বাংলা সাহিত্যে লেখকরা নারীদের বহু রঙে এঁকেছেন। কখনো সে একেবারে শ্বাশত বাঙালি নারী। কখনোবা প্রথা ভাঙা, সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখানো প্রতিবাদী চরিত্র। কখনো প্রেমময়, কখনো কঠোর। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি লেখক রওশন হক তাঁর 'আমি প্রেমে পড়িনি' ছোটগল্পের সংকলনে বলতে চেয়েছেন, নারী- পুরুষের লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য আছে কিন্তু সামাজিক অবস্থানের পার্থক্য নেই। তাঁর গল্পে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাঙালি মধ্যবিত্ত নারীদের অসহায়ত্ব, প্রত্যাখ্যান, বঞ্চনা ও দ্রোহ যেমন প্রকাশ পেয়েছে তেমনি দেখানো হয়েছে নারীরা বেশিরভাগই সাহসী, সংগ্রামী ও প্রেমিকা। তাঁর লেখনিতে প্রবাসে নারী চরিত্রগুলোর বৈচিত্র্যপূর্ণ বিন্যাস করা হয়েছে। প্রেমের বাঁধন ছেড়ার গল্পে হয়তো অনেক প্রেম পরিণয় পর্যন্ত গড়ায় না। প্রেম ও বিরহ যেন একই মুদ্রার দুই পিঠ। তখন বিয়ে ও সংসার যাপনে হতাশা, দুঃখের প্রকাশ ঘটে কিন্তু পরক্ষণেই সমাজের নিন্দাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সেই চিরচেনা নারীই নতুন জীবনকে আলিঙ্গন করে-এমন বিষয়গুলে
বেলা-অবেলার নিউইয়র্ক রওশন হকের গল্পগ্রন্থ। আমি নিজে এ গ্রন্থের সব গল্পেরই প্রথম পাঠক। ফলে গল্পের বিষয়বস্তু, গল্পের চরিত্র ও প্রেক্ষাপট খুবই চেনাজানা। দেশের বাইরে থাকা একজন লেখকের ভাব বিলাসের কথা যেমন আছে। তেমনই আছে যন্ত্রণার উচ্চারণ।
বাংলাদেশে যাঁরা বাস করেন তাঁদের সঙ্গে বাংলাদেশের বাইরে বসবাসকারী বাঙালিদের সংস্কৃতির কিছু পার্থক্য রয়েছে। জীবনযাত্রার এই ভিন্নতার চিহ্ন এখনও বাংলাদেশের সাহিত্যে বেশি দেখা যায় না। অন্য দেশে বাস করা সত্ত্বেও বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের জীবনযাপনে গড়ে উঠছে পৃথক একটি জনসমাজ।