বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছায়াবলম্বনে দুটি ভিন্ন স্বাদের বড়ো গল্প। উভয় গল্পের পটভূমি একাত্তর, যদিও ঘটনার প্রকাশ বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। গল্পচ্ছলে এখানে প্রকাশিত হয়েছে একাত্তরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকার অন্তরঙ্গ চিত্র। সঙ্গে থাকল অধরা প্রেমের স্মৃতিভেজা এক আখ্যান।
মুক্তিযুদ্ধ : কিশাের উপন্যাসমালা নবীন প্রজন্মের হাতে ভুলে দেওয়া হচ্ছে সেই অবিশ্মরণীয় দিনগুলাের হৃৎপন্দন তাদের মধ্যে সঞ্চারের লক্ষ্যে। নবীন প্রবংশের লেখক, একাত্তর যাদের স্মৃতিতে নেহায়েতই বাল্যের অস্পষ্ট অভিঘাতের মতাে জেগে রয়েছে, যুদ্ধদিনে ফিরে গিয়েছেন অন্তরের উদগ্র তাগিদ থেকে এবং রচনা করেছেন কিশাের যােদ্ধার অনুপম কাহিনী। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে স্মরণীয় উপন্যাস 'রেড ব্যাজ অব কারেজ' রচনা করেছিলেন। স্টিফেন ক্রেন, যুদ্ধের কোন প্রত্যক্ষ স্মৃতি যার ছিল না। বাঙালির বীর গাথা নিশ্চিতই সঞ্চারিত হবে আগামীদিনের নাগরিকদের মধ্যে, সেই প্রত্যয়ের স্বাক্ষর বহন করছে। সেজান মাহমুদের বই। একাত্তরের এই কাহিনীর হাত ধরে কিশাের পাঠকরা পৌছে যাবে মুক্তিযুদ্ধের ভেতরে, দূর অতীত আবার হয়ে উঠবে সজীব বাস্তব এবং শুধু তথ্য হিসেবে জানা নয়, হৃদয়-মন দিয়ে তারা বুঝতে পারবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্বরূপ।
১৯৬৪ সালে দাঙ্গার শিকার হয়ে সপরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মানস। জন্মভূমির প্রতি জন্মেছিল ঘৃণা, মুছে দিতে চেয়েছিল তার সব স্মৃতি। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সে নিউইয়র্কে, জাতিসংঘের সদর দপ্তরে। সেখানে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায় এই নিজের জন্মভূমির ভাগ্য নিয়ে বৃহৎ শক্তিসমূহের দড়ি-টানাটানি। নিজের অজ্ঞাতেই সে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ে দেশটির মুক্তি আন্দোলনে। উপলব্ধি করে রাজনীতি ও মানচিত্রের বিভেদে ছিটকে পড়লেও জন্মভূমির সঙ্গে তার সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন। ভাঙতে থাকে মানবিক সম্পর্কের ভুল-বোঝাবুঝি। আন্তর্জাতিক পটভূমিকায় রচিত হাসান ফেরদৌসের প্রথম উপন্যাস মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেরই এক প্রামাণিক কাহিনি।