চেরি কে জাপানিরা বলে সাকুরা। বসন্তে এই ফুল প্রস্ফুটিত হয়ে সমগ্র জাপানকে রাঙিয়ে তোলে। বিমোহিত হয় জনমন। এই উপন্যাসে ফুল এবং মানুষ, দুটো বিষয় এসেছে। অর্থাৎ এক কন্যার নাম সাকুরা। ব্যতিক্রমী একজন সে। কী অর্থে বলা হচ্ছে সেটা এই বই শেষ পর্যন্ত না পড়লে অনুমেয় নয়। বইয়ের প্রারম্ভ, মধ্যাংশ, সমাপনী এক ইস্টাইলের নয়। হৃদয়জ ভালবাসা; অতলান্ত অসীম তার প্রেমে সমুদ্র, পর্বত, আকাশ, দ্বীপপুঞ্জ ও মেঘমালারা এক হয়ে কথা বলেছে। স্বপ্ন, সংঘাত, চাওয়া-পাওয়া, লঙ্ঘন, জীবনের অসংখ্য টানাপড়েন ও কৌতুকবোধে পূর্ণ এখানটায়। সীমান্ত ছাড়িয়ে এদেশ থেকে সে দেশে। সেখান থেকে অন্যত্র! কতজীবনের গল্প এসব! পৃথিবীর পথে পথে জীবনের গল্পগুলো অবহেলায় ছড়িয়ে থাকে, আমরা কেউ দেখি; কেউ দেখি না, হিসেব করতে গিয়েও করি না।
দ্বীপদেশের এ শহরে নিশিরাত্রিতে সকলে ঘুমায়। জেগে থাকে হয়তো প্রেমিক-প্রেমিকা, দোকানি, অথবা কোনো জেলখানার প্রহরী কিংবা কয়েদি। আর জাগে কয়েদির পরিবার। চারদিকে এত আলো ঝলমল করে; তবুও এরই মাঝে মানুষ কাঁদে! ৬৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে সূর্য উদয়ের ভূমি; বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সভ্য একটি দেশ জাপান। যার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিশ্ববাসীকে আকৃষ্ট করে। জুয়েল আহসান কামরুল তাঁর একত্রিশ বছরের জাপান প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে সেসব দুর্দান্ত ভালোবাসা, কলহ, বিশ্বাসঘাতকতা, সর্বোপরি জীবন-মরণের কাহিনির নিপুণ চিত্র এঁকেছেন এই উপন্যাসে।
ঘর থেকে বেরোয় তারা। পথিকের বেশে এদেশ থেকে ওদেশে হেঁটে চলে, কখনো-বা উড়ে চলে। ঘরে রেখে আসা মানুষের মুখে অন্ন যোগান দেয়ার লক্ষ্যে, পাহাড়-পর্বত, সাগর-নদী, এমন কী বরফের রাজ্য পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে, দেশের পরিবারের কাছে অর্থ প্রেরণ করে! কোনো কোনো সময়ে পরিশ্রম করতে করতে তাদের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে; তবুও তারা হাসে। হেসে হেসে অশ্রুকে ঢেকে রাখে। হৃদয়ের গহ্বরে এগিয়ে চলার স্বপ্ন তাদের! এরই মাঝে কেউ জীবনকে বিসর্জন দেয়; নিঃশেষ হয়ে যায়। কেউ আবার পৃথিবীর পথে দাঁড়িয়ে কাঁদে।