স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে নিরুদ্দিষ্ট নয়মাস 'দৈনিক বাংলা ' কাগজে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৭১ সালের জুন মাস থেকে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি -এই নয় মাস দেশের বাইরে ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে মোটিভেটর হিসেবে কাজ করেছেন। মুজিবনগর সরকারের সাপ্তাহিক মুখপত্র 'জয় বাংলার' নির্বাহী সম্পাদক এবং স্বাধীন বাংলা বেতারে স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে তাঁর সেই সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই বই। এটা শুধু তাঁর দেশ ত্যাগের পরের কাহিনিও নয়। আগের চারমাসের কাহিনিও এখানে সন্নিবেশিত হয়েছে।
মুঘল অধিকৃত সুবে-বাংলা একনা ছিলো এক স সম্পন্ন জনপদ। এখানকার মানুষগুলির জীবন জুড়ে ড়ে ছিলো নিরবিচ্ছিন্ন প্রশান্তি আর সুখ সমৃদ্ধি। মসলিন নাম নামক মায়াবী তত্ত্বতে যেন গাঁথা ছিলো মানুষগুলি জীবন। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র দিল্লি-আত্মার মানুষগুলি যেমন ভালোবাসায় আবেগে অভিভূত হয়েছে, প্রেমের কুহকে দিশেহারা হয়েছে, আবার সঠিক পথ খুঁজে পেয়েছে, তেমনি মুঘলদের সুবেদার শাসিত সুবের মানুষগুলির জীবন আবর্তিত জাগতিক আর মানবিক চালিকা শক্তি দ্বারা। 'বিচলিত সময়' ইতিহাস আশ্রিত একটি আলেখ্য। ইতিহাস আশ্রিত কিন্তু ইতিহাস নয়। ইতিহাস ঘটনা পরস্পরায় খতিয়ান। আর উপন্যাস ঘটনার মোড়কে মানব-মানবীর হৃদয়মথিত চিত্রায়ণ। উপন্যাসটির পটভূমি বিশাল এবং ব্যাপক। আর সেই পটভূমি বাঙ্ময় হয়েছে কয়েকজন মানব-মানবীর পদচারণায়। বিচলিত সময়ের প্রধান চরিত্রগুলি ইতিহাসের মোড়ক উন্মোচন করে জীবন্ত হয়ে উঠেছে লেখকের লেখনির কুশলতায়। ইতিহাসের আলো আঁধারি থেকে উঠে আসা কবি সৈয়দ জাফর, দেবদাসী নর্তকী রশমী, অহম রাজকন্যা নাঙছেন গাভারু, পর্তুগিজ কুঠিয়ালের বাঙালি ঘরণী মারিয়া প্রভৃতি চরিত্রকে যেন আমাদেরই আপনজন বলে মনে হয়। আর নতুন করে পাঠককে নিয়ে যায় আমাদের অনেক চেনা লালবাগ দূর্গ আর পরী বিবির ছায়াচ্ছন্ন দিনগুলিতে। অনুপুঙ্খ বর্ণনা সতেরোশ' শতকের বাঙালি সমাজের চালচিত্র বইটির উপরি পাওনা। সুদূর আমেরিকায় বসে লেখা এই বইটি লেখক আবদুন নূরের মেধা-মননের স্বাক্ষর হয়ে থাকবে। -ফখরুজ্জামান চৌধুরী
সুবেদারের দায়িত্ব নিয়ে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র মুহম্মদ আজম শাহ বাংলায় এসেছিলো ৮ই জুন ১৬৭৮ সালে। শিতা আওরঙ্গজেব তার উপর ন্যস্ত করেছিলো তিন তিনটি দায়িত্ব। এক, মেহনতী বাংলার রায়তদের শোষণ রোধের প্রয়াস, দুই, স্বীয় স্বভর শায়েস্তা খান প্রশাসনের দুর্নীতি ও করের অর্থ তসরুণের অভিযোগের তদন্ত এবং তিন, সুদূরের চীন সীমান্ত পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্য প্রসারিত করার প্রচেষ্টা। মাত্র পনেরো মাসের সফল প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে দাক্ষিণাত্যের বিদ্রোহ দমন করার সমন পেয়ে সে ঢাকা ছেড়ে চলে যায় অক্টোবর ১৬৭৯ সালে। সেই সময়কালের প্রেক্ষাপটে সতেরোশ' শতাব্দীর শাসিত বাঙালি সমাজের ক্রমবর্ধমান আত্মচেতনা, বাঙালি কবি ও শিল্পীর আত্মপরিচয় এবং সংগ্রামকে বিধৃত করছে এ উপন্যাস। উপন্যাসের বিবিধ চরিত্র কবি সৈয়দ জাফর, দেবদাসী নর্তকী রশমী, মসলিন শিল্পী মা আমেনা বেগম, পর্তুগিজ কুঠিয়ালের ঘরণী বাংলার মেয়ে মারিয়া, মসজিদের আত্মসন্ধানী ইমাম শামসুদ্দীন, জিঞ্জিরার মন্দিরের সংসারত্যাগী পূজারী, বাংলার চিরায়ত সমাজ জীবনের স্বাক্ষর ও প্রতীক। -ফখরুজ্জামান চৌধুরী