ডিউককে যদি কেউ বলে অমুক লোকটাকে খুন করতে হবে—পারবে? প্রথমে সে জানতে চাইবে বিনিময়ে কত টাকা দেয়া হবে তাকে। দরে বনলে অর্ধেক টাকা অগ্রিম চাইবে সে। এবং টাকা নিয়ে কাজটা করবে না। কারও কিচ্ছুটি করবার উপায় নেই এ নিয়ে তো আর থানা-পুলিস চলে না। বেশ চলছিল এরকম। কিন্তু ভুলটা করল তখনই যখন আশি হাজার টাকা নিল সে কেয়া চৌধুরীর কাছ থেকে—যে জানে, টাকা নিয়ে কাজ করবার অভ্যেস নেই ওর।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রচণ্ড নাশকতামূলক তৎপরতা চালাচ্ছে। মনাদিল দাউদের অ্যাকশন পার্টি। মনে হচ্ছে এরা সাচ্চা মুক্তিযোদ্ধাই বটে! কিন্তু রানা লক্ষ করছে। এদের অ্যাকশনের ফলে ইসরায়েলিদের কারও কোন ক্ষতি হচ্ছে না, মারা পড়ছে নিরীহ আরব শিশু, নারী,বৃদ্ধ। এই মনাদিল দাউদই কেড়ে নিতে যায় ফ্রিডম পার্টির জন্যে আনা অস্ত্র। চায় বশির জামায়োলের লুট করা। বাংলাদেশের সম্পত্তি এক টন সোনার সন্ধান, তার ভাইঝির প্রেম!
নিউ অর্লিন্স এয়ারপোর্টে পৌঁছে রানা জানল, কাছেই ছোট্ট এক শহরে বাঁশি বাজাবেন দুনিয়া-সেরা বংশীবাদক পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া। তখনই স্থির করে ফেলল ও, থেকে যাবে আর দুটো দিন, কিংবদন্তি মানুষটির বাঁশি শুনে তারপর ফিরবে দেশে। জানত না, সিদ্ধান্তটা ছিল কতবড় ভুল। জড়িয়ে পড়ল ও ভয়ঙ্কর এক বিপদে! গেস্টহাউসে উঠে যে হাসিখুশি কৃষ্ণাঙ্গিনী মহিলাকে বড়বোনের মত লেগেছিল, তারই খুনের দায়ে ফেঁসে গিয়ে পালাচ্ছে এখন রানা। কিন্তু পালিয়ে যাবে কোথায়? শুরু হয়েছে লুইযিয়ানার সবচেয়ে বড় ম্যান-হাণ্ট! একদিকে রক্তলিপ্সু কিছু লোক ও শত শত পুলিশ, অন্যদিকে রানা একা! যারা চরম অন্যায় করল লিযের ওপর, তাদেরকে ছেড়ে দেবে রানা? শুরু হয়েছে ওর প্রাণান্ত সংগ্রাম! শপথ নিয়েছে: প্রাণ থাকতে ছাড়বে না ওই বর্ণবাদী খুনি জানোয়ারগুলোকে!
কে ওই অপরূপা? চোখ সরাতে পারল না রানা। জানল, মেয়েটা ওর মৃত সহযোগী মাইকের বোন। অনুরোধ করল জুডি, খুঁজে দিতে হবে ওর বড় বোনকে। বিসিআই চিফও বললেন, মেয়েটাকে সাহায্য করা তোমার দায়িত্বের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু দুর্গম, নিষ্ঠুর পশ্চিমের লিটল ফোর্কে পা দিয়েই জড়িয়ে গেল রানা মস্ত ঝামেলায়। কেবলই বাড়ল লাশের ভিড়। শত্রু ভয়ঙ্কর। জোর করে তুলে নিয়ে গেল অসহায় জুডিকে। ওকে উদ্ধার করতে সুদূর এক র্যাঞ্চে হাজির হলো রানা। জানে, ওর জন্যে অপেক্ষা করছে একদল রক্তলোলুপ খুনি! সত্যি বলতে, সব বুঝেও মৃত্যুর মুখে ঝাঁপ দিল রানা। কে জানে বাঁচে কি না!
করুণ আকুতি জানালেন ধনকুবের পিয়েরে উইনিং: মরতে বসেছে তাঁর নাতনি, ব্যর্থ হয়েছে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান, এখন কেবল একটা মিথ… অ্যালকেমির পুরনো এক পাণ্ডুলিপিই হয়তো পারে মিনতিকে বাঁচাতে। চমকে গেল রানা মেয়েটির নাম শুনে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে রানা বুঝল, অনুরোধে ঢেঁকি গিলেছে। ওই পাণ্ডুলিপির অস্তিত্ব আছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ তো আছেই, ঝামেলা হিসেবে সঙ্গে জুটে গেছে কানাডিয়ান এক একরোখা সুন্দরী। কোনও এক গুপ্তসংঘও নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায় ওটার সাহায্যে… যে-কোনও মূল্যে। একাধিকবার মরণফাঁদ পাতল তারা রানা-সেলেনার জন্য। উপযুক্ত জবাব দিল রানাও। কিন্তু ও জানত না, সব শেষ হয়ে গেছে ভেবে যখন সতর্কতায় ঢিল দিয়েছে একটু,তখনই চুপিসারে হাজির হয়ে যাবে শত্রুপক্ষের ভয়ঙ্করতম খুনিটা।
গোটা পৃথিবী জুড়ে আসছে প্রলয়ঙ্করী মহাপ্লাবন! অফিসে ডেকে নিয়ে জানালেন বিসিআই চিফ। আগামী বছর তলিয়ে যাবে বাংলাদেশ কাজেই, রানা, খোঁজ নাও কী ঘটছে। বসের নির্দেশে রহস্যময় অ্যাসাইনমেন্টে জড়িয়ে গেল রানা। চিনা বিলিয়নেয়ারের পেটের খবর জানতে গিয়ে বন্দি হলাে দুর্গম এক দ্বীপে। রানা ও সোহেলের গর্দান নিতে কুখ্যাত তলোয়ারে শান দিচ্ছে ভয়ঙ্কর খুনি ওরে চিচিওয়া! এদিকে রানা যে খুন করতে চলেছে জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে, সেটা ঠেকাবে কে? মহা জটিল অবস্থা। ক’দিন পর পৃথিবীর উঁচু পর্বতের চূড়াগুলো ছাড়া আর সবই ডুবে যাবে পানির নিচে! মরিয়া হয়ে উঠল রানা। নিশ্চিত মৃত্যুর আগে লড়বে প্রাণপণে!