বন্দিশিবির থেকে অসহায় একদল মানুষকে নিয়ে ফিরছে রানা। ওদেরকে ধাওয়া করছে জঙ্গিদের ট্রাক, হেলিকপ্টার। তেড়ে আসছে সশস্ত্র বাহিনী। একের পর এক বাধা ডিঙাতে গিয়ে হাঁপ ধরে গেল রানার। উদ্ধার করা তো দূরের কথা, এখনও জানে না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে কোথায় বন্দি করে রেখেছে ওরা। ওদিকে সোহেল খুঁজছে শুকিয়ে যাওয়া নদীতে প্রাচীন সেই কাঠের জাহাজ। খুঁজছে ইমাম ইউনুস আল-কবিরের সেই গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া যেটা পাঠ করে শোনানো হবে সম্মেলনে। বিপদের পর বিপদ। অথচ হাতে সময় নেই। রানার মনে হলো, আর বুঝি সম্ভব হলো না প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধার করা! প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি আজই ঘোষণা দেবেন শান্তি মহাসম্মেলনের! চারদিক থেকে জাল গুটিয়ে এনেছে জঙ্গিরা! টিভিতে এখুনি দেখানো হবে: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মাথা কাটা পড়ার দৃশ্য! তা হলে কি পারল না রানা, হেরে গেল জঙ্গিদের কাছে?
পালানোর উপায় কোথায় রানা-ববির? গোবি মরুভূমি। চারদিকে ধু-ধু প্রান্তর, পাহাড়-টিলা, গিরি-সংকট, বালির উঁচু স্তূপ বা গভীর খাদ। খেয়ালী প্রকৃতিকে নিয়ে খেলছে কেউ। বড় বাড় বেড়েছে ওই জালাইর তেমুজিন। আগুন নিয়ে খেলছে ও! স্তব্ধ হয়ে এল মধ্যপ্রাচ্যের ক্রুড অয়েল রপ্তানি! হোঁচট খেল গোটা বিশ্বের অর্থনীতি! পাগল হয়ে উঠলেন তাবৎ রাজনীতিবিদ! মহাচিনকে পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসাতে চায় তেমুজিন। তার সামনে কোন সাহসে মাথা সোজা রাখছে রানা? সোহেল ও ববিকে নিয়ে আবার ঢুকল ও চেঙ্গিস খানের কম্পাউন্ডে। এমনি সময়ে খেপে উঠল প্রকৃতি। পড়ছে একের পর এক লাশ! শেষে সমাধির ভিতর জালাইর তেমুজিন মুখোমুখি হলো রানা।
বৈকাল হ্রদের অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে গেছে মাসুদ রানা। তাই বলে পিস্তলটা রাখবে না সাথে? চিফের বারণ শুনে মস্ত ভুল করেছে ও। ওখানে জটিল এক ঝামেলায় জড়িয়ে গেল ওরা। কারা যেন ডুবিয়ে মারতে চায় রিসার্চ শিপের সবাইকে। প্রলয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশাল ঢেউ থেকে যাদেরক উদ্ধার করল ওরা, তাদেরই ভিতর রয়েছে কালনাগিনী! ঠিক সময়মত ফণা তুলল সে। কী করবে নিরস্ত্র রানা? চেষ্টা করেও তা বিজ্ঞানীদের কিডন্যাপ হওয়া ঠেকানো গেল না। এবার? বৈকাল হ্রদ ছেড়ে চলল ও মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোর। বন্ধু ববি মুরল্যাণ্ডকে নিয়ে ঢুকে পড়ল ভয়ঙ্কর এক উন্মাদের আস্তানায়। চেঙ্গিস খানের সমাধির ভিতর পরিচিত বিজ্ঞানীর লাশ নীরবে বলল, বাঁচতে চাইলে পালাও, রানা! এ বিরান মরুভূমিতে কোথায় পালাবে রানা-ববি? হিংস্র-বর্বর প্রহরীদের আদেশ দিয়েছে জালাইর তেমুজিন: লাশ চাই আমি ওই লোক দুটির!
