প্রায় তিরিশ বছর আগে শামস মমীনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'চিতায় ঝুলন্ত জ্যোৎস্না' প্রকাশিত হওয়ার পর সলিমুল্লাহ খান তাঁকে শনাক্ত করেন এক ভিন্ন স্বরের কবি হিশেবে। তিতাশ চৌধুরী বলেন, তাঁর কবিতা কখনো রোমান্টিক, কখনো বা প্রতিবাদী। মমীন তাঁর পরবর্তী কাব্যগ্রন্থগুলোতে অবশ্য ভিন্ন বাঁক নিয়েছেন। এই বাঁক পরিবর্তনের মাঝেও কোথায় যেন একটি আবৃত্তি রয়ে গেছে তাঁর কবিতায়। সলিমুল্লাহ খানের নবতর বিশ্লেষণে সে কথাই শুনেই পাই: নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা ইতিহাসের উপলব্ধির সহিত মিলাইয়া দিবার ঢের উদাহরণ আছে মমীনের কবিতায়।' একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায় আহমাদ মাযহারের লেখায়। মমীনের কবিতাকে ব্যবচ্ছেদ করে তিনি বলেন, মার্কিনদেশে দীর্ঘ বসবাসের ফলে তাঁর কাব্যাদর্শ ও কাব্যনির্মিতিতে বাংলাদেশের জীবনাচারের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা চৈতন্যও যুক্ত হয়েছে সমানভাবে। এ সংকলনে আরো আছে সিকদার আমিনুল হক, মতিন বৈরাগী, আবেদীন কাদের, চঞ্চল আশরাফ, রাজিয়া সুলতানা প্রমুখ কবি ও প্রাবন্ধিকের নানামুখী আলোচনা ও বিশ্লেষণ। এসব রচনা শামস আল মমীনের কবিতা পাঠে অধিকতর সহায়ক হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের মাটিতে হলেও সে যুদ্ধের আড়ালে রয়েছে অনেক যুদ্ধ যা সংঘটিত হয় বাংলার মাটি থেকে দূরে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, অথচ কত জানা-অজানা মানুষ সে যুদ্ধে আমাদের পক্ষ নিয়ে লড়াই করেছে। এই গ্রন্থে রয়েছে সেই সব কিছু জানা-অজানা মানুষের কথা। রয়েছে সেই যুদ্ধের পেছনে যুদ্ধের কিছু কাহিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে, জানুয়ারি ১৯৭১-এ একটি ভারতীয় বিমান হাইজ্যাকের কাহিনি দিয়ে এই গ্রন্থের শুরু। আমরা সেই হাইজ্যাকের কথা অনেকেই মনে রাখিনি, কিন্তু সমর কৌশলবিদেরা একমত, সেই ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। এছাড়াও রয়েছে জাতিসংঘে বাংলাদেশের পক্ষে সােভিয়েত কূটনীতিক ইয়াকভ মালিকের সাহসী ভূমিকার বিবরণ, বাংলাদেশের গণহত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী মার্কিন কূটনীতিক আর্চার ব্লাডের প্রতি একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি, একাত্তরের গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী মার্কিন সাংবাদিক সিডনি শ্যানবার্গের একটি সাক্ষ্যভাষ্য ও মার্কিন নৌ-বন্দরে পাকিস্তানি অস্ত্রবাহী জাহাজ অবরােধের অবিশ্বাস্য কাহিনী।
মাতৃত্ব কি সৃজনশীলতার অন্তরায়? নাকি সহায়ক শক্তি? ব্যক্তি নারী-জীবনে মাতৃত্ব কি অনিবার্য ও জরুরি? নাকি বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন সৃষ্টিশীল নারীর জন্যে অথবা সম্পূর্ণ ক্ষমতাহীন প্রান্তিক নারীর জন্যে মাতৃত্বের বাধ্যবাধকতায় কিছু ছাড় দেওয়া সম্ভব? নারী-জীবনের জন্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রশ্নের জবাব অতি সহজে দেওয়া যায় না অথচ এই প্রসঙ্গ আলোচনায় বিদগ্ধজনের উৎসাহও তেমন প্রবল নয়। পূরবী বসু এই স্বল্পপরিসর গ্রন্থে সেই আলোচনারই সূত্রপাত করেছেন তাঁর স্বভাবসুলভ কথাশিল্পীর ভঙ্গিতে-পৃথিবীর নানা সৃজনশীল সন্তানবতী ও সন্তানহীন নারীর জীবনকাহিনীর আশ্রয়ে। উৎসাহী পাঠক এই গ্রন্থপাঠে কেবল মননশীলতায়ই ঋদ্ধ হবেন না, পাবেন গল্পকাহিনী পাঠের আমেজও।
স্বদেশ ছাড়াও বিদেশ থেকেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ পেয়েছে দশটি দেশ থেকে। দেশগুলো হলো : ব্রাজিল, ভারত, তুরস্ক, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, কানাডা, আমেরিকা এবং জাতিসংঘ শ্রদ্ধা জানিয়ে দশটি স্মরণীয় স্মারক ডাকটিকিট বের করে।
‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির শ্রদ্ধা ও সীমাহীন ভালোবাসা। ‘বাংলা’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ এক ও অবিচ্ছেদ্য। এ কারণেই ‘জয় বাংলা’ শব্দ উচ্চারণ করার পরে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ না-বললে বাঙালি বাঙালি জাতির অন্তরের আবেগ মুক্তি পায় না। সর্ব্কালের সর্বশেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা, শোষিত মানুষের মহান নেতা, শেখ মুজিবুর রহমান একদিনেই ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠেননি। তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠার পেছনে আছে দীর্ঘদিনের আপসহীন সংগ্রাম ও কারান্তরালে শারীরিক নির্যাতন ভোগ করার বেদনাবিধুর ইতিহাস। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বাঙালি জাতির গৌরবের অগ্নি-শিখা। বাঙালি জাতি ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্ত ঢেলে এই গৌরবের শিখা প্রজ্বলন করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক জাতির মুক্তিযুদ্ধের কথা লিপিবদ্ধ আছে বটে, কিন্তু বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ অনেক কারণেই সোনালি অক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর আর কোনো জাতি এত সংক্ষিপ্ত সময়ে, এত রক্ত আর মৃত্যুর বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেনি। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে আগামী প্রকাশনীর বিশেষ প্রকাশনা উদ্যোগ বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ সিরিজ। এ সিরিজের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবীদের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সমুদয় রচনার সংকলন পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমাদের পরিকল্পিত লেখক তালিকায় এমন অনেক বিশিষ্টজন অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন যাদের স্মরণীয় রচনায় এদেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু উত্তরপ্রজন্মের পাঠকের কাছে ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে স্বদেশের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসের বার্তা, বর্তমানের দৃঢ় পথচলা এবং সুন্দর আগামীর বিনিমার্ণ সাধন করতে এ সিরিজ বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হবার পর স্বাভাবিকভাবেই স্বপ্ন ছিল একটি নতুন দেশ গড়ে উঠবে । দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে। কিন্তু তা হয়নি। হয়েছে তার বিপরীত । বার বার রক্ত রঞ্জিত হয়েছে দেশ। দেশ গড়ার স্বপ্ন হয়েছে ধূলিসাৎ। আক্রান্ত হয়েছে স্বাধীনতা, সংবিধান, গণতন্ত্র । বিপন্ন স্বাধীনতা আর বিধ্বস্ত গণতন্ত্রের ওপর চেপে বসেছে কখনাে সামরিক শাসন কিংবা স্বৈরশাসন অথবা অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ । যা আমাদের পঁচিশ বছরের স্বাধীন রাষ্ট্রকে পঙ্গু করে দিয়েছে । এদেশ আজ যেন জীর্ণশীর্ণ। পুষ্টিহীন যুবক। | মাও সেতুং বলেছিলেন, “যুদ্ধ হচ্ছে রক্তপাতময় রাজনীতি, আর রাজনীতি হচ্ছে রক্তপাতহীন যুদ্ধ।'... বাংলাদেশের অসংখ্য লােমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়। যেখানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবার কথা সেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে । আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা-সভ্যতা, সাংস্কৃতিক সবদিক দিয়েই এদেশ মােটেও অগ্রগতি লাভ করতে পারেনি। এই না পারার পেছনে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড প্রথম এবং প্রধান অন্তরায়। কারণ একের পর এক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলাে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর দারুণভাবে | ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। ফলে আমাদের উন্নতি-উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।