"এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে তুমি কীভাবে করো স্বাধীনতাবিরোধীদের সংগঠন?’ ‘স্যার, আমি করি না। কেউ প্রমাণ দিতে পারলে যে শাস্তি দেন মাথা পেতে নেব।’ প্রক্টর স্যার হুংকার দিয়ে ওঠেন। ‘কী প্রমাণ চাও তুমি? তোমার ফোন পরীক্ষা করেছে ছেলেরা। অবশ্যই তুমি স্বাধীনতাবিরোধীদের লোক।’ আমি চিৎকার করে উঠি, ‘এসব সত্যি না, স্যার।’ ‘তুমি আমাকে চ্যালেঞ্জ করো! আবার তোমার এত বড় সাহস, তুমি ফোন করো আমাকে!’ ‘স্যার!’ আমি কেঁদে ফেলি এবার। ‘তাহলে কার কাছে যাব, স্যার?’ তিনি তিক্ত কণ্ঠে পাকিস্তানের নাম বলেন, সেখানে চলে যেতে বলেন। পাকিস্তানের সাথে আমার কী সম্পর্ক, কেন সেখানে যাব, কিছুই বুঝতে পারি না। বিস্মিত হয়ে বলি, ‘কই যাব, স্যার!’ ‘পাকিস্তান! পেয়ারা পাকিস্তান!’ নাটুকে ভঙ্গিতে এটা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। আমি আবু বকর এই সময়ের বিব্রতকর কাহিনি। "
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি আর শিল্পায়নের পথে জাপানের গর্বিত অগ্রযাত্রার শুরু। এই অগ্রগতির রহস্য বুঝতে জাপান দেশটিকে ও তার জনমানসকে নিবিড়ভাবে চেনা ও বোঝা দরকার। এ বইয়ে লেখক মনজুরুল হক তাঁর দীর্ঘ জাপানবাসের অভিজ্ঞতার আলোকে সেই চেষ্টাই করেছেন। বাংলাদেশের মানুষের কাছে জাপান হূদয়ের খুব কাছের দেশ হলেও, তার প্রকৃত পরিচয় যেন অনেকটাই আড়ালে ঢাকা। এর কারণ সম্ভবত জাপান সম্পর্কে বাংলা ভাষায় লেখা বইয়ের তুলনামূলক ঘাটতি। বিংশ শতাব্দীর মধ্য-পাঁচের দশক থেকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি আর শিল্পায়নের পথে দেশটির গর্বিত অগ্রযাত্রার শুরু। তবে অর্থনৈতিক অগ্রগতির এই প্রবাহের নিচে জাপানের সাহিত্যিক, শৈল্পিক ও নান্দনিক উত্কর্ষ এবং আধ্যাত্মিক আবেদনের ধারাটি চাপা পড়েনি। এমন যে জাপান, সেই জাপানকে ভালোভাবে বুঝতে হলে দরকার তাকে অতি কাছ থেকে সুনিবিড়ভাবে দেখা ও তার ভেতরের সৌন্দর্যের অনুসন্ধান করা। জাপানে তাঁর দীর্ঘ প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে এ বই লিখতে গিয়ে লেখক মনজুরুল হক সেই চেষ্টাই করেছেন। সুযোগ হয়েছে তাঁর সে দেশের সব কটি জেলা সফরের। দেশটির নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন। সে তালিকায় যেমন আছেন দেশটির সম্রাট, তেমনি পার্ক কিংবা রেলস্টেশনে কার্ডবোর্ডের বাক্সে সংসারজীবন যাপন করা গৃহহীন মানুষ। সমৃদ্ধ সেই অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে জাপানে তাঁর বসবাসের প্রথম দেড় দশকের নির্যাস লেখক তুলে ধরেছেন এ বইয়ে। একবার পড়তে শুরু করলে পাঠক একনিশ্বাসে তা শেষ না করে থাকতে পারবেন না।
চট্টগ্রাম সফরকালে বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তাদের হাতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়া এবং এর পরপরই আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল মঞ্জুরকে গ্রেপ্তার ও নির্মম হত্যার ঘটনা এ বইয়ের মূল বিষয়। জিয়া হত্যার দায়ে সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতের রায়ে যাঁদেরকে দোষী সাব্যস্ত ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, কেবল তাঁরাই কি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন? সাত্তার সরকারের গঠিত সেনা ও বিচার