দানাকিল ডিপ্রেশনে আগ্নেয়গিরির লাভালিপ্ত নিসর্গের বিবরণের সঙ্গে লেখক যুক্ত করেন স্থানীয় আফার সম্প্রদায়ের মানুষের দিনযাপনের খণ্ড কাহিনি। সমান্তরালভাবে উপস্থাপন করেন হরেক কিসিমের পর্যটকের চরিত্র। বিস্তারিত হয় শরণার্থীশিবির, মরুচারীদের গ্রাম বা বেসক্যাম্পের বিষয়-আশয়। পরিশেষে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি-সংলগ্ন লাভাহ্রদের পাড়ে রাত্রিযাপনের ঘটনাও পাঠকদের আগ্রহী করে তোলে।
আফ্রিকার ছােট্ট রাজ্য লিসােটোতে বেড়াতে গিয়ে রাত্রিবাসের বন্দোবস্ত করতে না পেরে লেখক ম্যাডলক সাহেবের কটেজে আশ্রয় নেন । কথাবার্তায় জানতে পারেন, ম্যাডলক যে সুদর্শনা নারীর জন্য শৌখিন কটেজ তৈরি করেছিলেন, সে তাকে ত্যাগ করে ঘর বেঁধেছে এ কটেজের স্থপতির সঙ্গে। পাঠকদের সঙ্গে লেখক পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর এইডসগ্রস্ত গাইডের। স্বভাবে কবিয়াল মানুষটি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মৃত্যুর। বর্ণনা করেন ব্ল্যাকম্যাজিকের। জাদুটোনায় ব্যবহারের জন্য শ্বেতীগ্রস্ত এক মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নির্মমভাবে কেটে নেওয়ার ঘটনা। অনিরাপত্তায় মানুষটি অনুনয় করে তাকে যেন কারাগারে পােরা হয়। এক জমানায় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছিলেন শরীরের তীব্র আবেদন ছড়ানাে এক রূপসী। এ যাত্রায় পাঠকও লেখকের সঙ্গে সেই রূপসীর তালাশ করেন। তাঁর দেখা পান উপত্যকার নিভৃত এক কুটিরে। বাশক্তিহীন স্ট্রোকে জর্জরিত মহিলা সেখানে একাকী বাস করছেন। কাউকে দেখাতে চান না তার মুখাবয়ব, তাই তিনি মুখে তুলে নিয়েছেন মুখােশ। লেখক মঈনুস সুলতানের অতুলনীয় বর্ণনায় পাঠক নানা ধরনের মানুষের দেখা পাবেন এবং উপভােগ করবেন তাদের বিচিত্র দিনযাপন।
আটলান্টিকের এক অংশের নাম গালফ অব গিনি। গালফ অব গিনির নীল জল যে ভূখণ্ডে এসে আছড়ে পড়ছে, সেখান থেকেই শুরু বিশ্বখ্যাত চকোফিল্ড কোতদিভােয়া ইংরেজিতে যাকে বিশ্ববাসী চেনে আইভরিকোস্ট নামে। প্রায় অবিভক্ত জার্মানির সমান, তিন লক্ষ সাড়ে বাইশ হাজার বর্গ কিলােমিটার আয়তনের এই বিশাল ভূখণ্ড কোতদিভােয়া উৎপাদন করে সারা দুনিয়ার আশি শতাংশ কোকো, স্থানীয় ভাষায় যার নাম কাকাও। এই কাকাও থেকেই তৈরি হয় সুস্বাদু চকলেট। লম্বাটে ধরনের, দুই মাথা চোখা, পেটমােটা এক একটি কাকাওয়ের ওজন প্রায় ১ কেজি পর্যন্ত হয়। ভেতরে আতাফলের মতাে অসংখ্য কোয়া, যার প্রতিটা কোয়ার ভেতরেই রয়েছে একটি করে বিচি । বিচির পাতলা আবরণটি তুলে ফেললেই এর ভেতরের পুরাে শাঁসটিই হলাে চকলেট। এই শীস গুড়াে করে তৈরি করা হয় চকো পাউডার, আর তা থেকেই তৈরি হয় বিশ্বব্যাপী এত মজার মজার চকলেট।
কাউকে যদি ভ্রমণের নেশায় পেয়ে বসে, তাকে ঘরে আটকে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা, মার্কো পোলো, হিউয়েন সাং, নিকোলাও মানুচিসহ বিশ্ব পরিব্রাজকের ভ্রমণকাহিনি পাঠ করে তাদের সময়ের বিশ্ব সম্পর্কে আমরা ধারণা লাভ করেছি। আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় তাদের মতো অবাধে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ নেই। ভ্রমণের ইচ্ছা জাগলেও হুট করে কোথাও যাওয়া যায় না। তা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগ, দেশে দেশে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়, বাণিজ্যিক সম্পর্ক, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের সম্প্রসারণ এবং পর্যটন-ব্যবসা বিকাশে ভিন্ন অর্থে ভ্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশে আমি বেশ কিছু দেশ ভ্রমণের সুযোগ লাভ করেছি। কোনো কোনো দেশে আমাকে তুলনামূলকভাবে দীর্ঘসময় অবস্থান করতে হয়েছে, যার ফলে ভিন্ন দেশ ও সমাজকে জানার যে সুযোগ পেয়েছি তা পাঠককে জানানোর চেষ্টা করেছি ‘ও আকার ও বিহঙ্গ’ নামে আমার ভ্রমণকাহিনিতে। আমার কোনো কোনো ভ্রমণবৃত্তান্ত সাড়ে তিন থেকে চার দশক আগের, যখন বিদেশ ভ্রমণ বর্তমান সময়ের মতো সহজ ছিল না— সেই পিছিয়ে থাকা সময়ের চিত্র কল্পনা করে আমার ভ্রমণকাহিনি পাঠ করলে পাঠকের কাছে উপভোগ্য হতে পারে।