সমাজের উঁচু স্তরের প্রভাবশালী কিছু মানুষ একে একে মারা যাচ্ছে। দূর্ঘটনা, হত্যা না কি অন্য কোনো রহস্য? মৃত্যুর কারণ জানতে পেরে ফরেনসিক ইনচার্জ আদনান বিস্মিত। হোমিসাইডের ক্যাপ্টেন কায়সার জীবনে প্রথমবার টের পেল ভয় কাকে বলে। চোখের সামনে আততায়ী অদৃশ্য হয়ে গেল। মৃত্যুর নীল ছোবল এরপর কার দিকে ধেঁয়ে আসবে, সেটাও অজানা। সত্য? না কি পুরোটাই গুজব? প্রাচীন কুসংস্কার যখন ঘুরে ফিরে আসে তদন্তে, তখন থমকে যেতেই হয়। রাজনীতি, লৌকিক বিশ্বাস আর নেশার রাজ্যের অন্তরালে লুকিয়ে আছে কোন সত্য? কোন অতীতের সুরে গর্জে প্রতিশোধের হুঙ্কার? অন্ধকার ট্রিলজি, ক্ষ্যাপা, নিশাচরের পর বাপ্পী খান-এর লেখা ‘হিমঘুম’ পড়ে পাঠক বিস্মিত হবেন আরেকবার।
সিলেটের গহীন বনে দীর্ঘদিন পর জ্ঞান ফিরে পাওয়া মানুষটা কে? কিয়াসু কেন সেই মানুষটার প্রতি এতো আগ্রহী? কিয়াসুর জীবনের অন্ধকার উপাখ্যান জানতে চান? ওদিকে রাজস্থানের যে ঘটনা ‘সত্য-কলামে’ ঠাই নিয়েছে, তা কি আদৌ ঘটেছিলো? কুড়িগ্রামের সীমান্ততঘেষা অঞ্চলে রাতের গভীরে নেমে আসা নিশিবু’র অভিশাপ কতোটা সত্যি? বরিশালের ঝালকাঠিতে প্রতি আমাবস্যার রাতে অজ্ঞাত আক্রমনের জন্য দায়ী কে? এর জন্য স্থানীয় মন্ত্রীর কেনো এতো মাথা ব্যথা? ওদিকে সাফওয়াত আর আইরিন সুন্দরবনের গভীরে এক চরে বন্দী। দূর থেকে ভেসে আসছে হিংস্র মায়াবাঘের হুংকার! কী করবে তারা? এমন অজস্র প্রশ্নকে পেছনে ফেলে সবার একটাই জিজ্ঞাসা। রফিক শিকদার কোথায়? ‘হার না মানা অন্ধকার’ জগতের দ্বিতীয় আখ্যান ‘ঘিরে থাকা অন্ধকার’, পাঠকদের আরেকবার নিয়ে যাবে প্রকৃতির সব অদ্ভুত আর ব্যাখ্যাতিত ঘটনার জগতে।
অন্ধকারে ছেয়ে আছে আকাশটা। এক কোণায় এক চিলতে বিদ্যুৎ ঝলসে উঠতেই সে অন্ধকারটা সাময়িক দূর হলাে বটে, কিন্তু পরক্ষনেই আরাে গভীর অন্ধকার ঘনিয়ে এলাে চারপাশে। দূরে কোথাও বজপাতের শব্দ কানে যেতেই লােকটার নীরবতা ভাঙলাে। লােকটা চুপচাপ বসে আছে গম্ভীর মুখে। ঠোঁটে থাকা সিগারেটের ধােয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে ঘরের ভেতরটা। শ্যামলীর একটু ভেতরের দিকের এক ভবনের চারতলার এই ঘরটি অন্ধকার হলেও, জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে রাস্তার নিয়ন বাতির এক চিলতে আলাে তার মুখে এসে পড়ছে। সে আলাে-ছায়ার মাঝে লােকটাকে আরও রহস্যময় লাগছে। - অবশ্য তার জীবনটাও কম রহস্যপূর্ণ নয়। কপালের কুঁচকে থাকা চামড়ার ভাঁজে ফুটে ওঠা কয়েক বিন্দু ঘাম। সে কিছু ভাবছে। মনের ভেতর জেগে থাকা এক অদৃশ্য ঘড়ি যেন তাকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, সময় আসছে। আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা। তারপরই শেষ হবে তার এ অপেক্ষার। সাইড টেবিলে রাখা মােবাইল ফোনটা বেজে উঠতেই চোখ মেলে তাকালাে সে। হাত বাড়িয়ে ফোনটা রিসিভ করলাে। তারপরে আর কোন কথা না বলে সে চুপচাপ কিছুক্ষণ শুনে গেল অপরপ্রান্তের লােকটির বলা কথাগুলাে। “ওকে! এবার তাহলে ধামাকা হােক, বড় ধামাকা! খােদা মেহেরবান!” নিচু, ভরাট কণ্ঠে কথাগুলাে বলে কিছুক্ষণ পর ফোনটা রেখে দিলাে সে। কণ্ঠে আবেগ গােপন