এই কাব্যগ্রন্থের প্রত্যেকটি কবিতা, তসবিদানার মতো এক সুতায় গাঁথা । কাছাকাছি সময়ে লেখা । এজন্য কবিতাগুলোর আর আলাদা ভাবে নাম দেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। তবে বৃষ্টি বা নদীর বয়ে যাওয়া পানির মতো একের পর এক কবিতা মিল রেখে সাজানো। আমার আগের সব কাব্যগ্রন্থ যেমন, এই গ্রন্থ সেরকম নয়, ব্যতিক্রম। মূলত এখানে আছে একটি কাল্পনিক প্রেমের অভ্যর্থনা, আলাপ, পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা এবং তার শেষ পরিণতির উপাখ্যান। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে, এমনটাই দেখতে পাবেন কবিতাগুলোর সর্বাঙ্গে ।
কাউকে যদি ভ্রমণের নেশায় পেয়ে বসে, তাকে ঘরে আটকে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা, মার্কো পোলো, হিউয়েন সাং, নিকোলাও মানুচিসহ বিশ্ব পরিব্রাজকের ভ্রমণকাহিনি পাঠ করে তাদের সময়ের বিশ্ব সম্পর্কে আমরা ধারণা লাভ করেছি। আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় তাদের মতো অবাধে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ নেই। ভ্রমণের ইচ্ছা জাগলেও হুট করে কোথাও যাওয়া যায় না। তা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগ, দেশে দেশে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়, বাণিজ্যিক সম্পর্ক, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের সম্প্রসারণ এবং পর্যটন-ব্যবসা বিকাশে ভিন্ন অর্থে ভ্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশে আমি বেশ কিছু দেশ ভ্রমণের সুযোগ লাভ করেছি। কোনো কোনো দেশে আমাকে তুলনামূলকভাবে দীর্ঘসময় অবস্থান করতে হয়েছে, যার ফলে ভিন্ন দেশ ও সমাজকে জানার যে সুযোগ পেয়েছি তা পাঠককে জানানোর চেষ্টা করেছি ‘ও আকার ও বিহঙ্গ’ নামে আমার ভ্রমণকাহিনিতে। আমার কোনো কোনো ভ্রমণবৃত্তান্ত সাড়ে তিন থেকে চার দশক আগের, যখন বিদেশ ভ্রমণ বর্তমান সময়ের মতো সহজ ছিল না— সেই পিছিয়ে থাকা সময়ের চিত্র কল্পনা করে আমার ভ্রমণকাহিনি পাঠ করলে পাঠকের কাছে উপভোগ্য হতে পারে।
জালালুদ্দীন রুমির দর্শনের ভিত্তি হচ্ছে, সকল সৃষ্টি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং সকল অস্তিত্বের মূল হলো ‘প্রেম’। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের জীবনের লক্ষ্য হলো আল্লাহ এবং সকল সৃষ্টির সঙ্গে আমাদের একত্ব উপলব্ধি করা। যাযাবর স্বভাবের দরবেশ ও আধ্যত্মিক শিক্ষক শামস তাবরিজীর সঙ্গে রুমির প্রেমময় সম্পর্ক তাঁর জীবনে রূপান্তর ঘটিয়ে তাঁর আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে এবং তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে প্রেমের আনন্দ ও বিচ্ছেদের যন্ত্রণার ওপর অত্যন্ত চমৎকার অন্তর্ভেদী কবিতা রচনা করতে। তিনি প্রেমকে বিশ্বের প্রচণ্ড শক্তি ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের চাবিকাঠি হিসেবে দেখেছেন। তাঁর কাছে প্রেম কেবল একটি অনুভব নয়, বরং সচেতনতার অবস্থা, আনন্দ ও বিষাদসহ সবকিছুর কাছে আমরা উন্মুক্ত। তিনি বলেছেন, “আমি আল্লাহর কাছে এত কিছু শিখেছি যে, আমি নিজের বাইরে আর কিছু সন্ধান করি না। সবকিছু আমার মাঝে, মহাবিশ্ব আমার মাঝে।”
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতায় জিতে ভারতের খ্যাতিমান সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ এম জে আকবরের বিশ্লেষণ-ভিত্তিক গ্রন্থ ‘গান্ধী’স হিন্দুইজম: দ্য স্ট্রাগল অ্যাগেইনস্ট জিন্নাহ’স ইসলাম’ এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করতে যাচ্ছে সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘নালন্দা’। অন্যান্য যেসব প্রকাশনা সংস্থা বইটির অনুবাদ প্রকাশের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্তির পূর্ব পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের জাতির পিতা যথাক্রমে মোহনদ্াস করমচাঁদ গান্ধী ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র পাশাপাশি স্বাধীনতা আন্দোলনে শরীক অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের ভূমিকার ওপর তথ্যনির্ভর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ‘গান্ধী’স হিন্দুইজম: দ্য স্ট্রাগল অ্যাগেইনস্ট জিন্নাহ’স ইসলাম’ । বইয়ের শিারোনামই বলে দেয়, লেখক অবিভক্ত ভারতের পক্ষে গান্ধীর অবস্থানকে উর্ধে তুলে ধরেছেন এবং জিন্নাহকে তুলোধূনা করতে ছাড়েননি। মানুষের সমালোচনা থেকে কেউ রক্ষা পায় না। সৃষ্টিকর্তা, তিনি আল্লাহ হোন, ইশ্বর বা ভগবান হোন -- তারাও মানুষের