পড়াশুনায় ভালো ছিলাম বলেই আশেপাশে ছিলো বেশ সুনাম। হৈচৈ করে বেড়াতাম চারিদিক। কেউ দেখলেই ডেকে ডেকে কথা বলতো। শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক হতে শুরু করে সকলেই খুব আদরে আদরে শাসন করতো। বাসায় এলেও সকলেই আহ্লাদ করতো। দুষ্টামি আর আর কথার ফাঁকে সকলেই একটা কথা জিজ্ঞেস করতো। সকলেই বলতো ‘তুমি বড় হয়ে কী হবে?’ উত্তরে আমি বলে ফেলতাম ‘আমি ডাক্তার হবো’ আবার কখনো কখনো বলতাম ‘আমি ইঞ্জিনিয়ার হবো’ রাজনীতিবিদ কিংবা অন্য পেশা নিয়ে তখন এতটা ভাবিনি। সময় গড়িয়ে আজ যখন বড় হয়ে কিছু হবার যুদ্ধে নামলাম। তখন মনে হয় সবার উদ্দেশ্য একটাই থাকা উচিৎ। আর তা হওয়া উচিৎ একজন প্রকৃত মানুষ হওয়া। আর তাইতো আজ আমি বারবার বলি ‘মানুষ হবো’ ‘মানুষ হবো’
নিউইয়র্ক থেকে বলছি প্রিয় পাঠক, শুভেচ্ছা নিন। আপনাদের জন্যেই আমার লেখা। আপনারাই আমার অক্সিজেন। আপনাদের মাঝেই আমি বেঁচে থাকতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমার ভাবনা। এই ভাবা ভাবির ভিতর দিয়ে কখন যে আমরা চলে যাই কেহ তা জানি না। বিশ্বব্যাপি এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। চোখের সামনে মানুষগুলো মরছে অহরহ। প্রবাস জীবনে এসে অনুভব করলাম মাতৃভূমি কি। দেশের জন্য এত ভাবিনি আগে কখনো। গভীর রাতে স্বপ্নে লাফিয়ে ওঠি, আহা! আমার দেশ কই। আমি এখানে কেন? যেখানে আমার মা-বাবা ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন বন্ধুরা, না জানি তারা কেমন আছে এখন। মা'কে কবর দিয়ে এসে দেখেন বাবা নেই। এক রুমে মৃত স্বামী, আরেক রুমে স্ত্রী সন্তান নিয়ে একা একা কাঁদছেন। গিয়ে একটু দেখতেও পারছেন না তিনি। পুলিশ শেষে এসে স্বামীকে প্লাষ্টিক কভারে আটকে রেখেছেন। আমরা সবাই এখন মৃত্যু পথের যাত্রী। কেউ জানে না কার আগে কে যায়। কুকুরের মনিব মারা গেছেন, কুকুর হাসপাতালে ৩ মাস অপেক্ষায় থাকে মনিবের জন্যে। তাকে কিছুতেই সরানো যায় না সেখান থেকে। অনেকে খুশী হয়ে তাকে খাবার দেন। আর ছেলেরা রাস্তায় মাকে জীবিত ফেলে চলে যায়। শেষে মায়াবি পুলিশ মাকে উদ্ধার করে কোলে তুলে নেয়। তাই ভাবছি, করোনা আসবে না কেন? রাস্তা ঘাট দোকান পাট অফিস আদালত সব বন্ধ। মানুষ জন নেই কোথাও। নিউইয়র্ক নগরী যেন এক মৃত্যুপুরী! সেই মৃত্যুপুরীতে আছি আমিও। মৃত্যু যখন কাছাকাছি এসে যায় মানুষ তখন বাঁচতে চায়, বাঁচতে চাই আমিও। এ্যাম্বুলেন্সগুলো দৌড়াচ্ছে হৃদয় বিদীর্ণ করে। সাইরেনের শব্দে কেঁপে উঠছি।