎফুল্ল। তাদের রাতগুলো ছিল ইবাদতময়। দিনগুলো কর্মমুখর। কুরআনের সাথে তাদের যেন গভীর এক মিতালি। নিঃসন্দেহে তারা সুন্নাহর অতন্দ্র প্রহরী। সত্যের এক প্রকৃত বন্ধু। মিথ্যার ঘোরতম শত্রু। তারা আমাদের মহান ইমাম। আমাদের পূর্বসূরি। সেই মানুষগুলো, যারা আলোকিত করে গেছেন আঁধারকালো পথ; দেখিয়েছেন সহজ-সরল পন্থা। আমাদের জন্য জ্ঞানরাজ্যের সকল দ্বার উন্মুক্ত করে যাওয়া সেই মহান মানুষগুলোর জীবনী আমরা মলাটবদ্ধ করেছি ‘ইমাম সিরিজ’-এ।