মেয়েটাকে দেখে চমকে উঠল রানা। ঠিক যেন লুবনা… লুবনা আভান্তি! ইটালিয়ান সেই মিষ্টি কিশোরী, যে রানার মন জয় করে নিয়েছিল… যে ওকে একটা গান উপহার দিয়েছিল… যাকে রক্ষার দায়িত্ব নিয়েও ব্যর্থ হয়েছিল রানা। সেই কষ্ট আজও তাড়া করে ফেরে ওকে। লুবনার মত এ-মেয়েটিও বিপন্ন। নিষ্ঠুর একদল খুনি তাড়া করছে তাকে, ছুটতে ছুটতে রাতদুপুরে রানার বুকে আছড়ে পড়েছে সে। এরপর কি আর চুপ করে থাকা যায়? সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল রানা। জড়িয়ে পড়ল ভয়ঙ্কর বিপদে।
বিসিআই নির্দেশ দিলঃ রানা, আত্মগোপন করো! তোমাকে খুন করতে আসছে এমআই-সিক্সের একদল দুর্ধর্ষ এজেন্ট! সত্যিই ইতালিতে এসে হাজির হলো তারা। তাদের ক’জনকে খতম করে পালিয়ে গেল ও ফ্রান্সের দুর্গম এক পাহাড়ি অঞ্চলে। আশ্রয় পেল সরল মনের ক’জন সংসারত্যাগী সাধুর কাছে। একদিন শহর থেকে ফিরে দেখল রানা: কারা যেন নিষ্ঠুরভাবে খুন করে গেছে মঠের সব সাধুকে।। আগুন ধরে গেল রানার মাথায়। প্রতিজ্ঞা করল:এর শেষ দেখে ছাড়বে ও। পাঠক, এইবার দেখতে পাবেন কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে মাসুদ রানার প্রতিশোধ! আপনার প্রিয় রানা জড়িয়ে গেছে আশ্চর্য রহস্যময় এক শ্বাসরুদ্ধকর জটিলতায়।
রানার কাছে সাহায্য চাইলেন বিলিয়নেয়ার লুকা ব্রেযনেভ। বিসিআই চিফও চান তাঁকে সাহায্য করুক রানা। তবে দুর্ধর্ষ বাঙালি এজেণ্ট জানে না, মস্কোয় লক্ষ্মী মেয়ে ইউনাকে খুঁজতে গিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বের ভয়ঙ্কর এক জটিল ষড়যন্ত্রে। ভবিষ্যতে জ্যান্ত মানুষ কি পরিণত হবে রোবটে? মহাবিপদে পড়ে হাড়ে হাড়ে টের পেল রানা, কাউকে উদ্ধার করা তো দূরের কথা, এখন নিজেকে রক্ষা করাও অসম্ভব। ওকে বন্দি করে নিজের আস্তানায় নিল নিষ্ঠুর এফএসবি মিশন চিফ। তার একটাই কথা: হয় যোগ দাও আমার সঙ্গে, নইলে স্রেফ খুন করে ফেলব। তা হলে কি প্রাণে বাঁচবে ইউনা ও তার বাবা? মারাত্মক ফাঁদ ছিঁড়ে বেরোতে গিয়ে শুরু হলো মরিয়া রানার প্রাণপণ সংগ্রাম।
টানা ক্লান্তিকর কাজ, তাই ছুটি পেয়ে খুশি হয়েছিল রানা। কিন্তু ফোন দিলেন কর্নেল (অব.) জন ব্রাউন। নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে ওকে রক্ষা করেছিলেন তিনি। জরুরি সাহায্য চাই তাঁর। যেতেই হলো রানাকে ইতালিতে। তারপর সুদূর মিশরে। ধরেও ফেলল কর্নেলের ছেলের খুনিকে। তবে বিসিআই এজেণ্ট জানে না, জড়িয়ে গেছে লাখ-কোটি ডলারের প্রাচীন গুপ্তধনের মারণজালে। এতেই শেষ নয় সমস্ত জটিলতা। উপকারী মানুষ কর্নেলের সুন্দরী, দ্বিতীয় স্ত্রী পাগলিনী হয়েছে রানার প্রেমে! চারপাশে ভয়ঙ্কর হিংস্র নৃশংস খুনি। যখন তখন রানাকে খতম করবে জঙ্গী নেতা জমির শেখ। আর ওই গুপ্তধন? ওটাই বা গেল কোথায়? মহাবিপদে পড়ে শ্বাস ফেলারও সময় রইল না ওর! চলুন, রানার সঙ্গে আমরাও দেখে আসি: সত্যিই ওসব আছে কি না।
এক কাজে গিয়ে জড়িয়ে গেল ওরা আরেক ঝামেলায়। প্রলয় ঘনিয়ে আনছে ভয়ঙ্কর এক উন্মাদ বিজ্ঞানী। কাজে নেমেছে তার অদ্ভুত বিপজ্জনক কাল্ট। চাইছে বিশ্বের আশি ভাগ মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতে! হাতে অমোঘ মারণাস্ত্র! রানা ও তার বন্ধুরা বুঝল, মানব সভ্যতা বাঁচাতে চাইলে এখনই সময়। কাজে নেমেই টের পেল ওরা কী ভয়ঙ্কর ফ্যানাটিক একটা দলের বিরুদ্ধে লেগেছে। ভীষণ বিপদে পড়া রানা, সোহেল, ফু-চুং, উর্বশী, স্বর্ণা। এক পর্যায়ে বলল সোহেল, আর উপায় নেই রে, এখন দরকার ইজরায়েলের তৈরি জিব্রাইলের মুষ্টি। কিন্তু তা পেতে চাইলে মস্ত ঝামেলা পোহাতে হবে। তাই করল ওরা, মহাশূন্যে চলে গেল পৃথিবী রক্ষা করতে। পারবে ওরা? এদিকে তো চারদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে মৃত্যু।
মুক্তিপণ আদায় করবে বলে মালবাহী এক ফ্রেইটার দখল করেই বোকা বনে গেল সোমালি জলদস্যুরা। জাহাজে ভূত আছে। হলভর্তি লোক গায়েব হয়ে যাচ্ছে চোখের পলকে। এই আছে, এই নেই। ভৌতিক জাহাজ মার্ভেলকে হাইজ্যাক করে নিয়ে গেল ওরা ওদের ঘাটিতে। তারপর?…একটা কাজ শেষ হতে না হতেই রানার কাধে চাপল আরেক মহা দায়িত্ব। এখুনি জাহাজ নিয়ে ছুটতে হবে ত্রিপোলির পথে। শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে লিবিয়ার মরুভূমিতে ক্র্যাশ করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্লেন। ক্র্যাশ, না স্যাবোটাজ, না কি হাইজ্যাক? প্রধানমন্ত্রী বেঁচে আছেন তো? এটা লিবিয়ার অস্থির সময়ের কাহিনি। দ্রুত ফুরিয়ে আসছে প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির সময়। চলুন, রানার সঙ্গে গিয়ে দেখি আসলে কী ব্যাপার।