দাড়ি, কমা, সেমিকোলন, প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসায় মস্তিস্ক। কিন্তু মস্তিস্কের ওপরে শক্তিশালী কোন জিনিষ থাকে, যা হল আমাদের হৃদয়! তাইতো দিনশেষে অন্য কোন বিরাম চিহ্ন নয়, বসিয়ে দিলাম হৃদয়বোধক চিহ্ন। তেরটি গল্প নিয়ে এ বছর একুশে বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে আমার বই- ‘হৃদয়বোধক চিহ্ন’। এই বইয়ের বেশীরভাগ গল্পের পটভূমিতে যেমন নিউইয়র্ক শহর আছে, আছে আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের কথাও। এসেছে করোনা মহামারীকাল, এসেছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, আছে রহস্য রোমাঞ্চ, প্রেম, ব্যর্থতা, মিল আর অমিলের গল্প। আমাদের ব্যর্থ আকাঙ্খার মাঝে কুসুমিত স্মৃতি হয়ে থাকা কিছু মুহূর্ত এই গল্পের বিষয়বস্তু।
বইয়ের গল্পগুলো নানারকম মানুষের গল্প। নানান শ্রেণিপেশার মানুষ। কেউ উঠে এসেছে বাংলার কাদা মাটি থেকে। কেউবা আফ্রিকার কোনো দেশ থেকে। তাদের কেউ মার্কিন মুলুকের অভিবাসী। কেউবা নিজ ঘরে পরবাসী। এই বইয়ের সুবাদে সেই সব চরিত্রগুলো এসে দাঁড়িয়েছে একই আঙিনায়। বিশ্বাস করি, গল্পগুলো গড়তে পড়তে পাঠকরাও মিলিত হওয়ার সুযোগ পাবেন সেইসব চরিত্রের সাথে। যেন বহুদিন পরে দেখা হবে কোনো বন্ধুর সাথে। দূর গাঁয়ের কোনো চেনা মানুষের সাথে। স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠবে ফেলে আসা জীবনের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার গল্প। নবীন কিশোর খুঁজে পাবে কোনো নতুন মুখ। এ যেন এক পৌষ-ফাগুনের মেলা। আমাদের খুবচেনা কোন ভুবনডাঙার মাঠ। যেখানে পসরা বসে স্বপ্ন বেচাকেনার। যেখানে ধুলোই ওড়ে বিষণ্ণতার বেলুন। সে বেলুনের সুতো যে কার হাতে বাঁধা তা আমরা জানি না। তাকে আমরা খুঁজতে থাকি গল্পের আখ্যানে। খুঁজতে খুঁজতে আমাদের সময় গড়িয়ে যেতে থাকে। আমরা পৌঁছে যায় আরেক বিষণ্ণ সময়ে। তখন আমাদের গল্পগুলো হয়ে ওঠে বিষণ্ণ সময়ের গল্প। যে সময় আমাদের দূরত্বের কথা বলে। বিচ্ছিন্নতার কথা বলে। কথা বলে একাকিত্ব আর হতাশার। গল্পগুলোতে বেজে ওঠে ঝরা পাতার বাঁশি। এই বিষণ্ণ সময়ের গল্পগুলোর মাঝে মানুষের সামনে আশার হাত বাড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন লেখক। যাতে তারা বুঝতে পারে তুমি নও একা'। সবকিছু মিলিয়ে গল্পগুলো পাঠকপ্রিয় হবে বলেই বিশ্বাস করি।
বাংলা সাহিত্যে কবিতা, গল্প বা উপন্যাসের পাশাপাশি ভ্রমণবিষয়ক রচনা তুলনামূলকভাবে কম। সাম্প্রতিককালে শিক্ষা, ব্যবসা ও শখের কারণে স্বদেশ ও বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ বেড়েছে। আর সেই সঙ্গে গতি পেয়েছে ভ্রমণ সাহিত্যের চর্চা ও বই প্রকাশ। ভ্রমণ বিষয়ে বই প্রকাশনা বৃদ্ধি পেলেও গুণমান-সমৃদ্ধ বইয়ের অভাব সহজেই চোখে পড়ে। সেই অভাব পূরণে এগিয়ে এসেছেন ভ্রামণিক স্বপন বিশ্বাস। সচরাচর ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখায় স্থান-কাল-পাত্রের বর্ণনা প্রাধাণ্য পায়। তিনি কেবল বর্ণনাকে প্রাধাণ্য না দিয়ে কোনো একটি বিষয়বস্তুর ওপর ফোকাস করেছেন; করেছেন অনুসন্ধান। তাই বিষয়বস্তুর সঙ্গে ওঠে এসেছে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। অনেকটা গল্প বলার ধাঁচে তিনি হাজির করেছেন সেই বিষয়ের বিবরণ। মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে লেখক দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেরিয়েছেন; সেই সত্যের প্রতিফলন ঘটেছে 'কুড়াই পথের নুড়ি' বইয়ে। বাংলা সাহিত্যে এই বই অভিনব সংযোজন বলে মনে করি।