রম্য না থাকলে বাঙালির জীবন পূর্ণ হয় না। রম্যের আশ্রয়ে থাকে কটাক্ষ, শ্লেষ, ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ ও ইঙ্গিত— সাহিত্যে যেগুলোর ক্ষমতা অকিঞ্চিৎকর। আবেদনও প্রবল। কাল্পনিক সংলাপের মধ্য দিয়ে এগুলো প্রকাশ হলেও এসব বাস্তবেরই প্রতিভূ। চলমান সমাজের সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতির বেশ খানিকটা চিত্র পাঠকের চোখে ফুটে উঠবে যখন তিনি এই রম্যগ্রন্থে নাট্যরূপের পর্বগুলো পড়বেন। চরিত্রগুলো যেন অনেক চেনা। রাজনীতিক, কাল্পনিক মন্ত্রী, নেতা, কবি, শিল্পী থেকে শুরু করে এমনকি নিক্সন-ইয়াহিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত । একটি স্বাধীন দেশে বাস করলেও বাকস্বাধীনতা বর্ষার আকাশের মতোই অস্বাচ্ছন্দ্যকর—কখন যে বদলায় তা বলা কঠিন। তাই রম্য ও কল্পসংলাপের আশ্রয়ে সমাজের অসঙ্গতিকে উন্মোচন করা প্রয়োজন। লেখক সে রকম একটা তাগিদ থেকেই পর্বগুলো তৈরি করেছেন। পাঠক তা অনুধাবনে এবং এর রস আস্বাদনে আনন্দ পাবেন—রম্য গ্রন্থের এই পরিবেশনা থেকে।
প্রতিদিনই আমরা নানা বিষয় নিয়ে হাসিঠাট্টা করি। সমাজ ও দেশের বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে কৌতুক করি, মিম বানাই। সে রকমই কিছু সমস্যা লেখক রম্য ভঙ্গিতে এ বইয়ের রচনাগুলোতে তুলে ধরেছেন, যা একই সঙ্গে আমাদের মন ও মস্তিষ্ককে নাড়া দেবে, জাগিয়ে তুলবে। রম্যরস বাঙালি জীবনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। একটা শক্তিও বটে। রম্যসাহিত্য গড়ে ওঠে কটাক্ষ, শ্লেষ, ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ, কৌতুক ইত্যাদি নিয়ে। শক্তিশালী কলমে লেখা হলে সাহিত্য হিসেবে যার ক্ষমতা অসামান্য। এই বইয়ের রম্যধর্মী রচনাগুলোতে কাল্পনিক চরিত্র ও সংলাপের মধ্য দিয়ে চলমান সমাজের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, কবি, শিল্পী কিংবা মস্তান —চরিত্রগুলোর সবই আমাদের চেনা। তবে রম্যরচনা বলেই চরিত্রগুলো এখানে আমাদের আমোদিতও করে। নাগরিক জীবনের ভোগান্তির কারণ মশার জন্যও যেন ভালোবাসা জাগে। কাক, কুকুর বা ইঁদুরদের যে সম্মেলন, তার মধ্য দিয়েও যেন মানুষের সমাজের চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, সমাজের অসংগতিকে কটাক্ষ করার সেই তাগিদ থেকেই লেখক বইয়ের পর্বগুলো তৈরি করেছেন।