জরির বয়স দশ। এ বয়সের মেয়েদের মধ্যে যে চঞ্চলতা থাকবার কথা তার ছিটেফোটও তার মাঝে নেই। সারাদিন কেমন উদাস হয়ে ঘুরে বেড়ায়। নিজের মনে গুন গুনিয়ে গান গায়। কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা না বললেও নিজের মনে সে সারাক্ষণ কথা বলে। গ্রামের লোকজন, কাজের চেয়ে অকাজে সময় বেশি ব্যয় করে। জরি সবার অগোচরে নিরালায় বসে নিজের মনে কথা বলে। মানুষজন তাকে আড়াল হতে সারাক্ষণ খেয়ালে রাখে। জরি বাড়ি হতে বেড়িয়ে যেদিকে যায় তারা তার পিছু নেয়। ছেলে-বুগো কেউ এ দলের বাইরে নয়। কিছু মানুষজনের কাজই হলো অন্যের বাড়ির হাড়ির খবর নেয়া। এটা অবশ্য তাদের বিনে পয়সার খাটি বিনোদন ব্যবস্তা। জরিদের কষ্টের সংসার। দুই বোন এক ভাই। এক সময় জরিদের সবই ছিল। ঘরে তাঁতের কল ছিল। বাবা কলে কাপড় বুনতেন গভীর রাত অবধি। মা সুতা কাটতেন বাবার পাশে বসে। সপ্তাহ শেষে বাবা হাটে নিয়ে কাপড় বিক্রি করতেন চড়া দামে। মায়ের মুখে হাসি। সংসার নয় তো যেন স্বর্গ। সে সব অবশ্য এখন ইতিহাস। জরির জন্মের বেশ আগের ইতিহাস। জরি এ সব ইতিহাস মায়ের মুখে রূপকথার গল্পের মতো প্রায়ই শুনে। শুনে জরির ডাগর চোখে স্বপ্ন আবার উকি দেয়। আবার সে দিন ফিরবে বলে আশায় বুক বাঁধে। মা অবশ্য নিজের মনে বিরবির করে অযথাই কাকে যেন গালি দেন। পরক্ষণেই নিজের কপালের দোষ দেন। শুধু জরিদের গ্রাম নয়। বহু আগে এ অঞ্চলটা গড়ে ওঠে তাত শিল্পকে কেন্দ্র করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে বড় বড় ব্যবসায়ীরা সপ্তাহের নির্দিষ্ট দুদিন এ অঞ্চলের হাটগুলোতে ছুটে আসতেন। হাজার হাজার তাতী তাদের নিজ হাতে বুনা কাপড়, লুঙ্গি, গামছা নিয়ে হাজির হতেন সে সব হাটে।