সমালোচনা, হাসি-মস্ক‹রার পাত্র। তাদের প্রেরিত নবী-রাসুল, অবতাররা সমালোচনার উর্ধে নন। অতএব গান্ধী ও জিন্নাহ তাদের পক্ষ-বিপক্ষের দ্বারা প্রশংসিত ও সমালোচিত হবেন, এটাই স্বত:সিদ্ধ। বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে অহরহই দেখা যায়, গতকাল যারা একজনের মাথায় ক্ষমতার রাজমুকূট পরিয়েছেন, আজ তাকে মসনদ থেকে টেনে নামাচ্ছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমি ভারত বিভাগ মেনে নিতে পারি না। কোনো রাষ্ট্রের কোনো বিভাজন মেনে নিতে পারি না। আমি ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যে’ (ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি) বিশ্বাস করি। এটি নতুন বা আধুনিক যুগের ধারণা নয়। সূফি দার্শনিক ইবন-আল-আরাবি (১১৬৫-১২৪০) বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ধারণা দিয়েছেন, যাকে তিনি বলেছেন ‘ওয়াহদাত আল-ওয়াজুদ’ অর্থ্যাৎ ‘সত্তার ঐক্য’। অর্থ্যাৎ ‘সেই বাস্তবতা এক, আল্লাহ বা ইশ্বরের অস্তিতই একমাত্র সত্য, অন্যান্য সবকিছু ছায়া, আল্লাহ গুণাবলীর প্রতিফলন মাত্র। আল-আরাবির দর্শনকে সার্বজনীন রূপ দিয়েছেন আবদ আল-করিম আল-জিলি (১৩৬৬-১৪২৪), যিনি বলেছেন, ‘আল ওয়াহদাহ ফিল-কাসরাহ ফিল-ওয়াহদাহ’ অর্থ্যাৎ বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য এবং ঐক্যের মধ্যে বৈচিত্র’। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানিরা আরও চমৎকারভাবে ‘ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি’কে বিশ্লেষণ করেছেন। এম জে আকবরের গ্রন্থের প্রতিপাদ্যও তাই। এই গ্রন্থে ব্রিটিশের কবল থেকে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা এবং মাত্র ২৪ বছর পর বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে পাকিস্তান তত্ত্বের অসারতার কথাও বলা হয়েছে। সাধারণ পাঠক ছাড়াও রাজনীতিবিদ, ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র-শিক্ষকদের অবশ্য পাঠ বই বলে আমার বিশ্বাস।
জনসংখ্যার অনুপাতের বিচারে ভারতের বিপুল জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুসলিম সংখ্যা স্বল্প হলেও বিদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের অবদান ছিল অনেক বেশি। ভারতের ইতিহাসই এর সাক্ষী। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের বহু আগে থেকে ভারতের বহু মুসলিম শাসক ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়ে শাহাদাত বরণ করেছেন। এমনকি স্বাধীনতা আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনও আলেম সমাজসহ ভারতীয় মুসলমানদের বড় অংশ দ্বিজাতি তত্ত্বের বিরোধিতা করে অখণ্ড ভারতের পক্ষে অটল ভূমিকা পালন করেছেন। বইটিতে দেশের জন্য ভারতীয় মুসলমাদের অবদান তুলে ধরা হয়েছে।
দবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “সাত ব্যক্তি আরশের ছায়ায় আজ আশ্রয় পেয়েছে। এদের মধ্যে ওসব লোকও আছে যাদেরকে কোন সুন্দরী মেয়ে লাগানোর জন্য আহ্বান করেছিলো। কিন্তু তারা আল্লাহর ভয়ে যায়নি। যৌবনকালে আমাকেও এমন করেছিল এক সুন্দরী!” ত্বহা উৎসাহের সাথে জানতে চাইলো, “তারপর? আল্লাহর ভয়ে বিরত ছিলেন?” দবির মাথা নাড়তে নাড়তে বললো, “না রে ভাই। আমাকে আর দ্বিতীয়বার বলা লাগেনি। এক লাফে কম্বলের তলে। দেখছেন না গোড়ালি ডুবে গেছে ঘামে।” ত্বহা ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো। সমতল ভূমি। অথচ কোথাও লোকের গোড়ালি পর্যন্ত ঘাম। কোথাও কোমর পর্যন্ত। কেউ কেউ তো ঘামে সাঁতার কাটছে। গলা পর্যন্ত ঘাম তাদের। অথচ সবটাই সমান। বিজ্ঞান আজ কোথায়? আর থাকতে না পেরে গেয়েই উঠলো সে, “আল্লাহর কী কুদরত! লাঠির ভেতর শরবত!” প্রথম যে লোকটা কথা বলেছিল সে এটা শুনেই হাততালি দিয়ে ফেললো, “আখ। ইক্ষু। সুগারক্যান। তাই না?” মাথা দোলালো ত্বহা। “আপনার ইংরেজি তো চমৎকার! নামটা জানা হলো না।” লোকটা হাততালি দিতে দিতে বললো, “আমি? আমি তো শাকিব খান। নাম্বার ওয়ান, শাকিব খান। আসলে আমার নাম মাসুদ রানা। দুনিয়াতে থাকতে শাকিব খান নামে চলতাম। সিনেমার নায়ক।” ভ্রু কুঁচকে গেল ত্বহার, “আপনি-ই তো সেই ফাদার ফিগার, রাইট?” একটা আঙুল তার দিকে পিস্তলের মতো তাক করলো শাকিব খান, “রাইট ইউ আর!” --- হাশরের ময়দানে দবির নিজেকে আরও কিছু উদ্ভট মুসলমানের পাশে আবিষ্কার করলো নিজেকে। একটু পর যে মহাশ্চার্য বিষয়টি আবিষ্কার করবে – সে বিষয়ে কোন ধারণাই তার ছিল না। “নাস্তিক শিকারী” গল্পটি সংকলনের অন্যতম সেরা গল্প। পিছিয়ে নেই বাকি গল্পগুলোও। পাঠককে পড়ার আমন্ত্রণ।