প্রায় তিরিশ বছর আগে শামস মমীনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'চিতায় ঝুলন্ত জ্যোৎস্না' প্রকাশিত হওয়ার পর সলিমুল্লাহ খান তাঁকে শনাক্ত করেন এক ভিন্ন স্বরের কবি হিশেবে। তিতাশ চৌধুরী বলেন, তাঁর কবিতা কখনো রোমান্টিক, কখনো বা প্রতিবাদী। মমীন তাঁর পরবর্তী কাব্যগ্রন্থগুলোতে অবশ্য ভিন্ন বাঁক নিয়েছেন। এই বাঁক পরিবর্তনের মাঝেও কোথায় যেন একটি আবৃত্তি রয়ে গেছে তাঁর কবিতায়। সলিমুল্লাহ খানের নবতর বিশ্লেষণে সে কথাই শুনেই পাই: নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা ইতিহাসের উপলব্ধির সহিত মিলাইয়া দিবার ঢের উদাহরণ আছে মমীনের কবিতায়।' একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায় আহমাদ মাযহারের লেখায়। মমীনের কবিতাকে ব্যবচ্ছেদ করে তিনি বলেন, মার্কিনদেশে দীর্ঘ বসবাসের ফলে তাঁর কাব্যাদর্শ ও কাব্যনির্মিতিতে বাংলাদেশের জীবনাচারের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা চৈতন্যও যুক্ত হয়েছে সমানভাবে। এ সংকলনে আরো আছে সিকদার আমিনুল হক, মতিন বৈরাগী, আবেদীন কাদের, চঞ্চল আশরাফ, রাজিয়া সুলতানা প্রমুখ কবি ও প্রাবন্ধিকের নানামুখী আলোচনা ও বিশ্লেষণ। এসব রচনা শামস আল মমীনের কবিতা পাঠে অধিকতর সহায়ক হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের রাজনীতি গ্রন্থে আবদুল গাফফার চৌধুরীর ১৪৫টি লেখা সন্নিবেশিত হয়েছে। বিষয়-অনুযায়ী লেখাগুলােকে আটটি পর্বে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন, প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু, প্রসঙ্গ শেখ হাসিনা, ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, স্মৃতিচারণ, বাংলাদেশের রাজনীতি, বিশ্বরাজনীতি, প্রসঙ্গ করােনা ইত্যাদি। এই লেখাগুলােতে লেখকের পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও মতামত প্রকাশিত হয়েছে। বস্তুত আটটি পর্ব নিয়ে পৃথক পৃথক গ্রন্থই প্রকাশ করা যেতাে, কিন্তু পাঠকের কথা চিন্তা করেই এক গ্রন্থে এতগুলাে বিষয়কে স্থান দেওয়া হয়েছে। এ গ্রন্থের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলাে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিশদ আলােচনা। এ ছাড়া ‘ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি যেসব সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেছেন সেগুলােও অত্যন্ত গুরুত্ববহ। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে যে-চারটি লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেই লেখাগুলােতে বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্র তাে বটেই আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতি-প্রকৃতিও উপস্থাপিত হয়েছে।
‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির শ্রদ্ধা ও সীমাহীন ভালোবাসা। ‘বাংলা’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ এক ও অবিচ্ছেদ্য। এ কারণেই ‘জয় বাংলা’ শব্দ উচ্চারণ করার পরে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ না-বললে বাঙালি বাঙালি জাতির অন্তরের আবেগ মুক্তি পায় না। সর্ব্কালের সর্বশেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা, শোষিত মানুষের মহান নেতা, শেখ মুজিবুর রহমান একদিনেই ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠেননি। তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠার পেছনে আছে দীর্ঘদিনের আপসহীন সংগ্রাম ও কারান্তরালে শারীরিক নির্যাতন ভোগ করার বেদনাবিধুর ইতিহাস। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বাঙালি জাতির গৌরবের অগ্নি-শিখা। বাঙালি জাতি ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্ত ঢেলে এই গৌরবের শিখা প্রজ্বলন করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক জাতির মুক্তিযুদ্ধের কথা লিপিবদ্ধ আছে বটে, কিন্তু বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ অনেক কারণেই সোনালি অক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর আর কোনো জাতি এত সংক্ষিপ্ত সময়ে, এত রক্ত আর মৃত্যুর বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেনি। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে আগামী প্রকাশনীর বিশেষ প্রকাশনা উদ্যোগ বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ সিরিজ। এ সিরিজের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবীদের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সমুদয় রচনার সংকলন পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমাদের পরিকল্পিত লেখক তালিকায় এমন অনেক বিশিষ্টজন অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন যাদের স্মরণীয় রচনায় এদেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু উত্তরপ্রজন্মের পাঠকের কাছে ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে স্বদেশের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসের বার্তা, বর্তমানের দৃঢ় পথচলা এবং সুন্দর আগামীর বিনিমার্ণ সাধন করতে এ সিরিজ বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।
কৈশোর ও যৌবনকালের রোমান্টিক সম্পর্কের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ নিয়ে রচিত একটি উপন্যাস। সাদা এবং কালো, অথবা ভালো এবং মন্দ, অথবা আলো এবং আঁধারের বাইরেও একটি জগৎ আছে। এর বিস্তৃতি মোটা দাগের সাদা ও কালোর চেয়েও অনেক বেশি, যার হদিস আমরা খুব কমই পাই। তেমনি মোহ বা ইনফাচুয়েশন থেকে ভালোলাগা এবং প্রেম-ভালোবাসার পার্থক্য করাও কঠিন। ফলে সৃষ্টি হতে পারে দুঃখ, ঘৃণা ও প্রতিহিংসার মতো পরিস্থিতি। বইটিতে এসবই বর্ণিত হয়েছে কয়েকটি চরিত্রের মাধ্যমে একটিমাত্র গল্পের কাঠামোয়। কাজেই ভালো-মন্দের তাত্ত্বিক বিচার ছাড়াই শুধু উপন্যাসের স্বাদ পাওয়া যাবে বইটিতে।