বিকেলের দিকে হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামল। হৃদি তখন খোলা মাঠে একটা শুকনো খড়ের গাদার ওপর বসেছিল। যতদূর চোখ যায়, কোথাও কেউ নেই। কেবল ধুধু ফসলের মাঠ। মাঠের পাশে নদী। নদীর বুকে শব্দ। সেই শব্দে নুপূরের ছন্দ তুলে নেমে এল বৃষ্টি। হৃদি তটস্থ গলায় বলল, ‘এখন ? এখন কী হবে ?’ ‘কী হবে ?’ ‘এই যে বৃষ্টি চলে এল।’ ‘তাতে কী ?’ ‘আমি এই ভেজা শাড়িতে ফিরব কী করে ?’
কোনো এক প্রাগৈতিহাসিক নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির প্রাচীরে গন্তব্যহীন অন্ধকার হয়ে সেঁটে রইল তারা। অযুত বাধার অজস্র পথ পেরিয়ে এসেও যেন ডিঙাতে পারল না অনভ্যাসে অগম্য হয়ে ওঠা অকর্ষিত অভিমানী মনভূমিটুকু। কিন্তু তাদের মন ও শরীর আলগোছে হাওয়ায় ছড়িয়ে দিতে লাগল স্মৃতির সুবাস। সেই সুবাস কি ডিঙিয়ে যেতে পারবে এই অলঙ্ঘনীয় দ্বিধার দেয়াল? হেমন্তের বিষণ্ণ সন্ধ্যায় দূর কোথাও থেকে ভেসে আসছে অদ্ভুত হাহাকারের সুর। বুকের ভেতর আলগোছে নেমে আসছে মেঘ কিংবা কুয়াশা। কিংবা গাঢ় শীতল অন্ধকার। নাম না জানা দুঃখ। সেই দুঃখের ভেতর মন কেমনের হাওয়া। সেই হাওয়ায় ওই বিষাদ অন্ধকারে যেন স্থির হয়ে আছে প্রাচীন পাথরে খোদাই করা দুটি মূর্তি। কী আশ্চর্য, সেই মূর্তির বুকেও হঠাৎ জলের ঢেউয়ের মতো ছলাৎ ছলাৎ শব্দ হতে থাকে!