পাঠক গ্রিক উপকথার মাইডাস টাচের গল্প জানেন তো? স্বর্ণ লোভী রাজা মাইডাসকে অদ্ভুত এক বর দিয়েছিলেন দেবতারা- শুধু স্পর্শ দিয়ে যে- কোন জিনিসকে সোনায় রূপান্তরিত করতে পারতেন তিনি। সেটা তার জন্য হয়ে দাঁড়ায় অভিশাপ। ভুল করে নিজের মেয়েকে সোনার মূর্তি বানিয়ে ফেলেন তিনি। করুন… সেইসঙ্গে সুন্দর এক কাহিনী, তাই না? কিন্তু গল্পটা যদি গল্প না হয়? যদি ওটা সত্যি হয়ে থাকে? এত বছর পর পাগলাটে কোন ভিলেন যদি সেই ক্ষমতার অধিকারী হতে চায়… খুঁজে পেতে চায় রাজা মাইডাসের সমাধি… এবং মাসুদ রানাকে ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধ্য করতে চায় সেই কাজ করে দিতে? কি ঘটবে তাহলে? না, পাঠক, কল্পনার সাগরে ভেসে যাবার কোনও দরকার নেই। এই বইয়ের ভিতরে রয়েছে সমস্ত প্রশ্নের জবাব। সেই সঙ্গে রয়েছে পাতায় পাতায় দমবন্ধ করা উত্তেজনা, রক্ত গরম করা অ্যাকশান আর বুদ্ধির মারপ্যাঁচ সহ অনেক কিছু। তাহলে আর দেরি কেন, চলুন রানার সঙ্গে যোগ দিই শ্বাসরুদ্ধকর আরেকটি অভিযানে। কথা দিচ্ছি, হতাশ হবেন না।
টেররিস্ট মানুষরূপী পিশাচ বলতে যা বোঝায়, ডেমিয়েন কেইন ঠিক তা-ই। পেশাদার টেররিস্ট সে, ইন্টারপোলের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি। ফ্লোরিডায় ধরা পরল সে। হাতকড়া পরিয়ে যাত্রীবাহী এক বিমানে করে বিচারের জন্য লস অ্যাঞ্জেলসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে। কিন্তু এত সহজে হার মানার পাত্র নয় কেইন। ছদ্ম পরিচয় ওর সঙ্গী-সাথীরা উঠেছে একই বিমানে। যথাসময় আত্মপ্রকাশ করল তারা, হাইজ্যাক করল বিমান। ওফ্ফো, পাঠক, আপনাকে বলতে ভুলে গেছি, উল্লেখযোগ্য আরেকজন যাত্রী আছে এ-বিমানে। দুর্ধর্ষ এক বাঙালি যুবক- তার নাম আপনি জানেন। আদিম আতঙ্ক বিখ্যাত প্য়ালিয়োনটলজিস্ট ডক্টর নাসিম আহমেদ এর লেকচার শুনতে গ্রেগ রনসন অডিটোরিয়ামে গেল মাসুদ রানা। ভদ্রলোক প্রিয় বন্ধু সোহেলের বড় ভাই। ওখানেই প্রথম দেখলো ও জাপানি ললনা রূপসী মানামি সিনোসুকাকে। জড়িয়ে গেল ওরা আষ্টেপৃষ্ঠে। নাসিমের অনুরোধে মস্ত ঝুঁকিয়ে নিল রানা। ডুব দিল প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতম অঞ্চলে, যেখানে মাউন্ট এভারেস্ট কে ছেড়ে দিলে টুপ করে তলিয়ে যাবে। সত্যি কি আছে সেখানে সেই প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী- বিশালাকায় হাঙ্গর কারকারোডেন মেগালোডন?
খুন হয়ে গেলেন জেনেটিক্স বিজ্ঞানী আহসান মোবারক। এবার খুন হবে তার মেয়ে মোনা? বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেল বিজ্ঞানীর বাড়ি। ইউএন অফিসে কে বা কারা দিল ভাইরাস মাখা চিঠি? এ কোন কাল্ট, লড়ছে ধর্মের বিরুদ্ধে? দুবাইয়ের বুর্জ আল আরব হোটেলের বলরুমে রানার সঙ্গে বেধে গেল মরণপণ লড়াই! সত্যিই কি অমৃত তৈরি করছিল বাপ-বেটিতে মিলে? মস্ত ঝুঁকি নিয়ে খুঁজতে গেল ও উত্তপ্ত মরুভূমিতে।…তারপর? মোনাকে উদ্ধার করতে গিয়ে ইরানের পরিত্যক্ত এক দ্বীপে রানা দেখা পেল ভয়ঙ্কর এক শত্রুর! কণ্ঠে অকৃত্রিম ঘৃণা নিয়ে সে বলল: এবার পারলে বাঁচতে চেষ্টা করো দেখি, বাঙালি গুপ্তচর! বুঝাল রানা, সত্যিই আজ বেজে গেছে ওর মৃত্যুঘণ্টা!