সমস্যার যেন শেষ নেই, মস্ত বিপদের মোকাবিলা করছে রানা। …মরুভূমির ভিতর ডেভিলস্ ওয়েসিস কারাগার থেকে মুক্ত করতে 24. হবে প্রতিভাবান বাঙালি বিজ্ঞানী আসিফ হায়দার চৌধুরিকে। একের পর এক বাধার মুখে পড়ে রানার মনে হলো এবার হার মানতেই হবে বুঝি। কারাগারের ভিতর ঢোকা যত সোজা, তার চেয়ে এক শ’ গুণ কঠিন বেরিয়ে আসা। আসলে, বিজ্ঞানী আছেনই বা কারাগারের ঠিক কোন্ জায়গাটাতে? ওদিকে উন্মুক্ত হচ্ছে ভয়ঙ্কর এক খ্যাপা বিজ্ঞানীর নিষ্ঠুর পরিকল্পনা। অয়েল রিগ দখল করে লক্ষ লক্ষ টন ক্রুড অয়েল ফেলবে সে সাগরে… তৈরি করবে প্রচণ্ড শক্তিশালী এক ঝড়। ধ্বংস করে দেবে সে গোটা একটা শহর। প্রায় অসম্ভব তাকে রোখা। লাখ লাখ মানুষকে বাঁচাতে চাইলে থামাতে হবে ভয়ঙ্কর ওই ঝড়। কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব? এদিকে হাতে যে ফুরিয়ে আসছে সময়! সাগরের মাঝে পুরনো এক সুপারট্যাঙ্কারে কপ্টার থেকে নেমে পড়ল রানা, ঝড়ের ভিতর মুখোমুখি হলো সেই উন্মাদ বিজ্ঞানীর। কী হলো তারপর? …আর সোয়া শ’ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সেই হীরাগুলো?
ওই প্রবল ঝড় এসেছিল প্রায় সোয়া শ বছর আগে। এখন কোথায় সেই জাহাজ, সে-ঝড়ে যেটা হারিয়ে যায়? আর কোটি কোটি ডলারের হীরা? …আঁধার রাতে কঙ্গো নদীর এক পিয়ারে ভিড়ল পুরনো এক ধচাপচা জাহাজ। অস্ত্র পেয়ে খুশি হয়ে উঠল বিদ্রোহী-নেতা, ঠাণ্ডা মাথার জাত খুনি টমাস গাধাধারের দলের লোক গুলো। এখন হীরাগুলোও তাদের চাই। কিন্তু হাতে অস্ত্র পেলেই কি খুন করতে পারবে ওরা রানাকে? একটা কাজ শেষ হতে না হতেই রানার কাধে চাপল আরেক দায়িত্ব। কোথায় গেলেন বিজ্ঞানী আসিফ হায়দার চৌধুরি? কারা কিডন্যাপ করল তাঁকে? …ওই দ্রুতগামী ইয়টের ওরা কারা? খুন করতে চাইছে কাদেরকে? সাগরে দানবীয় সাপ খুঁজতে যাওয়ার আগেই একের পর এক বিপদ এসে জুটল। রানা পণ করল, এসব রহস্য ভেদ না করে ছাড়বে না। কিন্তু উপকূল থেকে দেড় শ’ মাইল দূর-সাগরে বিধ্বস্ত হলো লাইফবোট, হাড়ে হাড়ে টের পেল ও, এবার বাঁচার সম্ভাবনা নেই! অপরূপা কার্টা অস্টিনকে নিয়ে ডুবে মরতে হবে নির্ঘাত। এর পরেও কি রানার সঙ্গে যাওয়ার সাহস আছে, পাঠক?
ডুবসাঁতার দিয়ে সারফেসের কাছাকাছি পৌছুতেই বরফে ঠুকে গেল রানার মাথা। বিস্মিত হয়ে উপরে তাকাল ও, পরক্ষণে আঁতকে উঠল আতঙ্কে ভয়াবহ তুষার ঝড় জমিয়ে দিয়েছে জলাশয়ের উপরিভাগ— অন্তত চার ইঞ্চি পুরু হয়ে জমেছে বরফের আস্তর! ভেসে ওঠার কোনও উপায় নেই। আর্কটিকের পানিতে ডুবে মরতে চলেছে ও। আর তখুনি অনেক নীচে কী যেন একটা নড়ে উঠল ভুরু কুঁচকে সেদিকে তাকাল রানা। সাদাটে তিনটে আকৃতি… একটা ডুবোগুহা থেকে তীরবেগে বেরিয়ে এসেছে। পানির মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে ধীরে ধীরে উঠে আসছে অপরদিকে কে লক্ষ্য করে। রাক্ষুসে তিন গ্রেন্ডেল! হাঁ করা মুখের ভিতর চকচক করছে ধারালো দাঁতের সারি! ভয় পেল না রানা, চমকেও উঠল না, অদ্ভুত এক নির্বিকার ভাব ভর করেছে ওর মধ্যে। শান্ত ভঙ্গিতে মেনে নিল ভাগ্যকে। তাহলে ডুবে মরা কপালে নেই আর!