গল্প মানুষের দৈনন্দিন জীবন-আখ্যানের প্রতিফলন ঘটায়। মানব ও সমাজজীবনের কোনো তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, অনুভূতি বা উপলব্ধিকে উপজীব্য করে এক-একটি গল্পের সৃষ্টি হয়। তবে গল্প বলার ও শোনার ইতিহাস সুপ্রাচীন। মানবসভ্যতার ও ভাষার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে গল্প সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গরূপে নিজের স্থান করে নিয়েছে। পরিকল্পনা পর্যায়ে বইটির নামকরণ স্থির করেছিলাম ’অন্যরকম গল্প সংকলন’ কারণ এই বইটিতে একটি গতানুগতিক সংকলন হবে ব্যতিক্রমধর্মী পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। এই গল্পসম্ভারে সমকালীন বাংলার সাহিত্যের কথাসাহিত্যিকদের ছোটগল্প, বড়গল্প, অনুগল্প ও অনূদিত গল্প সহ বহুমাত্রিক আমেজ সমৃদ্ধ লেখকদের এক বা একাধিত গল্প অন্তর্গত হয়েছে।...
আশির যখন জাপানে পড়তে গিয়েছিল ও তখন ছাত্র। পুরো আলাদা একটা সংস্কৃতিক থেকে সেখানে গিয়ে সে দেশের নানা কিছু দেথে ও স্বাভাবিকভাবেই অবাক হয়েছে। বিচিত্র বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত ঢঙে লেখা এই বইয়ের ছোট ছোট রচনাগুলো ওর সেই অবাক হওয়ার গল্প। জাপানি জীবনের নানা ব্যাপার দেখে ও একাই শুধু অবাক হয়েছে তা নয়, ওর স্বাদু চিত্তাকর্ষক আর আমেজি লেখার মৌতাতে পাঠক হিসেবে আমরাও যেমন কিছুটা অবাক হয়েছি। লেখাগুলো ছোট মজাদার বুদ্ধিদীপ্ত ও গতিশীল। বিচিত্র তথ্যে ভরা। লেখার এই প্রসাদগুণ দিয়ে আশির ছোট ছো বেশকিছু মানবিক গল্পের পাশাপাশি জাপানি জীবনের নানা পরিচয়- ওখানকার মানুষের আত্মহত্যা, তাদের ভূতে বিশ্বাস, ফিউনারালের পরিপাটি ব্যবস্থা, শ্মশান, কাস্ট সমস্যা, কুসংস্কার, সামাজিক শিক্ষা, ভাষা, মিডিয়া- এমনি হরেক বিষয়কে রমণীয় করে তুলেছে। দেশটিকে ও টুরিস্টদের মতো বাইরে থেকে দেথেনি- দেখেছে একজন বিদেশি হিসেবে যে বহুদিন সে দেশে থাকতে থাকতে নানা বাস্তব ও মানবিক অভিজ্ঞতায় ভরে উঠেছে। এ বই তারই উষ্ণ সজীব বিবরণ। এজন্যে বইটিতে জাপানের অন্তর্জীবনের খবর মেলে। বছর আট-দশ আগে জাপানে বেড়াতে গিয়ে আমি ওদেশের ওপর একটা ভালো বই নিয়ে এসেছিলাম। কিন্ত বইটি পড়ে জাপানকে যেন জেনেছি তার চেয়ে বেশি। এর কারণ এ গল্প জাপানের একেবারে ভেতরের গল্প। লেখকের ব্যক্তিগত রসবোধ, চাউনি, বর্ণনাভঙ্গি একে প্রাণবন্ত করেছে। বইটি আমাকে জাপানের বাসিন্দা করে তুলেছে। পড়ার সময় মনে হয়েছে সব পাঠকেরই হয়তো তাই মনে হবে। -- আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