মানুষ যখন তার জীবনের সাথে কোন ঘটনার সাথে মিল খুজে পায়, তখন সেটা সম্পর্কে কৌতহলী হয়ে ওঠে। হাসি, কান্না, ভুলভ্রান্তি, ভালোবাসা, কষ্ট, সবারই থাকে। কেউ এসবের বাহিরে নয়। বইটি প্রবাসী মানুষের নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানো, অভিজ্ঞতা নিয়ে। জীবন যুদ্ধে পজেটিভ চিন্তা-ভাবনা বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাবার যাপিত জীবনের গল্প। আর মাতৃভূমিকে কাছে পাবার তীব্র বাসনার গল্প। কানাডায় প্রাত্যহিক জীবনের ছবি ফুটিয়ে তোলার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। সাথে সেখানকার কিছু রম্য গল্প।
"তাকে আমি দেখেছি আমার কৈশোরের অবাক চোখে। তাকে আমি দেখেছি তার রাজনৈতিক উত্থানের উত্তাল সময়ে। তাকে দেখেছি তার ঝঞ্ঝামুখর সংগ্রামী দিনগুলিতে। দেখেছি বাঙালিদের একটি স্বাধীন দেশের অভ্যুদয়ে। দেখেছি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রাণপুরুষ হিসাবে। আমি দেখেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দেখেছি আমার একান্ত চোখে। এ দেখা একান্তই আমার নিজের দেখা। তাকে দেখেছি ঘনিষ্ঠভাবে খুব কাছে থেকে, দেখেছি দূর থেকে। নানা কারণে ছোটবেলা থেকেই আমার সুযোগ হয়েছে তার কাছাকাছি কিংবা আশপাশে যাওয়ার। প্রথমে পারিবারিকভাবে, পরে সাংবাদিকতা পেশার কারণে। নানাভাবে তাকে দেখেছি। বলতে পারি, কর্মমুখর সংগ্রামী জীবনের পাশাপাশি অন্য এক শেখ মুজিব আমার স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে রয়েছেন। আমি আমার দেখা সেই অন্য এক শেখ মুজিবের কথাই এখানে বলতে চাই...
দেশ ও বিদেশের পটভূমিতে বিভক্ত বাংলাদেশের মানুষের এক অন্তরঙ্গ আখ্যান পুরুষ উপন্যাসটি। এর একদিকে দাঁড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশের জটিল বাস্তবতা; অন্য দিকে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশের মানুষের যাপিত জীবনের সংগ্রামী ইতিবৃত্ত। এক অর্থে পুরুষ দুই বন্ধু নিজাম কাজমী ও কফিলউদ্দিন চৌধুরীর বিনুনীর মতো পেঁচিয়ে থাকা জীবনেরই কাহিনি। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোয় দুই বন্ধুতে যেখানে ইশারায় আশ্বাসে আর বাঁচার গানে ছিল মোগ্রস্ত সেখানে যুদ্ধোত্তর কাল যেন তাদের ভাসিয়ে নিল জীবনেরই ভিন্নতর প্রবাহে। যুদ্ধোত্তর কালের পরিবর্তনের জটিলতা গভীর ছায়া ফেলেছে তাদের দুজনেরই জীবনে। প্রবাসে বাস করলেও দেশপ্রেম সব সময় থেকেছে অন্তঃশীল। জীবনের বাঁকে বাঁকে দুজনের হৃদয়েই রয়ে যায় সেই বাংলাদেশ-এক দিকে যার বিকাশ আর অন্যদিকে যাতনা। সব মিলিয়ে এ-ই যেন তাদের প্রবাস জীবন। উপন্যাসের আখ্যানে এক জনের স্থিতি আর অন্যজনে অস্থিরতার মধ্যেই লেখকের অন্বেষণ দেখা যায় কাক্ষিতের: পীর, মল্লিকা, জ্যাক ড্যানিয়েল গ্রাস করে একজনকে, অন্য জন অচেতন অনুভবলোক থেকে খোঁজেন অন্বিষ্ট বোধকে। জীবন্মতের অবচেতনতা থেকে জেগে-ওঠা আশা এবং দুটি খুনের মতো নাটকীয় নেতিবাচক ঘটনার আড়ালে পুরুষ উপন্যাসটি উত্তীর্ণ হয়ে ওঠে এক প্রতীকী ব্যঞ্জনায়। কী সেই ব্যঞ্জনা তা অনুভব করতে হলে পড়তে পড়তে এর শেষে পৌঁছতে হবে পাঠককে।