অসহায় প্রফেসরের স্ত্রীর নীরব কান্না বাধ্য করল রানাকে তাঁদের মেয়েকে খুঁজে দেয়ার দায়িত্ব নিতে। জানত না, জড়িয়ে যাচ্ছে কী গভীর ষড়যন্ত্রে। কোর্ফিউ দ্বীপে চোখের সামনে দেখল বোমা-বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মউরাস। শপথ নিল রানা, শেষ দেখে ছাড়বে। আমেরিকায় যেতেই পিছু নিল নৃশংস একদল আততায়ী। এল একের পর এক হামলা! নানান বিপদ উতরে খুঁজেও পেল ও মেয়েটিকে। কিন্তু কী আছে তার কাছে যে জন্যে এমন হন্যে হয়ে উঠেছে সিআইএ? শত্রুর জাল ছিড়ে রানা জানল, ইযরায়েল থেকে শুরু হচ্ছে মহাপ্রলয়! তৃতীয় মহাযুদ্ধে দুনিয়া হবে নরক! বিসিআই চিফের কথা শুনে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে আর একবার ঝাঁপ দিল মাসুদ রানা!
গুপ্তসংঘ এ-গল্প এতিম শিশু টম ও মিষ্টি মেয়ে জেনির। বা মাসুদ রানা ও রামিন রেযার। অথবা ইতালির কারাবিনিয়ারি, মাফিয়া এবং দ্য ডায়মণ্ড রিং-এর। সেই সঙ্গে বাংলাদেশেরও। ভয়ঙ্কর এক নরখাদক দানব মেরে ফেলেছে বলে রানার ওপর খেপে গেছে সিআইএ-র চিফ। এজেন্টদের ওপর নির্দেশ এল: নির্মূল করো বিসিআই-এর এম,আর,নাইনকে! রানা। জানত না, অনাথ টমের অনুরোধ আর লক্ষ্মী মেয়ে জেনির জন্যে নামতে হবে মাফিয়ার চেয়েও ক্ষমতাশালী, জটিল এক গুপ্তসংঘের বিরুদ্ধে। মাস্টারমাইণ্ড কিডন্যাপড বাঙালি প্রত্নতাত্ত্বিক ডক্টর লাবনী আলমকে ফেরত চাইলে অমূল্য স্টাডা কোডেক্স লুঠ করতে হবে ইউএন-এর দুর্গম ভল্ট থেকে! তাই করল রানা! লাবনী ভারতে বন্দি জেনে চলল ওখানেই। বহু কষ্টে মেয়েটিকে উদ্ধার করে পৌঁছুল রানা বরফ-ছাওয়া হিমালয়ে মহাদেবের প্রাচীন গুহায়! একদিকে শিবের বেদ রক্ষাকারী সশস্ত্র সাধু, অন্যদিকে মাস্টারমাইণ্ড অনুপম মঙ্গেলকার, তার পাষাণী স্ত্রী মাধুরী ও নিষ্ঠুর মার্সেনারিরা। বড় বিপদে আছে রানা বেচারা!
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট চলেছেন এয়ার বেস (রেসট্রিকটেড) যিরো নাইন পরিদর্শনে। কিন্তু মন বলছে ওখানে বিপদ হতে পারে। হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়ে গোপনে মাসুদ রানার সহায়তা চেয়ে বসলেন তিনি। ওদিকে রানাকে বললেন বিসিআই চিফ: ওই বেসে রয়েছে। দুনিয়ার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বায়োলজিকাল এজেন্ট মহাচিনের তৈরি ডুমস্ ডে ভাইরাস। ‘যাও, রানা… তবে মনে রেখো, কাজটা অত্যন্ত কঠিন। সম্ভব হলে, ওই ভাইরাসের নমুনা ও অ্যান্টিডোট নিয়ে এসো।‘ চিফের নির্দেশে ওখানে চলেছে দুঃসাহসী মাসুদ রানা, সঙ্গে কয়েকজন দুর্ধর্ষ অফিসার ও সৈনিক- কিন্তু ওই এয়ার বেসে ঢুকেই ওরা টের পেল, ওখানে চলছে মস্ত ভজকট। চারপাশে একের পর এক ষড়যন্ত্র, নানা বাধা। তারপর শুরু হলো হামলা! বাঁচতে চাইলে লড়তে হবে। কিন্তু কীভাবে নিজেদেরকে রক্ষা করবে ওরা? ওই বেসে দুনিয়াসেরা পঞ্চাশজন এয়ার ফোর্স কমান্ডো খুঁজছে ওদেরকে খুন করার জন্য!