পর্বত-কন্যা কাকন বিবি সমাজের অবহেলিত বঞ্চিত প্রান্তিক মানুষদের একজন, জীবনের চলার পথে তাঁকে বহু বাধা বিঘ্ন মোকাবিলা করতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। পার্বত্য জাতিসত্তার সদস্য হিসেবে রূপ-লাবণ্যে তিনি অনেকের দৃষ্টি কেড়েছেন, আবার দরিদ্র অবহেলিত নারী হিসেবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কালো থাবা তাঁর দিকে প্রসারিত হয়েছে বারবার। বিচিত্র তাঁর জীবন-কথা, তার চেয়েও কঠিন তাঁর জীবন-যুদ্ধ। নির্যাতিত হয়েছেন একাত্তরে, যোগ দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে, শত্রু শিবিরে প্রবেশ করেছেন সাহসিকতার সঙ্গে, আবার মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর হারিয়ে গিয়েছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। অনেক বিলম্বে হলেও এক সময় উদ্ভাসিত হয় তাঁর বীরত্ব-গাথা, সংবর্ধিত হন তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পান রাষ্ট্রের তরফ থেকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পান ঊষ্ণ ভালোবাসা। অখ্যাত অজ্ঞাত এই বীর নারীর জীবন-ভাষ্য রচনা করেছেন একনিষ্ঠ মুক্তিযুদ্ধ গবেষক তাজুল মোহাম্মদ। কঠিন সেই দায়িত্ব দক্ষতা ও মমতার সাথে পালন করেছেন তিনি। কাকন বিবির জীবনের পূর্বাপর এই বয়ান তরুণ প্রজন্মের পাঠকদের আলোড়িত করবে নিশ্চয়, সেই সঙ্গে আলোকিতও।
"রাজাকারের কর্মকাণ্ড" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রায় চার দশকের তথ্যানুসন্ধান ও গবেষণার সূত্রে তাজুল মোহাম্মদ ঘুরেছেন জনপদ থেকে জনপদে, আহরণ করেছেন মাঠ পর্যায়ের তথ্য, দীর্ঘ দিনের একনিষ্ঠ ইতিহাস-চর্চায় তিনি নিজেকে বিশিষ্ট করে তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন গোটা দেশের বাস্তবতার ছবি তার চিত্তপটে যেমনভাবে উদ্ভাসিত হয়, তেমন আর কারো ক্ষেত্রে বলা যাবে না। একাত্তরে পাকবাহিনীর সহযোগী-গোষ্ঠী, যারা বহু নির্মমতা ও নৃশংসতার জন্য দায়ী, রাজাকার অভিধায় সাধারণভাবে পরিচিত, তাদের দেশব্যাপী কর্মকাণ্ডের খোজ তাজুল মোহাম্মদের মতো করে আর কেউ রাখেন না। ফলে তাজুল মোহাম্মদের রাজাকারের কর্মকাণ্ড গ্রন্থ কোনো অঞ্চল বা কতক ঘটনার বিবরণ কেবল নয়, একাত্তরে নয় মাস জুড়ে সারা দেশে যেসব নৃশংসতা ঘটিয়েছে পাকবাহিনীর সহযোগীরা তার সুনির্বাচিত ভাষ্য এখানে উপস্থাপিত হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য গবেষক স্বয়ং জেনেছেন প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা শহীদের নিকটজনের সঙ্গে আলাপচারিতার মাধ্যমে, সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ফলে ইতিহাসের ঘটনা শুধু নয়, ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়েছে এই গ্রন্থ, সেইসাথে নিছক বর্ণনা নয়, হয়েছে মানবতার দলিল।