বিভাগীয় তদন্তে কি প্রকৃত সত্য বেরিয়ে এসেছিল? জেনারেল মঞ্জুর কি আসলেই চট্টগ্রামের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন? নাকি ষড়যন্ত্রের শিকড় ছিল আরও গভীরে? আমাদের কাছে ইতিহাসের এই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহের অনেক কিছুই আজও অনুদ্ঘাটিত। ঘটনার সময় এ বইয়ের লেখক ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। কাছ থেকে অনেক কিছু জানার, অনুসরণ করার সুযোগ হয় তাঁর। লেখকের অভিজ্ঞতার বিবরণসংবলিত এ বই অনুসন্ধানের নতুন জানালা খুলে দেবে।
সুদূর অতীত থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত হজযাত্রার অভিজ্ঞতা, যাত্রাপথের বর্ণনা এবং পবিত্র স্থানগুলো সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিবরণ, বিভিন্ন যুগের হজযাত্রীদের স্মৃতিকথা এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। হাজার বছর ধরে মানুষ পায়ে হেঁটে ও উটের পিঠে চড়ে, পরে জাহাজ, রেল আর এখন বিমানযোগে হজব্রত পালন করে আসছে। একসময় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে একরকম চিরবিদায় নিয়ে হজে যাওয়া হতো। জীবনের মায়া তুচ্ছ করে দীর্ঘ, দুর্গম ও বিপত্সংকুল পথ পাড়ি দিয়ে ছিল এই যাত্রা। পৃথিবীর একেক প্রান্ত থেকে একেক পথে এই যাত্রায় কত বিচিত্র অভিজ্ঞতাই না সঞ্চিত হয়েছে মানুষের, যুগে যুগে। প্রাচীনকাল থেকে সাম্প্র্রতিক সময় পর্যন্ত সেই যাত্রাপথের বিবরণ এবং পুণ্যপথের যাত্রীদের অভিজ্ঞতা এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে ইসলামের পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আরব দেশে যাতায়াতের স্মৃতি এবং সেখানকার পবিত্র স্থানগুলোর ইতিহাসভিত্তিক বর্ণনা নিয়ে লিখিত বইটি পাঠকের অন্তর্লোককে আলোকিত করবে।
সরদার ফজলুল করিম সারা জীবন মানুষের সঙ্গে পথ চলেছেন। দেশ, সমাজ, সমকাল, সংস্কৃতি ও রাজনীতি নিয়ে ভেবেছেন, কাজ করেছেন, কথা বলেছেন ও লিখেছেন। এসব বিষয়ে তাঁর চিন্তা, অনুভূতি ও মতামত ব্যক্ত হয়েছে বিভিন্ন সময়ের রচনায়। ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রথম আলো তে প্রকাশিত এমন ২১টি নির্বাচিত অগ্রন্থিত লেখা নিয়ে এ বই। লেখাগুলোয় উঠে এসেছে বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা দিক। এসেছে সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যা ও সংকটের কথা। বাদ পড়েনি ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা-অনুভূতি এবং বিশিষ্টজনদের সঙ্গে তাঁর সান্নিধ্যের স্মৃতিসহ নানা প্রসঙ্গ। লেখকের মনীষার পরিচয়বহ রচনাগুলো বর্তমান সময়ে যেমন প্রাসঙ্গিক, তেমনি ভবিষ্যত্কালের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সমকালীন ইতিহাসকে বোঝার পাশাপাশি বইটি দেশের একজন সেরা মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মহত্ত্ব্বকে চিনতেও পাঠককে সহায়তা করবে।
এই বইয়ে আছে ইরানের বিপ্লবের জটিল ঘটনাপ্রবাহের বিস্তৃত আলোচনা। বিপ্লবে ধর্মের আধ্যাত্মিকতার ভূমিকা, ইরানের কমিউনিস্ট তুদেহ পার্টিসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির ব্যর্থতা আর রক্ষণশীল বনাম সংস্কারপন্থার দ্বন্দ্ব কীভাবে ইরানের ভাগ্য নির্ধারণে সংগ্রামরত, তার বর্ণনা তুলে ধরেছে এই বই।