রাখতে পারাটা তার বহুদিনের অভ্যাসের ফল। লম্বা, ছিপছিপে গড়নের মাঝবয়সি লােকটার পরনে একটি কালাে শার্ট আর খাকি কালারের পায়জামা। সাধারণ মানুষ থেকে তাকে আলাদা করে চেনাটা কষ্টকর। তবে তার তীক্ষ্ণ চোখে যে অসীম বুদ্ধিমত্তা আর হিংস্রতার ছায়া, সেটাই তাকে আলাদা করে দেয়। ফোন থেকে সিমটা খুলে ফেলে টেবিলের উপর রেখে হেটে গেল জানালার কাছে। পর্দা কিছুটা সরিয়ে নিচে তাকালাে। ঢাকার রাস্তায় মানুষের নিত্য চলাচলের ব্যস্ততা দেখছে সে। আজকের সন্ধ্যার এই ইলিশেগুঁড়ি বৃষ্টিকেও যেন তারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে ব্যস্ত। সবাই ছুটছে অধরা কোন এক সুখের আশায়। আর কিছুক্ষণ পরেই, শহরের মানুষের সব ব্যস্ততা আর সুখ পরিণত হবে তীব্র শােক আর আতংকে। সে কথা ভাবতেই লােকটার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলাে। খুব সূক্ষভাবে তাকালে বােঝা যায়, সে হাসিতে লুকিয়ে আছে এক ভয়াবহ পৈশাচিকতা। লােকটির অধীনে যারা কাজ করছে, তারা আজ ব্যাপারটা দেখে খুব খুশি হতাে। কারণ, তারা সবাই জানে এই নিষ্ঠুর লােকটির মুখে হাসি দেখা কতটা কষ্টসাধ্য আর বিরল ব্যাপার। এমনকি, দেড় বছর আগে যখন এই লােকটার করা এক ভয়াবহ পরিকল্পনায় ঢাকা শহরের এক অভিজাত রেস্টুরেন্টে ঝরে গিয়েছিলাে ২২টি তাজা প্রাণ, তখনাে তার মুখে এমন খুশির চিহ্ন দেখা যায়নি।
এ গল্প এগারো বছরের এক বাচ্চা, জহিরের; ‘চোরের ছেলেও চোর’- এই অপবাদে যাকে গ্রামবাসীরা অচ্ছুত ভেবে তাড়িয়ে দিয়েছে। গল্পটা আংশিক হলেও জাহাঙ্গীরের। এককালের কুখ্যাত চোর, যাকে কি না ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে এমন এক অপরাধে, যা সে করেইনি। গত আট বছর ধরে সৎভাবেই চলছিল মানুষটা। তবে কি ভালোর কোন দাম নেই? গল্পটা তরফদার চেয়ারম্যান আর ওসি ফারুকেরও, যাদের দুর্নীতির লোভ ক্রমশ বাড়ছে। গল্পটা মিঠাপুকুর নামের এক গ্রামের সকল গ্রামবাসীর, যারা জানে না কোন বিপদ ধেয়ে আসছে তাদের দিকে। গল্পটা মানুষরূপী কিছু হায়েনার।
মিরপুরের পরিত্যাক্ত এক বাড়িতে টিভি রিপোর্টার নাফিস কী এমন খুঁজে পেল, যা তার বিশ্বাসের সব ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে? সবার অলক্ষ্যে কোন অশুভ নরখাদক হানা দিচ্ছে ব্যস্ত নগরী ঢাকায়? কেন? ওদিকে ময়মনসিংহে পা রাখতেই রফিক শিকদারের মনে জেগেছে অজস্র প্রশ্ন। অদ্ভুত সব রহস্য দেখা দিচ্ছে তার চারপাশে। অতীত-বর্তমানের কোন যোগসূত্র তাকে টেনে এনেছে এখানে, তার দাদার মাজারে? তবে কি তার জীবনে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো সব এক সুতোয় গাথা? তিন অদ্ভুত ভাই হাবিল-নাবিল-কাবিলই বা কী চায়? হেম্মেজের রহস্যময় আচরণ বারবার সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে। সব বিপত্তি পেড়িয়ে মায়াবাঘ এর আক্রমণের জবাব খুঁজতে রফিক ছুটে গেল খুলনায়। ওদিকে রাজশাহীতে নদীর তীরে একের পর এক উধাও হচ্ছে মানুষ। হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণীরা। সত্যকলামের ‘অপ্রাকৃত’ বিভাগেও জমা হয়েছে ময়মনসিংহের বন-পাহাড়ে ঘটে যাওয়া এক নারকীয় তাণ্ডবের ঘটনা।