এ গল্প এগারো বছরের এক বাচ্চা, জহিরের; ‘চোরের ছেলেও চোর’- এই অপবাদে যাকে গ্রামবাসীরা অচ্ছুত ভেবে তাড়িয়ে দিয়েছে। গল্পটা আংশিক হলেও জাহাঙ্গীরের। এককালের কুখ্যাত চোর, যাকে কি না ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে এমন এক অপরাধে, যা সে করেইনি। গত আট বছর ধরে সৎভাবেই চলছিল মানুষটা। তবে কি ভালোর কোন দাম নেই? গল্পটা তরফদার চেয়ারম্যান আর ওসি ফারুকেরও, যাদের দুর্নীতির লোভ ক্রমশ বাড়ছে। গল্পটা মিঠাপুকুর নামের এক গ্রামের সকল গ্রামবাসীর, যারা জানে না কোন বিপদ ধেয়ে আসছে তাদের দিকে। গল্পটা মানুষরূপী কিছু হায়েনার।
অনাথ বালিকা ফুলবানু বৃদ্ধ হজমি ওয়ালার খোঁজে জয়বাংলা আচার ঘরে ঢুকে পড়ে। উঁচু তাক থেকে একটি বয়াম ধরার সময় ওর হাতটি ফসকে গেলে ভেতরের পুরনো দরজাটি খুলে যায়। বন্দুকের ক্যাট ক্যাট শব্দের সাথে বারুদের গন্ধের ঝাপটা এসে নাকে লাগে। ফুলবানু আবিষ্কার করে এটি একটি যাদুকরী দরজা। এর ভেতর দিয়ে সে অনায়াসে ১৯৭১ সনে যাতায়ত করতে পারে। অন্য কেউ জানতে পারলে দরজার যাদু চলে যেতে পারে ভেবে সে তা গোপন রাখে। দরজার ওপারে, একাত্তরে, সে এক যুবকের দেখা পায়। মুক্তিযোদ্ধা যুবকটি ছিল শত্রুর হাতে বন্দি। পাকিস্তানিরা ওকে ভীষণ অত্যাচার করে। মুক্তি পেতে যুবকটি বালিকার সাহায্য চায়। সাহায্যের খোঁজে বেরিয়ে ফুলবানু পথে যুদ্ধ, পাকিস্তানিদের ধংসযজ্ঞ, এবং অত্যাচারের নমুনা দেখতে পায়। কিন্তু ফিরে এসে দ্যাখে আচার ঘরটির সাথে যাদুকরী দরজাটিও কেউ ভেঙে ফেলেছে। তাহলে কি ফুলবানু আর বন্দি যুবকের দেখা পাবে না? না পেলে তো কেউ ওর যাদুকরী ভ্রমণের কথা বিশ্বাস করবে না। তাই সেই মুক্তিযোদ্ধা যুবকের দেখা ওর পেতেই হবে...।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক কিশাের নানাভাবে অবদান রেখেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি অস্ত্র হাতে নিয়ে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। বীরত্বের সাথে। তাদের মধ্যে সেলিম আকবর, শহিদুল ইসলাম লাল অন্যতম সেরতের কতিস্বরূপ তারা। বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন একটি গ্রামের অতি সাধারণ কিশাের লালু যুদ্ধে জড়ালেন, কীভাবে। | অসীম সাহসে গুড়িয়ে দিলেন শত্রুসেনাদের ক্যাম্প! | সেসব ভয়াবহ জীবনালেখ্য নিয়ে লেখা বীর বিচ্ছ। যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে টাঙ্গাইলে অস্ত্র জমা নিতে গিয়ে চমকে উঠেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। প্রায় শেখ রাসেলের সমবয়সী, রাসেলের সমউচ্চতার একটি কিশাের মুক্তিযােদ্ধা! বঙ্গবন্ধু আনন্দে-আবেগে কোলে নিয়ে আদর করলেন তাকে। চুমু খেলেন! বিয়াল্লিশ বছর আগের | সেসব কথা এই গ্রন্থে তুলে ধরেছেন সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল।
ভ্যাঙ্কুভার বিশ্বের সেরা শহরের শীর্ষে। তাই কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভারকে বলা হয় ভূস্বর্গ! ভূস্বর্গ থেকে নেমে আসা বিশ্বের অন্যতম নােংরা শহর ঢাকাকে মনােয়ারা অর্থাৎ মৌয়ের কিছুতেই নরক মনে হচ্ছে না। বরং প্রতি মুহুর্তেই এই শহর, এই দেশ, এই দেশের মানুষগুলােকে তার আরাে আপন, আরাে কাছের, আরাে স্বজন মনে হচ্ছে। এতােদিন শাদা স্রোতের বিপরীতে ছিল, আজ যেন স্বজাতীয় কালচে-বাদামি মেঘলা যােতে মিশে গেছে মৌ। মুগ্ধ হয়ে দেখছে নানা ধরনের মানুষ। দেখছে মানুষের আচার-আচরণ, মানুষের ভিড়-ব্যস্ততা, মানুষের ভালােবাসা-কষ্ট, টিফিন-কেয়ারের টিনের বাটি, জটিল জ্যাম। ট্রাফিকবিহীন রিকশা-গাড়ির ধাক্কাধাকি। উভট হর্ন, বাংলা গালি! শিকড়ের সন্ধানে এসে মনােয়ারার কিসের এক টানে কোথায় যেন কি গেঁথে যাচ্ছে। বুকের ভেতর কি যেন কি আটকে যাচ্ছে, টের পাচ্ছে! ঢাকা বিমানবন্দর থেকে নেমেই মনে পড়ছে সেই গানটি- ও আমার দেশের মাটি/তােমার কোলে ঠেকাই মাথা ।